আমস্টারডাম ও কোপেনহেগেন বহু বছর ধরেই সাইক্লিং-স্বর্গ বলে পরিচিত। কিন্তু প্যারিসের সাম্প্রতিক অগ্রগতি সবাইকে চমকে দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, শহরের কেন্দ্রস্থলে সাইকেলের ব্যবহার এখন গাড়ির চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।
একসময় যানজট, ধোঁয়া আর ব্যস্ত রাস্তার জন্য সমালোচিত ছিল প্যারিসের পথ। সেই প্যারিসই এখন শিশুদের জন্য ইউরোপের সেরা সাইক্লিংবান্ধব শহর হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি ক্লিন সিটিজ ক্যাম্পেইনের এক গবেষণায় ৩৬টি ইউরোপীয় শহরের মধ্যে প্যারিস পেয়েছে শীর্ষ স্থান। আর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ব্যাপক অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এবং নগরবাসীর সচেতন অংশগ্রহণ।
২০২৪ সালের অলিম্পিক আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্যারিস শহরে নেয়া ‘বাইক-প্ল্যান’। এর আওতায় শহরজুড়ে তৈরি হয়েছে ১৮০ কিলোমিটার নতুন সাইকেল লেন। যেখানে গাড়ির হর্ণ নেই, গতি নেই, কেবল ছুটে চলা চাকার গান, আর মুক্ত বাতাস। অলিম্পিককে ঘিরে শুরু হওয়া সেই পরিবর্তন ছুঁয়েছে প্রতিটি রাস্তা। শুধু তাই নয়, শহরের ৬০ শতাংশ রাস্তার গতিসীমা নামিয়ে আনা হয়েছে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারে। আর “স্কুল স্ট্রিটস” নামে উদ্যোগে স্কুলের আশেপাশের রাস্তা নির্দিষ্ট সময়ে গাড়িমুক্ত রাখা হয়।
প্যারিসের পরের অবস্থানে রয়েছে আমস্টারডাম, অ্যান্টওয়ার্প, ব্রাসেলস ও হেলসিঙ্কি। অন্যদিকে, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের শহরগুলো—মার্সেই, রোম, সোফিয়া—এই তালিকায় অনেক পিছিয়ে।
২০২৫ সালে প্যারিসবাসীরা এক গণভোটে ৫০০টি রাস্তা সম্পূর্ণ গাড়িমুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এসব রাস্তায় এখন সাইকেল চলে, শিশুরা খেলাধুলা করে। এক সময় গাড়িময় শহরকে শিশুদের সাইক্লিং-স্বর্গে রূপান্তর করার পেছনে আছে একটি গভীর রাজনৈতিক বার্তা— শহরটি কেবল গাড়ির জন্য নয়, বরং মানুষের জন্য। আর মানুষ মানে শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, পথচারী—সবাই।”
জলবায়ু সংকট, বায়ুদূষণ এবং যানজটে বিপর্যস্ত নগরজীবনে যখন প্রতিটি নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, তখন একটি শিশুর জন্য রাস্তা ধরে নিরাপদে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠে এক বিপ্লব।