শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

শিল্প বিপ্লব || স্মার্ট বাংলাদেশ || স্মার্ট এভিয়েশন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিপ্লব, বিপ্লব শব্দগুলো শুনলেই কেমন জানি আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধ, বিগ্রহের কথা মনে পড়ে যায়। আর শিল্প বিপ্লব, সে তো এক মহাযজ্ঞ। বর্তমান বিশ্ব আধুনিকতায় ভরপুর। পুরো বিশ্ব যেন হাতের মুঠোয়। অন্ধকার যুগ কাটিয়ে আলোতে আলোকোজ্জ্বল হয়েছে আধুনিক বিশ্ব।

ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা বিশ্ব আজ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সময়কাল অতিক্রম করছে। সেই ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের উন্মেষ ঘটেছিল, যা প্রথম শিল্প বিপ্লব নামে পরিচিত। প্রায় শত বছর পর ১৮৭০ সালে বিদ্যুতের আবিষ্কারে বিশ্ব যেন নতুন বিশ্বকে খুঁজে পেয়েছে। রাতের অন্ধকারকে নিমিষেই দূরে ঠেলে এগিয়ে চলেছে। সব আবিষ্কারের সূতিকাগারই যেন বিদ্যুতের আবিষ্কার। বিদ্যুৎ বিনে কোনো কিছু কল্পনাই করা যায় না। বিদ্যুৎ আবিষ্কার ছিল শিল্পের ২য় বিপ্লব।

বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে ১৯৬৯ সালে আবিষ্কার হয় ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক সূতায় গেঁথে উঠে সারাবিশ্ব। তাতেও যেন তৃপ্তি মিটছিল না। শিল্প বিপ্লবের তৃতীয় ধাপ শুরু হয় ইন্টারনেটের আবিষ্কারের কারণে। ২০১১ সালে অপার সম্ভাবনা নিয়ে যে বিপ্লব সাধিত হয়, তার নাম ডিজিটাল বিপ্লব। ডিজিটাল বিপ্লবই হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে নিমিষেই সব খবরাখবর বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। ২০২০ সালে মহামারি করোনার ছোবলে সারাবিশ্ব যখন থমকে যাওয়ার উপক্রম, তখন এই ডিজিটাল বিপ্লবের কল্যাণে বিশ্ব যেন দেখতে পায় অন্য এক বিশ্বকে।

ফেসবুক, হোয়াটসআপ, জুম, ইন্টারনেট কিংবা নানাবিধ সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে বিশ্ব যেন চলার গতি পায়। কোভিডে থমকে যাওয়া পৃথিবী গতির সঞ্চার পেয়েছিল ডিজিটাল বিপ্লবের কারণে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের চলমান প্রক্রিয়া।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি করতে পারে। বাস্তবিক চিত্র ‘কম দক্ষতা স্বল্প আয় বনাম বেশী দক্ষতা উন্নত আয়’ কাঠামো অর্থনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করবে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ৩টি শিল্প বিপ্লবের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেছে। এক একটি শিল্প বিপ্লব পরিবর্তন করেছে সারাবিশ্বের শিল্পের উৎপাদন, বাজার ও ব্যবসার গতিপথ, পরিবর্তন করেছে মানব সভ্যতার ইতিহাস ও সমাজের জীবনাচরণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ছাড়িয়ে যাবে আগের তিনটি শিল্প বিপ্লবকে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বিক সূচক নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যাবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করতে হলে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট-এর ওপর জোর দিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সিটিজেন ও স্মার্ট সোসাইটি তৈরির কথা বিবেচনা করতে হবে।

ডিজিটালাইজেশন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় একটি প্রচলিত শব্দ। বর্ডার, ইমিগ্রেশন, এভিয়েশন, সাইবার সিকিউরিটি সব জায়গায় ডিজিটাল হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা বিশেষ করে- বিমান শিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করা যেতে পারে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো কিভাবে বাংলাদেশের কর্মীবাহিনী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের এই নতুন যুগে নেভিগেট করার জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে পারে, সেই বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশের এভিয়েশনকে এগিয়ে যেতে হবে। স্মার্ট এভিয়েশন গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর সঙ্গে বন্ধ বিমানবন্দর সমূহ চালু করতে হবে।

বাংলাদেশের ৮টি চালু বিমানবন্দরের মধ্যে বর্তমানে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। খুব সহসাই আরও দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেখার সুযোগ আছে। ৫টি বিমানবন্দর আছে যেগুলো পূর্বে চালু ছিল, এখন বন্ধ। সেইগুলো পুনরায় চালু করলে দেশের বৃহদাংশ জনগোষ্ঠী আকাশ পরিবহনের সুবিধা পাবে। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন বাড়বে। সার্বিক অর্থনৈতিক সূচকের প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

বাংলাদেশে প্রায় ৩১টি অব্যবহৃত এয়ারফিল্ড বা এয়ার স্ট্রিপ আছে, সেগুলোকে ন্যূনতম স্টল এয়ারপোর্ট হিসেবে যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা যায়, তাহলে দেশের সব অঞ্চলের জনগণ আকাশপথের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক হেলিপোর্ট ও ওয়াটারপোর্ট নির্মাণ করলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণও আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে। সাথে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী পথের সাথে আকাশ পথের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রগতি সুস্পষ্ট দৃশ্যমান। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অন্য রাষ্ট্রের কাছে ঈর্ষনীয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রগতির সকল সূচক উর্ধ্বমূখী। আর এই অগ্রগতির মাইলফলককে আরও বেশী সুসংহত করছে দেশের এভিয়েশন শিল্পের অগ্রসরমান অবস্থান।

মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com