ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ ৮১ শতাংশের বেশি। দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর টার্মিনাল ভবন। এখন অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী অক্টোবরে টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করা হবে। টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে বছরে সেবা পাবেন এক কোটির বেশি যাত্রী।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ টার্মিনাল চালু হলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এখানে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি।
এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে স্থাপন করা হবে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট। এক হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরির কাজ চলমান।
এখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব প্লেনের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছি। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরের সেবার মান আরও উন্নত করতে পারবো। এখন এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের পর্যায়ে। আগামী অক্টোবরে এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হবে। পুরোপুরি চালু হবে আগামী বছর। এটি চালু হলে যাত্রীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে। উড়োজাহাজ চলাচল ও যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে।
২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শন করে। এসময় তারা এলিভেটেড ড্রাইভওয়ে, বোর্ডিং ব্রিজ, ডিপার্চার লাউঞ্জের ফ্যাসিলিটি, চেক ইন কাউন্টার ও সেন্ট্রাল সিকিউরিটি সিস্টেমসহ নির্মাণাধীন টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। তৃতীয় টার্মিনালের ৮১ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় মুখ্য সচিব সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নান্দনিক নকশায় সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে মূল টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখন সেখানে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ চলতে দেখা যায়।
তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করবে জাপান
বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের একটি অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর পথ দেখিয়ে পার্কিং বে-তে নেওয়া, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানো, উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
এখন দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তাই শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বেশি দূর এগোয়নি। তবে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের বিষয়টি সামনে আসে। এর মধ্যে বছরখানেক আগে এ দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু তাদের সেবার মান খারাপ হওয়ায় সরকার তাতে সম্মতি দেয়নি।
পরবর্তীসময়ে তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে জাপান। তাদের আবেদনটি বিবেচনায় নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা। যেহেতু তারাই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে মূল অংশীদার। এর মধ্যে গত ১৫ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘এটিজেএফবি ডায়ালগে’ জাপানকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। তিনি বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ জাপানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) টার্মিনালটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালিত হবে।