শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

শরতের কাশবনে মেঘ ও রোদের কানামাছি

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১

উত্তাল বর্ষার পর আগমন ঘটে শুভ্র ঋতু শরতের। এ সময় আকাশের মেঘ যেন পেঁজা তুলোর মতো নেমে আসে ধরণীতে, কাশফুল হয়ে! আর শরৎ মানেই আকাশে নরম তুলোর মতো ভেসে বেড়ায় মেঘ। এদিকে দিগন্তজোড়া কাশফুলের মনোরম দৃশ্য মানব মনকে করে তোলে আন্দোলিত।

সাধারণত নদীর তীরেই বেশি দেখা যায় কাশফুল। এর কারণ হল নদীর তীরে পলিমাটির আস্তর থাকে এবং এই মাটিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই পালকের মতো নরম সাদা কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়।

আলো ছড়াতে শুরু করেছে শরতের দৃষ্টিনন্দন ধবধবে সাদা কাশফুল। এ ফুলের ছোঁয়ায় সবার শরীর-মন জুড়িয়ে যায়। প্রতিদিনের অফিস আর যানবাহনের শব্দদূষণ থেকে রেহাই পেতে রাজধানীর আশেপাশেই দেখা যায় এমন কাশবন।

সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ দূর করতে শরতের বিকেলে মনকে প্রফুল্ল করতে ঘুরে আসা যায় কাশবন থেকে। কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় এক স্নিগ্ধ বিকেল কাটাতে এবং নগরজীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে একটু শান্তির খোঁজে যাওয়া যেতে পারে রাশি রাশি কাশফুলের মেঘের ভেলায়। শুক্রবার ছুটির দিনে তাই বেরিয়ে পড়লাম সকাল সকাল। উদ্দেশ্য কাশবনে গিয়ে সাদা মেঘের ভেলায় ভাসা। রাজধানীর রামপুরায় জহুরুল ইসলাম সিটি দিয়ে চলে গেলাম আফতাবনগর। এখান থেকে লোহার সেতু পেরুলেই চোখে পড়ে শুধু কাশবন আর কাশবন। সাদা কাশবনের বাসস্থান হিসেবে লোকচেনা হয়ে গেল। ঢাকার কাছাকাছি থাকায় সহজে মানুষ সেখানে ভীড় জমায়। কাশফুলের মাঝে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায় তরুণ-তরুণীদের। এলোমেলো বাতাসের সাথে খোলা রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো, দু’ধারে সাদা মেঘের মতন ফুলের মেলা, মনের আনন্দে নিজের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো, একটা দিন ভালো কাটলে আর কী লাগে?

আমিও যেনো আত্নহারা হয়ে পড়লাম এমন মনোরম পরিবেশে। মেঘ আর রোদের কানামাছি খেলার মাঝে বৃষ্টিও যেন অংশ নিচ্ছে। এমন দিনে আমার মনে হচ্ছিলো আমাকে স্বাগত জানাতে কাশফুল ‘সাদা ডালি’ সাজিয়ে বসে রয়েছে। দখিণা বাতাসে কাশফুলগুলো ঢলে ঢলে আমার সঙ্গে কথা বলছে। আমাকে আহ্বান জানাচ্ছে তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলের গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো ফুলগুলো সেজে আছে শুধু আমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই। শেষ প্রান্তের দুই দিকে থরে থরে সাজানো কাশফুল দেখে আমার মনে হয়েছে, আমি দাঁড়িয়ে আছি কাশফুলের রাজ্যে। যত দূর চোখ যায় ততটাই সাদার রাজ্য। কাশবনে সূর্য ডোবার ঠিক আগ মুহূর্তে পশ্চিম আকাশে লালচে আভায় সাদা কাশফুলের সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে গেলো। আমি মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম।

ঠিক এ সময় আমার যতটুকু মনে পড়ছিলো মহাকবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় বলেছিলেন ‘প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’

তিনি ‘ঋতুসংহার’ কাব্যে আরও লিখেছেন ‘কাশ ফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূর মতো শরৎকাল আসে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com