সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ অপরাহ্ন

শরণার্থীরা কি ইইউ দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণের অনুমতি পান

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজস্ব অঞ্চলের মধ্যে মানুষের অবাধ চলাচলের অনুমতি দেয়। যখন একজন আশ্রয়প্রার্থী তার আবাসনের অনুমতি বা শরণার্থী মর্যাদা পান, তিনি ইউরোপীয় অঞ্চলে ভ্রমণের অধিকার পান। এমনকি শর্ত সাপেক্ষে ইউরোপের বাইরেও যেতে পারেন।

একবার বসবাসের অনুমতির পর অভিবাসীরা যেদেশে থাকেন তার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে অনেকেই উদ্বিগ্ন থাকেন। চলাচল ও ভ্রমণের অধিকার সম্পর্কে জানতে আগ্রহীরা প্রায়ই ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। যেমন, “আমি যে দেশে থাকি সেদেশের বাইরে ঘুরতে যেতে পারব কিনা?” “ইউরোপের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে কিনা?”

আশ্রয় আবেদনের অনুমতি প্রাপ্তদের ভ্রমণ এবং চলাচলের অধিকার সম্পর্কিত এমন সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসের এই আয়োজন।

১) বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ভ্রমণের নিয়ম

আশ্রয় আবেদন গ্রহণ বা শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার পর ফ্রান্সে বসবাসররত কোন ব্যক্তি ফরাসী ভূখণ্ডের যেকোন জায়গায় ভ্রমণ করতে পারেন। এজন্য তার আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই।

উদাহরণ: শরণার্থী বিষয়ক ফরাসি প্রতিষ্ঠান অফপ্রা থেকে আপনি শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন। অতএব, আপনার ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি বা রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই কার্ড পেলে আপনি ফরাসি ভূখণ্ডে অবাধ চলাচল করতে পারবেন।

মূল ভূখণ্ডের বাইরে অবস্থিত অঞ্চলগুলো (মার্টিনিক, গুয়ার্দোলোপ, ফ্রেঞ্চ গায়ানা, রিউনিয়ন ও মায়োট) পরিচালিত হয় স্থানীয় প্রশাসন বা ডোম এর মাধ্যমে। ফরাসি মূল ভুখণ্ড থেকে ইস্যু করা যেকোন রেসিডেন্স কার্ডধারী ব্যক্তি মূল ভুখণ্ডের বাইরের অঞ্চলগুলোতেও অবাধে ভ্রমণ করতে পারবেন। কিন্তু এজন্য তাদের কাছে অবশ্যই ভ্রমণ ডকুমেন্ট বা তিথ দ্যো ভয়াজ থাকতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

শেঙ্গেন অঞ্চলে (ইইউ+ আইসল্যান্ড, লিশ্টেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড) তিন মাসের কম সময় থাকার জন্য শরণার্থীদের কোন ভিসার প্রয়োজন নেই। আপনাকে অবশ্যই একটি রেসিডেন্স কার্ড এবং ভ্রমণ ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে হবে। টিভিআর বা ট্রাভেল ডকুমেন্টের জন্য সাধারণত প্রেফেকচুরে (আঞ্চলিক প্রশাসনিক দপ্তর) আবেদন করতে হয়। পাঁচ বছর পরপর এটি নবায়ন করতে হয়।

অন্যদিকে, শেঙ্গেন অঞ্চলে তিন মাসের বেশি সময় থাকার জন্য শরণার্থীদেরকে (১০ বছর মেয়াদী রেসিডেন্স কার্ড) এবং সহায়তা সুরক্ষা প্রাপ্তদের (এক বছরের রেসিডেন্স কার্ড) অবশ্যই যে দেশে যেতে ইচ্ছুক সেখানকার দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে ।

 ২) ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ভ্রমণ

শরণার্থীরা বিদেশ ভ্রমণে তাদের নিজ দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন না। যেমন, ফ্রান্সে বসবাসরত একজন সিরিয়ান শরণার্থী তার সিরিয়ার পাসপোর্টটি আর্জেন্টিনায় ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন না।

তবে একজন শরণার্থী চাইলে অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যেতে পারবেন। ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, “চুক্তিতে স্বাক্ষর করা রাষ্ট্রগুলো তাদের ভূখণ্ডে বৈধভাবে বসবাসরত শরণার্থীদেরকে অবশ্যই নিজ অঞ্চলের বাইরে ভ্রমণ করতে সক্ষম ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদান করবে।”

– বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ ডকুমেন্ট বা টিভিআর

শরণার্থীদেরকে (১০ বছরের রেসিডেন্স কার্ডধারী) প্রেফেকচুর থেকে অবশ্যই টিভিআর (উপরে দেখুন) এর জন্য আবেদন করতে হবে।

এটি ভ্রমণের জন্য একটি আইনানুগ অনুমতিপত্র (যেটি দেখতে পাসপোর্টের মতো)। শরণার্থীর কোন কোন দেশে যাওয়ার অনুমতি নেই (সাধারণত নিজ দেশ) সেটিও এতে উল্লেখ থাকে। কেউ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করলে তার শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহার করা হতে পারে।

– সহায়ক সুরক্ষা মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য ভ্রমণ ডকুমেন্ট বা (টিআইভি)

এক বছরের সহায়তা সুরক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ভ্রমণের জন্য এই অনুমতিপত্র নিতে পারবেন। এর মেয়াদ সাধারণত এক বছর।

টিভিআর বা টিআইভি পেতে, আপনাকে প্রেফেকচুরে যেতে হবে। যেসব কাগজপত্র সাথে নিতে হবে: বৈধ রেসিডেন্স কার্ড (মূল ও ফটোকপি), তিন কপি ছবি, আবাসনের প্রমাণপত্র, নির্দিষ্ট মূল্যের রাজস্ব স্ট্যাম্প (টিভিআর এর জন্য ৪৫ ইউরো, টিআইভির জন্য ১৫ ইউরো) এবং নবায়ন করার ক্ষেত্রে পুরনো টিভিআর/ টিআইভির মূল কপি।

উল্লেখ্য, এই টিভিআর ও টিআইভি ভ্রমণ ডকুমেন্ট আপনাকে ভ্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে কাজের অনুমতি দেয় না।

৩) অন্য ইইউ দেশে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ম

চাকরী সুবাদে বা পরিবারের সদস্যের সাথে বসবাসের জন্য- যেকোন শরণার্থীর ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেকোন দেশে স্থায়ী হওয়ার অধিকার রয়েছে।

সেক্ষেত্রে অবশ্যই শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সরকারি দপ্তরে (অফপ্রা) অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরে সাধারণত অফপ্রা শরণার্থীদের ফাইল সংশ্লিষ্ট দেশে স্থানান্তর করবে। তবে, স্থানান্তরের বিপরীতে অবশ্যই একজন শরণার্থীকে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। কোনও শরণার্থী বিনা কারণে অন্য দেশে চলে যেতে পারবেন না।

যে দেশে যেতে ইচ্ছুক সেই দেশের কর্তৃপক্ষ আবেদনটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের অধিকার রাখে। যদি আবেদন গৃহীত হয় তবে আপনার সুরক্ষার যাবতীয় বিষয় বসবাস করতে যাওয়া নতুন রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com