বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন
Uncategorized

লালমোহনের গজারিয়া বাজারের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২

ভোলার লালমোহন উপজেলার গজারিয়া বাজারের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে ব্যতিক্রমী এই হাট। এ হাটে সারা বছর নৌকা তৈরী হলেও শুস্ক মৌসুমে জমে ওঠে কেনাবেচা। ঐতিহ্যবাহী এই হাটে নৌকা তৈরী এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক-কারিগর।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হাটের কারিগরদের তৈরি নৌকা লক্ষীপুর, নোয়াখালী, হাতিয়ার মনপুরা, চর কুকরী- মুকরী, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, খুলনা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বিশেষ করে নদীতে মাছ বেশি ধরা পড়লে নৌকা বিক্রির সংখ্যাও বেড়ে যায়।

এদিকে, সম্ভাবনাময় এ খাতটি ভোলা জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও সরকারি বেসরকারি দপ্তরের তাতে কোনো নজরদারি নেই। যার কারণে নৌকা শিল্পের তেমন প্রসার ঘটেনি।

গজারিয়া বাজারে নৌকার কারিগর ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বীপজেলা ভোলার নদ-নদীতে মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করেন ২ লাখের বেশি জেলে। আর মাছ ধরতে যাওয়ার প্রধান বাহনই হচ্ছে নৌকা বা ট্রলার। এছাড়াও উপকূলের বিছিন্ন চরগুলোতে খেয়া পারাপার একমাত্র যোগাযোগের ভরসা। তাই ওইসমস্ত চর এলাকাতেও নৌকার কদর বেশি। কিন্তু সেই নৌকা-ট্রলার নির্মাণে বড় কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলেও ভোলার লালমোহন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গজারিয়া বাজারে তৈরি হচ্ছে নৌকা-ট্রলার।

প্রতিদিন শতাধিক কারিগর বা মিস্ত্রী নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন এই হাটে।

নৌকা তৈরীর কারিগর পরেশ মিস্ত্রি, গনেশ মিস্ত্রি, মনির ও নাগর জানান, আমরা অনেক বছর ধরে নৌকা তৈরীর কাজ করছি। আগে দৈনিক মজুরি কম ছিলো, এখন সবকিছু দাম বাড়ছে। তাই এখন দৈনিক জন প্রতি ৯০০ টাকা করে দেওয়া হয়।বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এই হাটে অনেকেই নৌকা কিনতে আসেন। এখানে তৈরি প্রতিটি নৌকা আকার ও প্রকারভেদে গড়ে ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

নৌকা তৈরীর শ্রমিক মিলন, সুমন, কান্ত চন্দ্র মিস্ত্রি জানান, আকার ভেদে নির্ভর করে কোন নৌকা তৈরীতে কত সময় এবং কি কি উপকরণ লাগবে সে বিষয়টি। একেকটি নৌকা তৈরীতে কখনও এক সপ্তাহ আবার ১৫ থেকে ২০ দিন সময়ও লাগে। ভালোমানের কাঠের তৈরীকৃত নৌকা ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।

পাইকার (নৌকা বিক্রি) নুরু ব্যাপারী বলেন, ‘প্রায় ২০০ শ্রমিক নৌকা তৈরীর সঙ্গে যুক্ত। তাদের জীবিকা চলে নৌকা তৈরী করে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখানকার নৌকার হাট। প্রতিদিন অর্ডার পাচ্ছি। একেকটি নৌকা বিক্রি করে ১০-২০ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে শ্রমিক-কারিগর ও আমাদেরকে যদি সরকারি বা বেসরকারিভাবে অল্প সুদে ঋন বা অন্যান্য সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা এ শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারবো।’

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে গজারিয়া হাটে নৌকা কিনতে আসা ভাস্কর পোদ্দার বলেন, ‘এ বাজারের নৌকার অনেক সুনাম রয়েছে। আগেও একবার এ হাট থেকে নৌকা কিনে নিয়েছি। এবারো নৌকা কিনতে এসেছি। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা নৌকা কিনেছি। এখান থেকে আমাদের অঞ্চলের অনেকেই নৌকা কিনে নিয়ে গেছেন।’

লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রুহুল কুদ্দুছ বলেন, ‘নৌকা তৈরি শিল্পের আরও প্রসার ঘটাতে যা যা করণীয় সেটি আমরা অবশ্যই করবো।’

লালমোহন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গজারিয়া বাজারে নৌকা তৈরীর যে সব কারিগর ও শ্রমিকরা আছেন তারা একত্রিত হয়ে সমিতির মাধ্যমে আসলে তাদেরকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ শিল্পকে প্রসার করতে তাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা তৈরীর ব্যবস্থা করা হবে।’

জুম বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com