ফকির লালন শাহের মাজার কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় অবস্থিত। লালন শাহ এই কুমারখালি উপজেলার ছেউড়িয়াতে তাঁর শিষ্যদের নীতি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন। তিনি প্রতি শীতকালে আখড়ায় একটি মহোৎসব আয়োজন করতেন। যেখানে সহস্রাধিক শিষ্য একত্রিত হতেন এবং সেখানে সংগীত ও আলোচনা হত।
লালন শাহের মৃত্যুর পর এই স্থানটিতেই সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সমাধি স্থলেই এক মিলন ক্ষেত্র বা আখড়া গড়ে ওঠে। এই সমাধি ঘিরে রয়েছে তাঁর শিষ্যদের সারি সারি কবর। ফকির লালন শাহের শিষ্য এবং দেশ বিদেশের অগনিত বাউলকুল এই আখড়াতেই বিশেষ তিথিতে সমবেত হয়ে উৎসবে মেতে উঠে। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন সাইজির মাজার থেকে। এ ভ্রমণ থেকে আপনি যেমনি পেতে পারেন চিত্রবিনোদন তেমনি পেতে পারেন সংস্কৃতির সান্নিধ্য।
প্রতিবছর দুইবার লালন মেলা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। মার্চ মাসের ১-৩ তারিখ ও অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ (বাংলা ১লা কার্তিক) লালন আখড়ায় বিশাল লালন মেলা হয়। লালন মেলায় সারা দেশ থেকে তাঁর শিষ্যদের আগমন ঘটে। রাতভর চলে বাউল গানের উৎসব। এই উপলক্ষে মাজারকে সাজানো হয় রঙ্গিন করে। আলোকসজ্জা, তোরণ নির্মান ও বিশাল ছামিয়ানা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সেই সাথে থাকে গ্রামীন মেলার আয়োজন। লালন মেলা উপলক্ষে দেশ বিদেশের অনেক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে যেতে চাইলে বাস বা ট্রেনে দুইভাবেই যেতে পারবেন। বাস এ গেলে কল্যানপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে কুষ্টিয়ার মজমপুর গেট এ নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে যে কোন রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে লালন মাজারে যেতে পারবেন।
ট্রেন এ যেতে চাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস অথবা চিত্রা এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকালে ছেড়ে যায় অ্যান্ড চিত্রা এক্সপ্রেস সন্ধ্যায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। ট্রেনে গেলে আপনাকে পোড়াদহ বা ভেড়ামারা স্টেশনে নামতে হবে। ভেড়ামারা বা পোড়াদহ থেকে বাস বা সিএনজি তে করে কুষ্টিয়া শহরে এসে যে কোন রিক্সা অথবা অটো কে বললেই লালন মাজারে নিয়ে যাবে।
এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের যে কোন জায়গা থেকে সহজেই যেতে পারবেন লালন শাহের মাজারে। রিক্সা বা ইজি বাইকে শহরের যে কোন জায়গা থেকে ভাড়া নিবে ২০-৩৫ টাকা।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
লালনের আখড়া দেখা ছাড়াও আশেপাশের বেশকিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; রবীন্দ্রনাথ এর কুঠি বাড়ি, মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তু ভিটা, গড়াই নদীর তীরে রেনউইক এর বাধ, টেগর লজ। ঘুরে দেখার জন্যে রিক্সা বা ইজিবাইক ভাড়া নিতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। আপনার পছন্দমত যে কোন হোটেল ঠিক করে নিতে পারবেন। একটু ভাল মানের মধ্যে রয়েছে হোটেল রিভার ভিউ, হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া মজমপুর ও এন এস রোডে বেশ কিছু মধ্যম মানের হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন
খাওয়া দাওয়ার জন্যে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রেস্টুরেন্ট আছে। কোর্ট স্টেশন এলাকার হোটেল শফি তে খেয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর হোটেল, শিল্পী হোটেল, খাওয়া-দাওয়া হোটেল গুলোতে খেতে পারেন। আর কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা ও কুলফি মালাই অবশ্যই খাবেন।