ভ্রমণপিপাসুদের লাদাখ বেশ পরিচিত না। হবে নাই বা কেন? রুক্ষ পাথর এবং শ্বেতশুভ্র বরফে ঢাকা এই এলাকা যে বহু মানুষেরই ভারত ভ্রমণের ‘ড্রিম ডেস্টিনেশন!’ তবে হলে কী হবে, লাদাখ ভ্রমণের খরচের কথা ভেবেই পিছিয়ে যান অনেকে।
বলিউড অভিনেতা আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ র্যাঞ্চোর স্বপ্নের স্কুলবাড়ির পাশেই সেই বিখ্যাত প্যাংগং লেক, তার ধারেই দাঁড় করানো প্রিয়া ওরফে করিনা কাপুরের ততোধিক বিখ্যাত স্কুটার। প্রিয় সিনেমার স্মৃতিবিজড়িত জায়গায় যাওয়ার জন্য কেউ কেউ তো দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে টাকা জমাতে থাকেন। ইচ্ছেটা এই, একদিন না একদিন এই স্বপ্ন-সফরের খরচ ঠিকই জমে যাবে।
কিন্তু সত্যিই কি লাদাখ ভ্রমণ এতটাই ব্যয়বহুল? খরচের কথা চিন্তা করে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা কতটা যুক্তিযুক্ত? নাকি এমন কোনও বিকল্প উপায় রয়েছে, যার সাহায্যে অল্প বাজেটেই ঘুরে আসা যাবে লে-নুবরা ভ্যালি, খরদুং লা পাস। আছে তো বটেই। আজ আপনাদের সেই সন্ধানই দেব।
যে কোনো ট্রিপেরই খরচ কমানোর মূলমন্ত্র হল দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া। তাই কম খরচে লাদাখ ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে সলো ট্রিপের বদলে পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে যাওয়া ভালো। এতে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত সমস্ত খরচে অনেকটাই কমে যাবে। ঠিক করে লাদাখের পুরো এলাকা ভালোভাবে ঘুরতে চাইলে অন্তত ২ সপ্তাহ সময় রাখতেই হবে হাতে। এই পুরো সময়ে খরচ হবে মূলত থাকা, খাওয়া, সাইট সিইং এবং সেই কারণে গাড়ি ভাড়া, বিশেষ জায়গায় যাওয়ার জন্য পারমিটের খরচ এবং কিছু জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের খরচ। তবে কিছু টিপস মেনে চললে এই প্রত্যেকটি খরচে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব।
লাদাখে থাকার জায়গা হিসেবে বেশ কিছু হোটেল এবং হোমস্টে রয়েছে। হোটেল ভাড়া প্রতি রাতে গড়ে ৫০০-৮০০ টাকা মতো। তবে হোমস্টেতে থাকলে খরচ বাড়বে অনেকটাই। সেখানে দিন প্রতি খরচ ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তবে থাকার খরচ একেবারে কম করতে চাইলে সবচেয়ে ভালো উপায় হল কোনো ধাবা কিংবা তাঁবুতে থাকা। সেক্ষেত্রে খরচ দাঁড়াবে দিন প্রতি ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা মাত্র।
লাদাখে নিরামিষ এবং আমিষ দুরকমই খাবার পাওয়া যায়। খাওয়ার জন্য অজস্র হোটেল-রেস্তোরাঁ-ধাবা রয়েছে। দামি রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রয়েছে ছোটখাটো খাবার জায়গাও। খাওয়ার খরচ কমাতে চাইলে এই ধরনের রেস্তোরাঁ কিংবা ধাবায় খাওয়া যেতে পারে। খরচের তফাত অনেকটাই, তবে খাবারের স্বাদ কিংবা গুণমানের ফারাক খুবই কম। এছাড়া সঙ্গে সব সময় পানীয় পানির বোতল রাখতে পারলে ভালো। অন্যথায় পানি কিনে খেতে হলেই খরচ লাফিয়ে বাড়বে এক ধাক্কায়।
লাদাখে সমস্ত সাইট সিইং করা হলে গড়ে ৩৫০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে হতে পারে। তাই বেশিরভাগ মানুষই ভাড়ার গাড়িতে ঘুরতে পছন্দ করেন। বলা বাহুল্য, পাহাড়ি রাস্তায় মাইলেজ কম হওয়ায় জ্বালানি তেল খরচ সমতলের তুলনায় অনেকটাই বেশি হবে। তাই ভাড়ার গাড়িতে লাগাকে ঘুরতে চাইলে খরচ হবে প্রায় ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। এই বিপুল খরচ বাঁচাতে চাইলে গণপরিবহনে যাতায়াত করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখানে গণপরিবহন থাকলেও তা অন্যান্য শহরের মতো নয়। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সংখ্যায় খুবই কম এবং তা একেবারে ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে। সময়ও বেশি লাগে। তবে বলা বাহুল্য, খরচ ভাড়ার গাড়ির তুলনায় অনেকটাই কম।
লাদাখে চার চাকা গাড়ির মতোই বাইকও ভাড়ায় পাওয়া যায়। চালাতে জানলে এবং বৈধ লাইসেন্স থাকলে লাদাখ ঘোরার জন্য বাইকই সবচেয়ে ভালো অপশন। খরচ গণপরিবহনের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও চার-চাকার গাড়ির তুলনায় অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া আরও একটি উপায় রয়েছে। সেটি হল, গাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজে চালানো। এক্ষেত্রে গাড়ির ভাড়া বাবদ দিন প্রতি খরচ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। ২ সপ্তাহের ট্রিপে জ্বালানি সহ পরিবহণ খরচ সেক্ষেত্রে পড়বে গড়ে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে।
এরপর আসা যাক পারমিট এবং টোল ফি প্রসঙ্গে। লাদাখের ইনার লাইন পারমিটের দুটি অংশ রয়েছে। এখানে পরিবেশ বাবদ কর দিতে হয় মাথাপিছু ৪০০ টাকা এবং বন্যপ্রাণী সুরক্ষা বাবদ মাত্র ২০ টাকা নেয়া হয়। টোল ট্যাক্স এবং পারমিট মিলিয়ে দিন প্রতি খরচ ১০০০ টাকার কাছাকাছি থাকবে।
লাদাখের বিভিন্ন জায়গায় রিভার র্যাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং, মাউন্টেন বাইকিং সহ বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ট্রেকিং এবং ক্যামেল সাফারির ব্যবস্থাও। এছাড়া আইস হকি, রক ক্লাইম্বিং, তিরন্দাজি, পোলো, কোয়াড বাইকিং ইত্যাদিরও সুযোগ রয়েছে। বলা বাহুল্য, সেগুলির খরচ বেশ বেশি। নিতান্তই খরচ বাঁচাতে চাইলে মন খারাপ লাগলেও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস থেকে খানিক দূরেই থাকতে হবে।