লন্ডন শুধু যুক্তরাজ্যেরই নয়, গোটা পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত আর্থিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অথচ এই মহানগরে ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে গড়ে ৩৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড সময় প্রয়োজন হয়, যার ফলে এটি বিশ্বের অন্যতম জ্যামবহুল শহরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
প্রতিদিনের ভোগান্তি
এই অবরুদ্ধ গতি শুধু নাগরিক জীবনের দৈনন্দিনতাকেই ধীরগতির করে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
• কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়
• পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়
• আর দুর্ভোগ বাড়ে নাগরিকদের জন্য
পরিকল্পিত নগর অবকাঠামো এবং বিশ্বমানের গণপরিবহন ব্যবস্থার পরও লন্ডনে ট্র্যাফিক জ্যাম এখন একটি নীতিগত চ্যালেঞ্জ। কেবল উন্নয়ন নয় লন্ডনে দৈনন্দিন চলাচলে সময়ের ভারসাম্য বজায় রাখাও এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লন্ডনের ট্র্যাফিক জ্যামের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে—যা শুধু যানবাহনের সংখ্যাই নয়, বরং নীতিগত সিদ্ধান্ত, শহরের প্রাচীন কাঠামো এবং মানুষের যাতায়াত অভ্যাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। নিচে সহজ, প্রাঞ্জল ভাষায় এই কারণগুলো তুলে ধরছি:
লন্ডনের ট্র্যাফিক জ্যামের কারণ
ঐতিহাসিক শহর কাঠামো
লন্ডনের রাস্তাঘাটের পরিকল্পনা বহু শতাব্দী আগের — এক সময়ের রাজকীয় রাজধানী আজ আধুনিক যানবাহনের ভার বহনে হিমশিম খাচ্ছে। সংকীর্ণ রাস্তা, এলোমেলো লেন ও গোলচক্কর ভিত্তিক রোড নকশা বড় যানবাহনের চলাচলে বড় বাধা।
ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার
অনেক লন্ডনবাসী এখনো ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকে প্রাধান্য দেন, বিশেষ করে শহরের উপকণ্ঠ থেকে কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে। এতে প্রতিদিন রাস্তায় বিপুলসংখ্যক গাড়ি জমা হয়।
সড়ক মেরামত ও উন্নয়নকাজ
লন্ডনের রাস্তায় প্রায় সবসময়ই কোথাও না কোথাও নির্মাণ বা মেরামত চলছে—গ্যাস লাইন, পানি সরবরাহ, ফাইবার অপটিক, নতুন সাইকেল লেন—এসবের জন্য রাস্তা আংশিক বন্ধ রাখা হয়, ফলে গাড়ির গতি কমে যায়।
ট্রাফিক লাইট ও সিগন্যালের ঘনত্ব
লন্ডনে প্রতিটি মোড়েই নিয়মিত ট্রাফিক লাইট থাকে এবং তা অত্যন্ত ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। যদিও এটি নিরাপত্তার জন্য দরকারি, তবে এর ফলে গতি অনেকটা থেমে থেমে চলে।
পার্কিং সংকট ও লেন দখল
অনেক পুরোনো রাস্তায় যথেষ্ট পার্কিং সুবিধা না থাকায় অনেক গাড়ি রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকে বা লেন দখল করে রাখে। এতে রাস্তার কার্যকর প্রস্থ আরও সংকুচিত হয়।
ডেলিভারি ও কার্গো ভ্যান
অনলাইন কেনাকাটা বাড়ার ফলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ডেলিভারি ভ্যান শহরের অলিগলিতে ঢোকে। এরা রাস্তায় অস্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে, যা জ্যাম তৈরি করে।
বাস ও ট্যাক্সির সংখ্যা বেশি
লন্ডনের গণপরিবহন কার্যকর হলেও, বাস ও ব্ল্যাক ক্যাবের উচ্চ ঘনত্বও রাস্তায় চাপ বাড়ায়—বিশেষ করে পিক আওয়ারে।
জনসংখ্যা ঘনত্ব ও কর্মসংস্থান কেন্দ্রিক চাপ
লন্ডনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব এত বেশি যে প্রতিদিন শহরতলী থেকে লাখ লাখ মানুষ কাজ করতে আসেন। অফিস টাইমে এই যাত্রার চাপে রাস্তা প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
টমটম ট্রাফিক ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী
বিশ্বের ১০টি সবচেয়ে জ্যামবহুল শহর (১০ কিমি চলতে যতো সময় লাগে)। এই তালিকায় ঢাকাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই।
লন্ডনের যানজট কেবল একটি শহরের সমস্যা নয়—এটি একটি নগরের “টাইম ম্যানেজমেন্ট সংকটের প্রতিচ্ছবি”।
শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন যথেষ্ট নয়, পরিবর্তন দরকার নাগরিক যাতায়াত অভ্যাস, নীতিমালা এবং নগর পরিবহন পরিকল্পনায়। ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টে প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান, সীমিত গাড়ি প্রবেশ, এবং বিকল্প পরিবহন যেমন সাইকেল ও ওয়াকিং-ফ্রেন্ডলি রাস্তাই হতে পারে আগামী দিনের সমাধান।