জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম তার বার্ষিক অভিবাসন বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্যটি উল্লেখ করেছে৷ এতে বলা হয়েছে, প্রবাসীর আয়ের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ আছে শীর্ষ দশে৷
রেমিট্যান্স হল অভিবাসীদের মাধ্যমে সরাসরি তাদের মূল দেশে অবস্থানরত পরিবার বা আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের কাছে নগদ অর্থ পাঠানো৷ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের অর্থনীতিতে তাদের অভিবাসী নাগরিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বড় ভূমিকা রাখে৷
মঙ্গলবার (৭ মে) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে আইওএম তাদের বার্ষিক ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির প্রধান অ্যামি পোপ৷
প্রতিবেদনে অভিবাসন সংশ্লিষ্ট প্রধান পরিসংখ্যানগুলো ছাড়াও স্থান পেয়েছে ২০২২ সালের রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে বিশদ তথ্য৷
এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে রেমিট্যান্স পাওয়ার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশ ছিল ভারত, মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইন ও ফ্রান্স৷
আইওএম জানিয়েছে, রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির দিক থেকে ভারতের অবস্থান বিশ্বে প্রথম৷ দেশটি ২০২২ সালে রেকর্ড ১১১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে৷
এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উত্তর অ্যামেরিকার দেশ মেক্সিকো৷ দেশটি ২০২২ সালে ৬১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে৷ ২০২১ সালেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল দেশটি৷ দীর্ঘদিন দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছিল চীন৷ কিন্তু ২০২১ সালে চীনকে পেছনে ফেলে দুইয়ে উঠে আসে মেক্সিকো৷
২০২২ সালে রেমিট্যান্স গ্রহণে তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীন ৫১ বিলিয়ন ডলার, চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফিলিপাইন ৩৮ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা ফ্রান্স ৩০ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার পেয়েছে৷
এগিয়ে দক্ষিণ এশিয়া
জাতিসংঘের সংস্থাটি ব্যখ্যা করেছে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যায়৷ তাদের সুবাদে এ অঞ্চল বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য অংশ পেয়ে থাকে৷
দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় রয়েছে৷
২০২২ সালে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৮ম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ৷ ওই বছর পাকিস্তান ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে৷
আইওএমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ১০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৫ সালে ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল৷ অর্থাৎ ১২ বছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার৷
সংস্থাটি জানায়, রেমিট্যান্স বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বহু মানুষের জীবন ধারণের প্রধান মাধ্যম হলেও এসব দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী কর্মীরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন৷
তাদের মধ্যে অনেকেই আর্থিক শোষণের শিকার হন এবং অভিবাসন খরচের কারণে অতিরিক্ত আর্থিক দেনায় পড়ে যান৷ এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তারা ‘জেনোফোবিয়া’রও (বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব) শিকার হন৷
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশে পাঠানো বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা ১১ লাখ ২৬ হাজার ৬০ জন৷
বুধবার (৮ মে) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের এক প্রশ্নোত্তরে জবাবে এ তথ্য জানান দেশটির প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী৷
অভিবাসী পাঠানোয় ষষ্ঠ
রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে অষ্টম অবস্থানে থাকলেও অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ৷
বিদেশে অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশ হচ্ছে ভারত, মেক্সিকো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়া৷
এছাড়া অভিবাসীদের শীর্ষ দশটি প্রধান গন্তব্য দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন এবং ইটালি৷
রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ যুক্তরাষ্ট্র
আইওএম এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷ দেশটি থেকে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ৭৯ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার৷
এই তালিকার দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ সৌদি আরব৷ আরব উপসাগরীয় অঞ্চল বা জিসিসি এলাকার এই দেশ থেকে ২০২২ সালে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন অভিবাসীরা। ৩১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় শীর্ষ দেশ সুইজারল্যান্ড৷
এছাড়া জার্মানি চতুর্থ, চীন পঞ্চম, কুয়েত ষষ্ঠ, লুক্সেমবার্গ সপ্তম, নেদারল্যান্ডস অষ্টম, ফ্রান্স নবম এবং কাতার দশম অবস্থানে আছে৷
আইওএম তাদের প্রতিবেদনে আরো জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স ৬৫০ শতাংশ বেড়ে ১২৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে৷