বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং দুবাইয়ে রেসিডেন্সি রয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে বেশকিছু ছবি দিয়ে তিনি এ দাবি করেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের সেকেন্ড হোম রাষ্ট্রপতি। মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, আবার একই সঙ্গে তার রয়েছে মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ এবং দুবাইতে ব্যবসা ও সেদেশের রেসিডেন্সি। এ ছাড়াও তার তৃতীয় একটি দেশের পাসপোর্টে বিনিয়োগ রয়েছে বলেও শোনা যায়।
জুলকারনাইন আরও লিখেছেন, রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে ১৫০,০০০ রিংগিত বিনিয়োগ এবং দুবাইয়ের কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টের বিস্তারিত ও ওয়ারাদ জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি নামের দুবাইতে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের বিনিময়ে রেসিডেন্স ভিসা পাওয়ার প্রমাণ স্বরূপ বিভিন্ন কাগজ হাতে এসেছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রপতি চুপ্পু বিদেশে এসব বিনিয়োগের কোন অনুমতি কি আদৌ গ্রহণ করেছেন? যদিও এসবই তিনি করেছেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে। তাহলে জিজ্ঞাস করা যেতে পারে বাংলাদেশে ব্যাংকের অনুমতি ব্যতীত মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে জনাব চুপ্পুর ১৫০,০০০ রিংগিত ও দুবাইর ব্যবসায় বিনিয়োগ কি বৈধ? এবং তিনি যদি আনুগত্য মেনে অর্থের বিনিময়ে, তৃতীয় একটি দেশের পাসপোর্টও গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বহাল থাকা তারপক্ষে সম্ভব হবে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে কখনোই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
তবে ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সত্যত্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ ছাড়া তিনি ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। এর আগে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তাকে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে পাবনা শহীদ আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক আইনে তিনি তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮০-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণীর সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন ২০০৬ সালে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান এবং ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেব দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. সাহাবুদ্দিন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকরির সময়কালে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে মো. সাহাবুদ্দিন এক পুত্র সন্তানের জনক এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।