শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪

রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, যা আয়তনে ১৭ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। এটি ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিস্তৃত এবং মোট ১১টি টাইম জোনে বিভক্ত।

১. রাজধানী ও বড় শহরসমূহ

  • রাজধানী: মস্কো
  • বড় শহরসমূহ: সেন্ট পিটার্সবার্গ, নভোসিবির্স্ক, ইয়েকাতেরিনবার্গ, কাজান

২. জনসংখ্যা

রাশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১৪৩ মিলিয়ন, যা বিশ্বের নবম বৃহত্তম জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশ।

৩. ভাষা

রাশিয়ার প্রধান ভাষা রুশ ভাষা, তবে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন স্থানীয় ভাষাও প্রচলিত আছে।

৪. ধর্ম

রাশিয়ার মূল ধর্ম হলো অর্থোডক্স খ্রিস্টান। এছাড়া মুসলিম, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্মও রাশিয়ায় প্রচলিত আছে।

৫. ভৌগোলিক বৈচিত্র্য

রাশিয়ার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অত্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির সাইবেরিয়া অঞ্চল তুষারময় এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় তুলনামূলকভাবে গরম আবহাওয়া বিরাজ করে। রাশিয়ায় তায়গা বন, ইউরাল পর্বতমালা, এবং বাইকাল হ্রদ রয়েছে, যা বিশ্বের গভীরতম এবং প্রাচীনতম হ্রদ হিসেবে পরিচিত।

৬. রাজনৈতিক কাঠামো

রাশিয়া একটি ফেডারেল রাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট শাসিত গণতান্ত্রিক দেশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী মিলে সরকার পরিচালনা করেন। রাশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯৩ সালে গৃহীত হয়েছিল।

৭. অর্থনীতি

রাশিয়ার অর্থনীতি প্রধানত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। কৃষিক্ষেত্রেও রাশিয়া উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে গম উৎপাদনে।

৮. সংস্কৃতি

রাশিয়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। বিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয়, ফিওদর দস্তয়েভস্কি এবং কবি আলেকজান্ডার পুশকিন রাশিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। রাশিয়ার ব্যালে, বিশেষ করে বলশোই ব্যালে এবং মারিঙ্কি থিয়েটার বিশ্বখ্যাত।

৯. বিখ্যাত স্থাপনা

রাশিয়ায় বেশ কিছু বিখ্যাত স্থাপনা রয়েছে, যেমন মস্কোর ক্রেমলিন, রেড স্কোয়ার, সেন্ট বাসিল ক্যাথেড্রাল এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের হার্মিটেজ মিউজিয়াম।

১০. আবহাওয়া

রাশিয়ার আবহাওয়া অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়। শীতকালে সাইবেরিয়া অঞ্চলে তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।

১১. খেলাধুলা

ফুটবল এবং হকি রাশিয়ার জনপ্রিয় খেলা। এছাড়া শীতকালীন অলিম্পিকে রাশিয়ার প্রতিযোগীরা বরাবরই উচ্চমানের পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছেন।

১২. পরিবহন ব্যবস্থা

রাশিয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ে হলো বিশ্বের দীর্ঘতম রেলপথ, যা মস্কো থেকে ভ্লাদিভস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত।

রাশিয়া তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত।

রাশিয়ায় ভ্রমণের জন্য অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। কিছু বিখ্যাত ও জনপ্রিয় স্থানের বিবরণ দেওয়া হলো:

১. মস্কো (Moscow)

  • ক্রেমলিন ও রেড স্কোয়ার: রাশিয়ার রাজনৈতিক কেন্দ্র এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত। এই এলাকায় সেন্ট বাসিল ক্যাথেড্রালও অবস্থিত, যা তার রঙিন গম্বুজের জন্য বিখ্যাত।
  • বোলশোই থিয়েটার: বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত থিয়েটারগুলির মধ্যে একটি, যেখানে ক্লাসিক ব্যালে এবং অপেরা প্রদর্শিত হয়।
  • গর্কি পার্ক: মস্কোর জনপ্রিয় উদ্যান, যা পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান।

২. সেন্ট পিটার্সবার্গ (Saint Petersburg)

  • হার্মিটেজ মিউজিয়াম: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং সমৃদ্ধশালী জাদুঘর, যেখানে প্রায় ৩ মিলিয়ন শিল্পকর্ম রয়েছে। এটি একসময় রাজ পরিবারের আবাসস্থল ছিল।
  • পিটারহফ প্যালেস: “রাশিয়ান ভেনিস” নামে পরিচিত এই রাজপ্রাসাদটি তার সুন্দর ঝর্ণা এবং বাগানের জন্য বিখ্যাত।
  • নেভস্কি প্রসপেক্ট: সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রধান বাণিজ্যিক রাস্তা, যেখানে অনেক ক্যাফে, দোকান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে।

৩. গোল্ডেন রিং (Golden Ring)

রাশিয়ার প্রাচীন শহরগুলির একটি গুচ্ছ, যেখানে ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। ভ্লাদিমির, সুজদাল, এবং রোস্তভ এর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত শহর। এখানকার গির্জা, মঠ, এবং সোনালী গম্বুজ রাশিয়ান ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।

৪. লেক বাইকাল (Lake Baikal)

এটি বিশ্বের সবচেয়ে গভীর এবং প্রাচীনতম মিঠা পানির হ্রদ, যা শীতকালে সম্পূর্ণ জমে যায়। বাইকাল হ্রদে ভ্রমণকারীরা হাইকিং, ক্যাম্পিং, এবং শীতে বরফে হাঁটার মতো কার্যক্রম উপভোগ করতে পারেন।

৫. কাজান (Kazan)

রাশিয়ার তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী এবং একটি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন স্থান। এখানে বিখ্যাত কাজান ক্রেমলিন রয়েছে, যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। শহরটিতে রাশিয়ান অর্থোডক্স গির্জা ও মসজিদ একসাথে অবস্থান করছে, যা বিশেষ আকর্ষণীয়।

৬. সাইবেরিয়া ও আলতাই পর্বত (Siberia and Altai Mountains)

সাইবেরিয়ার বিশাল বনাঞ্চল, তুষারাবৃত পর্বতমালা, এবং নদী রাশিয়ার এক অনন্য আকর্ষণ। আলতাই পর্বতমালা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য হাইকিং এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ।

৭. সোচি (Sochi)

সোচি হল একটি সমুদ্রতীরবর্তী শহর যা শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজক হিসাবে বিখ্যাত। শহরটি কালো সাগরের তীরে অবস্থিত, এবং এখানে অনেক উষ্ণ প্রস্রবণ ও রিসোর্ট রয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

৮. কামচাটকা উপদ্বীপ (Kamchatka Peninsula)

রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে অবস্থিত কামচাটকা তার সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, হট স্প্রিংস, এবং বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত। প্রকৃতি প্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এটি আদর্শ স্থান।

৯. মুরমানস্ক (Murmansk)

মুরমানস্ক শহরটি আর্কটিক বৃত্তের কাছাকাছি অবস্থিত, এবং এখান থেকে নর্দান লাইটস বা অরোরা বোয়ালিস দেখার সুযোগ রয়েছে। শীতকালে এখানে আশ্চর্যজনক আকাশের দৃশ্য দেখা যায়।

১০. ভ্লাদিভস্তক (Vladivostok)

রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের এই শহরটি জাপান সাগরের তীরে অবস্থিত এবং এশিয়ার বন্দরগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে। শহরটি তার সমুদ্রবন্দর এবং ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ের পূর্ব প্রান্তের জন্য বিখ্যাত।

রাশিয়া ভ্রমণ তার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এদেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণকারীদের এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দান করে।

রাশিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

শিক্ষা

রাশিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা উচ্চমানের এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এখানে শিক্ষাব্যবস্থার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

  1. শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো:
    • রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা ১১-১২ বছরের স্কুল শিক্ষার পর শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সম্পন্ন করে।
    • উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, এবং একাডেমি পর্যায়ে বিভক্ত। বহু রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ মানের এবং স্বীকৃত, যেমন মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি, সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।
  2. বিষয় এবং বিশেষায়িত শিক্ষা:
    • রাশিয়ান শিক্ষাব্যবস্থা বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা, এবং স্পেস রিসার্চে বিশেষায়িত। রাশিয়ার সোভিয়েত যুগ থেকেই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং মহাকাশ গবেষণায় সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে।
    • রাশিয়ার মেডিকেল কলেজগুলোতে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য ইংরেজি-মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যা অনেক বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে।
  3. শিক্ষাবৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা:
    • রাশিয়ান সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে।
    • রাশিয়ার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যয় অনেক কম, যা উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে রাশিয়াকে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল করে তোলে।
  4. মহাকাশ এবং প্রযুক্তি শিক্ষা:
    • রাশিয়া মহাকাশ গবেষণায় অগ্রগামী এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সহযোগী। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক উৎক্ষেপণ করে এবং প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনকেও মহাকাশে প্রেরণ করে।

সংস্কৃতি

রাশিয়ার সংস্কৃতি বহুমুখী এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অন্যতম অংশ। সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা, এবং নৃত্যের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ঐতিহ্য সুপ্রতিষ্ঠিত।

  1. সাহিত্য:
    • রাশিয়ার সাহিত্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। লিও টলস্টয়, ফিওদর দস্তয়েভস্কি, আন্তন চেখভ এবং আলেকজান্ডার পুশকিন বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য রত্ন। তাদের রচিত “ওয়ার অ্যান্ড পিস”, “আনা কারেনিনা”, “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট” ইত্যাদি উপন্যাস বিশ্বের সেরা সাহিত্যকর্মের মধ্যে গণ্য।
  2. সংগীত এবং নৃত্য:
    • রাশিয়া তার ক্লাসিক্যাল সংগীত এবং ব্যালের জন্য বিখ্যাত। পিটার ইলিচ চাইকভস্কির সৃষ্টি “স্যুয়ান লেক”, “দ্য নটক্র্যাকার” এবং “১৮১২ ওভারচার” বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
    • বলশোই ব্যালে এবং মারিঙ্কি থিয়েটার রাশিয়ার দুই প্রধান ব্যালে থিয়েটার, যা সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ব্যালে পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত।
  3. শিল্পকলা:
    • রাশিয়ার চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্য সমৃদ্ধ। রুশ আইকন পেইন্টিং এবং বাস্তববাদী শিল্পী ইলিয়া রেপিনের কাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
    • ফ্যাবার্জের ডিম রাশিয়ার শিল্পকলার একটি প্রসিদ্ধ নিদর্শন, যা রাজপরিবারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
  4. লোক সংস্কৃতি এবং উৎসব:
    • রাশিয়ান লোকসংস্কৃতিতে পুতুল (মাট্রোশকা), লত্নী (হস্তশিল্প), এবং বিভিন্ন রঙিন পোশাক বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
    • মসলেনিৎসা একটি ঐতিহ্যবাহী রুশ উৎসব, যা শীত বিদায় এবং বসন্ত আগমনের উদযাপন।
  5. ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা:
    • রাশিয়ায় প্রায় ৮০% মানুষ অর্থোডক্স খ্রিস্টান। রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের অনেক প্রাচীন গির্জা রয়েছে, যা গম্বুজ আকৃতির এবং রঙিন ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। সেন্ট বাসিল ক্যাথেড্রাল এবং কাজানের গির্জা এর কিছু বিখ্যাত উদাহরণ।
    • এছাড়া মুসলিম, বৌদ্ধ এবং ইহুদি সম্প্রদায়ও রয়েছে, যা রাশিয়ার ধর্মীয় বৈচিত্র্যের পরিচায়ক।
  6. খাদ্য সংস্কৃতি:
    • রাশিয়ার খাবারগুলির মধ্যে বোর্স্ট (এক ধরনের বিটের স্যুপ), পেলমেনি (ডাম্পলিং), এবং ব্লিনি (এক ধরনের প্যানকেক) জনপ্রিয়।
    • ভদকা রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পানীয় এবং সারা বিশ্বে পরিচিত।

রাশিয়া তার উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, কাজের সুযোগ এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলো।

গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

রাশিয়ার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বখ্যাত এবং উচ্চমানের গবেষণার জন্য সুপরিচিত। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য:

  1. মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি (Lomonosov Moscow State University):
    • এটি রাশিয়ার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি।
    • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান এবং মানবিকবিদ্যায় শক্তিশালী বিভাগ রয়েছে।
  2. সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি (Saint Petersburg State University):
    • এটি রাশিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং রুশ সংস্কৃতির কেন্দ্র। ভাষা, ইতিহাস, বিজ্ঞান, এবং প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য বিখ্যাত।
  3. ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি – হায়ার স্কুল অব ইকোনমিক্স (HSE):
    • এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষার জন্য বিখ্যাত।
    • এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য খ্যাতনামা এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের জন্য সহায়তা প্রদান করে।
  4. তোমস্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং তোমস্ক পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি:
    • এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি এবং চিকিৎসা শিক্ষার জন্য খ্যাতনামা।
  5. বাউম্যান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি:
    • এটি রাশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এবং খ্যাতনামা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে প্রকৌশল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে।

বিদেশি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাবৃত্তি

রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছর অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। রাশিয়ান সরকার ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়।

  1. রাশিয়ান সরকারী বৃত্তি:
    • প্রতি বছর রাশিয়ান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান করে, যা “Russian Government Scholarship” নামে পরিচিত। এই বৃত্তি টিউশন ফি, স্বাস্থ্যবীমা, এবং আবাসন ফি আংশিক বা পূর্ণরূপে বহন করে।
  2. রাশিয়ান ইউনিভার্সিটি বৃত্তি:
    • অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি, হায়ার স্কুল অব ইকোনমিক্স, এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বৃত্তি প্রদান করে।
    • কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ ক্ষেত্রে গবেষণা বা অ্যাকাডেমিক কৃতিত্বের ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করে।
  3. Open Doors Scholarship Program:
    • রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বারা পরিচালিত এই প্রোগ্রামটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে বিশেষ সুযোগ প্রদান করে।

কাজের সুযোগ

রাশিয়ার অর্থনীতি বিভিন্ন খাতে উন্নত হওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার পর চাকরির সুযোগ বিদ্যমান। তবে কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়ান ভাষার দক্ষতা বাধ্যতামূলক হতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো:

  1. ক্যাম্পাসে কাজের সুযোগ:
    • বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আংশিক সময় কাজ করার সুযোগ পান। এভাবে তারা শিক্ষা চলাকালীন অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা এবং আয় করতে পারে।
  2. প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল খাতে চাকরি:
    • রাশিয়া প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, এবং প্রকৌশল খাতে বিশ্বে অগ্রগামী। এই খাতে শিক্ষিত বিদেশি শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেতে পারেন।
  3. শিক্ষা শেষে কাজের ভিসা:
    • রাশিয়ায় কাজের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে কাজের ভিসা পেতে পারেন। তবে নিয়মিত ভাষা ও দক্ষতার পরীক্ষা এবং চাকরির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হয়।
  4. রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক কোম্পানি:
    • রাশিয়াতে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, যা যোগ্যতাসম্পন্ন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করে। বিশেষ করে মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি বেশি।

ব্যবসায়িক পরিবেশ

রাশিয়ায় ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

  1. বাজার ও অর্থনীতি:
    • রাশিয়া একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের রপ্তানিকারক দেশ।
    • রাশিয়ান সরকার বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিতে নীতিমালা উন্নত করেছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি, কৃষি এবং নির্মাণ খাতে।
  2. ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়া:
    • বিদেশি উদ্যোক্তারা রাশিয়ায় ব্যবসা শুরু করতে পারে। তবে কিছু সেক্টরে স্থানীয় পার্টনার বা লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে।
    • মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজান, এবং নভোসিবির্স্কে ব্যবসায়িক কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে নতুন ব্যবসায় শুরু করার জন্য সুবিধা প্রদান করা হয়।
  3. প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন:
    • রাশিয়া উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। স্কোলকোভো ইনোভেশন সেন্টার ও ইনোভেশন হাবগুলির মাধ্যমে রাশিয়া টেক স্টার্টআপ এবং গবেষণাকে উৎসাহিত করছে।
  4. বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ):
    • রাশিয়া বেশ কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে, যেখানে নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য করের সুবিধা, আর্থিক সহায়তা, এবং সহজ নিয়ম রয়েছে।

রাশিয়া তার প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রযুক্তি, এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য ব্যবসায়িক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com