অপরূপ সিলেট ভ্রমণের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় দিক হলো সোয়াম্প ফরেস্ট বা রাতার গুলে নৌকা ভ্রমণ। রাতারগুল ভ্রমণ ব্যতীত আপনার সিলেট ভ্রমণ হলো বটে কিন্তু পরিপূর্ণ হলো না। বিস্তৃত পানির বুকে ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ গাছের বুক চিরে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে এগিয়ে যাওয়ার রোমাঞ্চ পেতে চাইলে যেতে হবে রাতারগুল। পুরো পৃথিবীর অল্প কয়েকটি জলাবনের অন্যতম একটি রাতারগুল যা বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন। সিলেটের গোয়াইন ঘাটে অবস্থিত এই জলাবনকে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত জলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজের এমন বাহার না দেখলে এর সৌন্দর্য আসলে বুঝতে পারা যায় না। ডিঙিতে চড়ে প্রকৃতির অপরূপ সুধা পান করতে করতে বেলা বয়ে যাবে অজান্তেই। স্বচ্ছ জলে গাছের সবুজ ছায়ার পাখ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে নীল আকাশ। কোথাও কোথা সবুজ ছেয়ে আছে আরো গভীর ভাবে।
সিলেট শহর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিরসবুজ এই বন গুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। বনের দক্ষিণ দিকে রয়েছে আরো দুটি হাওর। শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। শীতকালে এখানের জল শুকিয়ে যায় তাই বর্ষায় বিশেষ করে জুলাই থেকে অক্টোবর রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শীতকালে এখানকার জলজ প্রাণী বনের ভেতর খনন করা জলাশয়গুলোতে গিয়ে আবাস গড়ে। এখানে পুরাতন দুটি জলাশয় ছাড়াও বনের ভেতর পাখির আবাসস্থল হিসেবে ৩.৬ বর্গকিলোমিটার একটি বড় লেক খনন করা হয়। শীতে এখানে বসে পাখির মেলা। নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর বিচরণ দেখা যায় এই জলাবনে। দেখা পাওয়া যায় বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ, সাপ, গুইসাপ, শাদা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখির। রয়েছে জোঁকও। শুকনো মৌসুমে বেজির দেখাও পাওয়া যায়। এখানকার মাছের মধ্যে রয়েছে টেংরা, খলিশা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুইসহ বিভিন্ন জাত। শীতকালে দেখা যায় অনেক পরিযায়ী পাখির। আর সেই সব শিকারে আসে বিশালাকার শকুনেরা।
এই প্রাকৃতিক বনের গাছগাছালির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ জলাবদ্ধতা সইতে পারে এমন গাছ। বন বিভাগের লাগানো গাছের মধ্যে রয়েছে হিজল, করচ, বরুণ ও মুতাসহ বেশ কিছু রকম গাছ।
কীভাবে যাবেন রাতারগুল : প্রথমে যেতে সিলেট শহরে। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে সরাসরি সিলেটে যেতে পারেন। গ্রীনলাইন, সোহাগ ও সৌদিয়া পরিবহণের এসি বাস রয়েছে। এছাড়া ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, মামুন, সিলকম সহ আরো কয়েকটি পরিবহণের নন এসি বাস পাবেন। এসি বাস ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ এবং নন এসি বাস ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০। আর ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবার। এছাড়া সারা সপ্তাহ জুড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ২ টায় ছেড়ে যায়। উপবন এক্সপ্রেস বুধবার ব্যতীত প্রতিদিন রাত ৯.৫০ মিনিটে ছেড়ে যায়। শ্রেণিভেদে ট্রেনের ভাড়া ১৯০ থেকে ১১৯১ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
সিলেটে নেমে রাতারগুল যাবার রয়েছে ২ টি পথ। জাফলংএর গাড়িতে চরে সারিঘাট। এখানে দেখতে পাবেন সারি নদীর অপরূপ চিত্র। সারিঘাট আসতে ভাড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এখান থেকে সি এন জি বা টেম্পোতে গোয়াইনঘাট বাজার। বাজারের পাশের নৌঘাট। ১০ থেকে ১২ জন উপযোগী নৌকার সারাদিনের ভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। দরদাম করে নেবেন অবশ্যই। তবে এই নৌকায় করে বনে ঢুকতে পারবেন না, বনে ঢুকতে হলে লাগবে ডিঙ্গি নৌকা। এছাড়া আসতে পারেন খাদিম চা বাগান আর খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে। এই পথে আসতে সময় লাগবে কম। সি এন জি, অটোরিকশা বা জিপ নিয়ে আসতে হবে শ্রীঙ্গি ব্রিজ। সারাদিন ভিত্তিতে সি এন জি বা অটোরিকশা ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। যেতে পারেন লোকাল সিএনজি করেও। সে জন্য যেতে হবে আম্বরখানা। সেখান থেকে লোকাল সি এন জি চড়তে জনপ্রতি খরচ ১০০ টাকা। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে জেলেদের ডিঙ্গি নৌকায় অনায়াসেই ৪ থেকে ৬ জন বসতে পারবেন। ভাড়া লাগবে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন: সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। রয়েছে ফাইভ স্টার হোটেল রোজ ভিউ। এছাড়া আছে ফরচুন গার্ডেন, হোটেল ডালাস, হোটেল হিলটাউন, হোটেল গার্ডেন ইন। শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, নাজিমগড় রিসোর্ট ও জেসটেট হলিডে রিসোর্ট এও থাকতে পারেন। এছাড়া আছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল।
সতর্কতা: