1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
রাজধানী বেইজিংয়ের পরিচয়
শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:২৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

রাজধানী বেইজিংয়ের পরিচয়

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মে, ২০২১

চীন একটি বহুজাতিক বড় দেশ। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল, মহানগর ও শহরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। উত্তর চীনে অবস্থিত চীনের রাজধানী-বেইজিং; পূর্ব চীনে আছে দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র শাংহাই; পশ্চিমাঞ্চলে জাতীয় বৈশিষ্ট্যময় লাসা এবং দক্ষিণে চির বসন্তের নগরী খুনমিং।

রাজধানী বেইজিংয়ের পরিচয় ও এর উপকণ্ঠের সুন্দর দৃশ্য

বেইজিংয়ের পরিচয়

বেইজিং চীনের রাজধানী এবং চীনের রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। উত্তর চীনের সমলতভূমিতে অবস্থিত রাজধানী বেইজিং। ভৌগোলিক দিকে থেকে, বেইজিং, ইতালির রোম ও স্পেনের মাদ্রিদ শহর একই অক্ষাংশে অবস্থিত। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল তুলনামূলক দীর্ঘ, বসন্ত ও শরত ঋতুর সময় কম ও শুষ্ক। বছরে গড়পড়তা তাপমাত্রা থাকে ১১.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

বেইজিংয়ের রয়েছে কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস। বসন্ত ও শরত যুগ ও যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে (খৃষ্টপূর্ব ৭৭০ থেকে ২২১ খৃষ্টাব্দ) বেইজিং অঞ্চল কয়েকটি রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। ছিন, হান ও তিন রাজ্য সময়কালে বেইজিং শহর চীনের উত্তরাংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল। বেইজিং একটি রাজধানী হিসেবে শুরু হয় ছিন রাজবংশের আমলে। এরপর বেইজিং ইউয়ান, মিং আর ছিং রাজবংশের রাজধানী ছিল। মোট ৩৪ জন রাজা এখান থেকে নিখিল চীনের প্রশাসন পরিচালনা করেন।

রাজধানী বেইজিংয়ের পরিচয় ও এর উপকণ্ঠের সুন্দর দৃশ্য

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর, বিশেষভাবে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার বেইজিংয়ের চেহারা দিন দিন বদলে যাচ্ছে। নানা ধরনের আধুনিক ভবন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বেইজিং পৃথিবীর আন্তর্জাতিক শহরের সারিতে অবস্থান অর্জন করেছে। এখানে প্রাচীন সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও আধুনিক রীতিনীতির সুন্দর সমন্বয় ঘটেছে, যা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং প্রতি বছর  কোটি কোটি বিদেশি পর্যটককে স্বাগত জানায়। সুদীর্ঘ ইতিহাস বেইজিংয়ের জন্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ‌ও পুরাকীর্তি এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক আকর্ষণ রেখে দিয়েছে। আপনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি পছন্দ করলে, মহা-প্রাচীর উঠতে পারেন, বিরাট আকারের নিষিদ্ধ নগর বা রাজপ্রাসাদ জাদুঘর, গ্রীষ্মকালীন রাজপ্রাসাদ, পেইহাই হৃদ, সিয়াংশান পাহাড়, টেম্পল অভ হ্যাভেন ইত্যাদি উদ্যান ঘুরে বেড়াতে পারেন। যেখানে সুন্দর, সুচারু আর সুমহান স্থাপত্যগুলো দেখা যায়। এসব স্থানে যেনো দেখার শেষ নেই। আপনি চীনের প্রাচীন সংস্কৃতি ও সম্মানিত ব্যক্তিদের কাহিনী জানতে চান তাহলে আপনি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির বসতি পরিদর্শন করতে পারেন এবং বেইজিং অপেরা উপভোগ করতে পারেন। আপনি চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামরিক বিষয়াদি প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রের উন্নতির হালচাল জানতে চাইলে বেইজিংয়ের শতাধিক জাদুঘরে যেতে পারেন। আপনি যদি প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে যান, তাহলে বেইজিংয়ের উপকণ্ঠে সুন্দর পাহাড় ও নদ-নদী আপনার মন ভরাতে পারে।

রাজধানী বেইজিংয়ের পরিচয় ও এর উপকণ্ঠের সুন্দর দৃশ্য

মহাপ্রাচীর:  ‘বিশ্বের আটটি বিস্ময়ের অন্যতম’ ও ‘চীনা জাতির প্রতীক’ চীনের মহাপ্রাচীর মানবজাতির ইতিহাসে বৃহত্তম স্থাপত্য।   হাজার হাজার বছর পরও আপনি পাহাড়ে উঠে মহাপ্রাচীর দেখলে চীনা জাতির তৈরি চমত্কার ইতিহাস এবং তাদের প্রজ্ঞা বুঝতে পারবেন।

রাজধানী বেইজিংয়ের পরিচয় ও এর উপকণ্ঠের সুন্দর দৃশ্য

ইতিহাস:

মহাপ্রাচীরের নির্মাণ কাজ খৃষ্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে শুরু হয়। তখন মধ্য চীনের প্রশাসন উত্তরাঞ্চলের জাতির আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেয়াল দিয়ে সীমান্তে তৈরি করা প্রহরা টাওয়াগুলোকে রক্ষার ব্যবস্থা করে। চীনের বসন্ত ও শরত যুগ আর যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অনেক লড়াই হয়েছিলো। বড় রাজ্যগুলো পরস্পরের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সীমান্তের নিকটবর্তী পাহাড়ে মহাপ্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করে। খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা চীনকে একীকৃত করার পর আগের ছোট ছোট রাজ্যের তৈরি করা মহাপ্রাচীর সংযুক্ত হয়। আস্তে আস্তে আঁকাবাঁকা পাহাড়গুলোতে তৈরি এই প্রাচীর উত্তর সীমান্তের পথ রুখে দেয়। এতে উত্তর দিকের মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমির পশুপালকদের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। ছিন রাজবংশের আমলে মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য  দাঁড়ায় ৫০০০ কিলোমিটার। ছিন রাজবংশের পর হান রাজবংশ মহাপ্রাচীর আরও ১০ হাজার কিলোমিটার বাড়িয়ে দেয়। দু’হাজারেরও বেশি বছর ধরে চীনের বিভিন্ন সময়ের প্রশাসন ভিন্ন মাত্রায় মহাপ্রাচীরের কাজ এগিয়ে নেয়। বিভিন্ন রাজবংশের আমলে নির্মিত প্রাচীর এক সঙ্গে সংযুক্ত হলে এর মোট দৈর্ঘ্য ৫০ হাজার কিলোমিটারেও বেশি হতে পারে। যার অর্থ এ প্রাচীর পৃথিবীকে এক দফা ঘেরাও করতে পারে।

এখন মহাপ্রাচীর বলতে সাধারণত মিং রাজবংশের আমলে (১৩৬৮-১৬৪৪) তৈরি মহাপ্রাচীর বোঝায়। এটি চীনের পশ্চিমাংশের কানসু প্রদেশের চিয়াইয়ু কুয়ান থেকে চীনের উত্তর-পূর্ব লিয়াও নিং প্রদেশের ইয়েলো নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মহাপ্রাচীর চীনের ৯টি প্রদেশ, শহর, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৭৩০০ কিলোমিটার। চীনা হিসেবে প্রায় ১৪ হাজার লি। সুতরাং চীনের মহাপ্রাচীরকে ১০ হাজার লি’র মহাপ্রাচীর বলা হয়। প্রতিরক্ষা প্রকল্প হিসেবে মহাপ্রাচীর পাহাড়ে তৈরি করা হয় এবং মরুভূমি, মালভূমি, জলাভূমি অতিক্রম করেছে এটি। মহাপ্রাচীর যে সব জায়গা অতিক্রম করেছে সে সব জায়গার ভৌগোলিক অবস্থা খুব জটিল। নির্মাণকারীরা ভৌগোলিক অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো প্রয়োগ করেছেন। এতে চীনের পূর্বপুরুষদের মেধা ও নির্মাণ দক্ষতা ফুটে উঠেছে।

মহাপ্রাচীর আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাচীরের নিচে খাড়া পাহাড়ি খাদ। প্রাচীর আর পাহাড় পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রাচীনকালে এই মহাপ্রাচীর অতিক্রম করা ছিলো অসম্ভব! প্রাচীর সাধারণত বড় বড় ইট আর লম্বা পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। ইট ও পাথরের ভিতরে হলুদ মাটি ও পাথরের টুকরা দিয়ে পূর্ণ করা হয়েছে। প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় দশ মিটার। তার প্রস্থ ৪ থেকে ৫ মিটার। এতে যুদ্ধের সময় খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহে সুবিধা হয়। দেয়ালের ভিতরে পাথরের সিঁড়ি আছে। পাথরের সিঁড়ি দিয়ে সহজেই উঠা-নামা করা যায়। অল্প কিছু দূর পর পর রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এসব টাওয়ারে অস্ত্র ও খাদ্য রাখা হতো। এখানে সেনারা বিশ্রামও নিতো। যুদ্ধের সময় সেনারা এর আড়ালে আশ্রয় নিতে পারতো। তা ছাড়া, শত্রুর আক্রমণ টের পেলে এসব টাওয়ারে আগুন জ্বালানো হতো। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে খবর পৌঁছে যেতো।

বর্তমানে মহাপ্রাচীরের এ ভূমিকা আর নেই। কিন্তু তার বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্য রয়েছে। মহাপ্রাচীর দেখতে খুব মজবুত একটি স্থাপনা। দূর থেকে দেখলে এ মহাপ্রাচীরকে একটি উড্ডয়নমান ড্রাগনের মতো মনে হয়। আর কাছ থেকে দেখলে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সঙ্গে মিশে থাকা একটি সুমহান রহস্যময় স্থাপনা বলে মনে হয়।

মহাপ্রাচীরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাত্পর্য রয়েছে। এটি প্রচুর পর্যটক আকর্ষণ করে। চীনে একটি প্রবাদ আছে, ‘মহাপ্রাচীর দেখতে না গেলে প্রকৃত পুরুষ হওয়া যায় না।’ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা মহাপ্রাচীরে উঠে খুব গর্ব বোধ করেন। চীন ভ্রমণে আসা বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট মহাপ্রাচীরে উঠেছেন। এখন মহাপ্রাচীরের কয়েকটি অংশ অপেক্ষাকৃতভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেমন, বেইজিংয়ের বিখ্যাত পাতালিং, সিমাথায়, মুতিয়েনইউ, মহাপ্রাচীরের পূর্ব দিকের সানহাই কুয়াং এবং মহাপ্রাচীরের পশ্চিম দিকে কানসু প্রদেশের চিয়াইয়ু কুয়াং প্রভৃতি অঞ্চল। এসব জায়গা চীনের বিখ্যাত পর্যটন জায়গা। সারা বছর এসব স্থানে ভিড় লেগে থাকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com