রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
Uncategorized

রংধনুর সাতরঙে রাঙা যে গ্রাম

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

একপশলা বৃষ্টির পর ঝকঝকে আকাশ। রোদের আলো ঝিলিক দিচ্ছে পরিস্কার আকাশে ভেসে উঠল সাতটি রঙের আভা। একদিকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ভেজা মাটির ভ্যাঁপসা গন্ধ লাগছে নাকে। সেইসঙ্গে ঝকঝকে আকাশে রংধনু, আপনার মন ভালো করে দেবেই। আষাঢ় মাসেই এই দৃশ্য দেখা যায়। এরপর পরের বছরের জন্য অপেক্ষা।

তবে ইন্দোনেশিয়ার একটি গ্রাম এই আফসোস পুষিয়ে নিয়ে নিজেদের গ্রামকেই সাজিয়ে ফেলেছে রংধনুর সাতরঙে। ইন্দোনেশিয়ার আর ১০টা গ্রামের একটি কম্পুং পেলেঙ্গি। অতীতে বিদেশ ঘুরতে আগ্রহী কেউই হয়তো এই গ্রামটিতে যাওয়ার কথা ভাবেনি। তবে গেল বছর থেকে রঙের বাহারে সেজে থাকা সেই গ্রামটিই এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

নিজেদের মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন নিজেদের গ্রামটি

নিজেদের মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন নিজেদের গ্রামটি

রঙ তুলিতে আঁকা বর্ণিল সাজে সেজে আছে ইন্দোনেশিয়ার এই গ্রামটি। আগে গ্রামের নাম কম্পুং পেলেঙ্গি হলেও বর্তমানে সারাবিশ্ব তাকে চিনে রেইনবো ভিলেজ বা রংধনু গ্রাম নামেই। এক সময় গ্রামটি ছিল বেশ জরাজীর্ণ এবং নোংরা। অনেকটা বস্তির মতো পরিবেশে বসবাস করত এই গ্রামের মানুষ। মলিন সেই গ্রামটি আজ হয়ে উঠেছে লাখো পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কারণ।

ইন্দোনেশিয়ার এই গ্রামটি যেন একটুরো স্বপ্নের জগত

ইন্দোনেশিয়ার এই গ্রামটি যেন একটুরো স্বপ্নের জগত

একটা সময় গ্রামটি খুব বিষণ্ণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। গ্রামবাসীরা ছিল বিপন্ন। আর্থিক অস্বচ্ছলতায় ভুগছিল সকলে। বিষণ্ণতা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করলেন সেই গ্রামের ৫৪ বছর বয়সী একজন শিক্ষক। নাম তার স্ল্যামেট উইডোডো। গ্রামটিকে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া সরকার। কিন্তু শিক্ষক নিজেদেরকে আরেকটি সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তার সেই একটি প্রচেষ্টায় বিবর্ণ এবং মলিন একটি গ্রাম হয়ে ওঠে বর্ণিল। শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্যোগ নেন পুরো গ্রামকে রঙ করার। গ্রামের শৈল্পিক মানুষদের এক জোট করে রঙ তুলি কিনে শুরু করে দেন পুরো গ্রাম রঙ তুলিতে আঁকা।

গ্রামটির আগের এবং পরের ছবি

গ্রামটির আগের এবং পরের ছবি

রাস্তাঘাট, ঘর বাড়ি, বাড়ির দেয়াল, ছাদ, সিঁড়ি সব কিছু ফুটে উঠে নতুন রঙের ছোঁয়ায়। এক মাসের মধ্যে রঙ করা হয়ে যায় পুরো গ্রাম। রঙ তুলিতে আঁকা হয় বেশ কিছু কার্টুন চরিত্রও। বদলে যায় গ্রামের পুরো নকশা। নকশার সঙ্গে বদলে যায় তাদের জীবন যাপন। রাস্তাঘাট সাজানো হয় রঙিন ছাতা দিয়ে।

দূর থেকে দেখতে মনে হবে যেন আকাশে নয় রংধনু উঠেছে মাটিতে

দূর থেকে দেখতে মনে হবে যেন আকাশে নয় রংধনু উঠেছে মাটিতে

দূর থেকে দেখতে রংধনুর মত রঙিন এই গ্রামটিকে তাই বলা হয় রংধনু গ্রাম বা রেইনবো ভিলেজ। গ্রামে বাড়ি রয়েছে প্রায় ২৩২টি। বিপন্ন গ্রামবাসী ফিরে পায় তাদের বাঁচার অস্তিত্ব। শুরু করেন নতুনভাবে জীবন যাপন।

বিভিন্ন নকশার পাশাপাশি রাস্তা সাজাতে ব্যবহার হয়েছে রঙিন ছাতা

বিভিন্ন নকশার পাশাপাশি রাস্তা সাজাতে ব্যবহার হয়েছে রঙিন ছাতা

এর পেছনের মূল কারণ পর্যটকদের আকর্ষণ। পর্যটকদের সমাগম প্রাণবন্ত করে তুলেছে গ্রামটিকে। প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে গ্রামের মানুষদের। ফলে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে। পর্যটকরা রঙিন দেয়ালগুলোর সঙ্গে ছবি তোলে। কিনে গ্রামবাসীদের নিজেদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। পর্যটকদের জন্য গ্রামের প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫০ সেন্ট বা ৪২-৪৩ টাকা।

নিজেরাই করেন কাজগুলো

নিজেরাই করেন কাজগুলো

টিকিটের সঙ্গে পর্যটকদের দেয়া হয় বিভিন্ন চাবির রিং বা নিজেদের হাতের তৈরি সামান্য কিছু উপহারও। এককালের উচ্ছেদপ্রায় গ্রামটি আজ বিশ্ববাসীর আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে।ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণে সেমারাং শহরের পার্শ্ববর্তী এই গ্রামটিকে সাজানো হয়েছে একেবারে মনের মাধুরি দিয়ে। এগুলো রঙিন রাখতে প্রতিবছর প্রায় ৩০ কোটি ইন্দোনেশিয়ান রুপি (২৩ লাখ টাকা) ব্যয় হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com