বিশ্বের উচ্চতম ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা। অনেক পর্যটক শুধুমাত্র দুবাই যান দৃষ্টিনন্দন ভবনটি দেখতে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের ৪ নম্বর টার্মিনালটিও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। সেই নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের হাতেই তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল (টার্মিনাল- ৩)।
টার্মিনাল ভবনে থাকবে স্ট্রেইট এস্কেলেটর, ব্যাগেজ বেল্ট, মুভি লাউঞ্জ, সেলফ চেক-ইনসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। শনিবার (৭ অক্টোবর) টার্মিনালটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে আংশিক উদ্বোধনের (সফট ওপেনিং) সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, লাগেজ হ্যান্ডলিং, লিফট ও এস্কেলেটরসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ ইন্সটল করা হয়ে গেছে। তবে, এগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। সফট ওপেনিংয়ের পর সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনসহ নানা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
ইতোমধ্যে আংশিক উদ্বোধনের (সফট ওপেনিং) সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, লাগেজ হ্যান্ডলিং, লিফট ও এস্কেলেটরসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ ইন্সটল করা হয়ে গেছে। তবে, এগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। সফট ওপেনিংয়ের পর সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনসহ নানা কার্যক্রম চলমান থাকবে
চোখ সরানো দায়
বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের স্থাপনা থেকে চোখ ফেরানো দায় বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন (উড়োজাহাজ পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে।
মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এ বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে থাকবে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এস্কেলেটর। যারা বিমানবন্দরের দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক ও বেশি যাত্রী প্রবাহের বিমানবন্দরগুলোতে এ ধরনের এস্কেলেটর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের শান্ত ও মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেয়।
নতুন এ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগের জন্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো অত্যাধুনিক তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া করা হয়েছে। এগুলো হলো- রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং ওড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ। যাত্রীদের স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের ১৬টি রেগুলার ব্যাগেজ বেল্ট থাকবে টার্মিনালটিতে। অতিরিক্ত ওজনের (ওড সাইজ) ব্যাগেজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আরও চারটি পৃথক বেল্ট।
মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এ বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে থাকবে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এস্কেলেটর। যারা বিমানবন্দরের দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক ও বেশি যাত্রী প্রবাহের বিমানবন্দরগুলোতে এ ধরনের এস্কেলেটর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের শান্ত ও মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেয়
টার্মিনালের প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে দৃষ্টিনন্দন বেবি কেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভেতর মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, ডায়াপার পরিবর্তনের জায়গা এবং একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম করা হয়েছে। এ ছাড়া, বাচ্চাদের স্লিপার-দোলনাসহ একটি চিলড্রেন প্লে এরিয়াও রাখা হয়েছে এখানে। ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে হেলথ ইন্সপেকশন রুম, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, করোনাসহ নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া।
অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন)। এগুলোতে পাসপোর্ট ও টিকিটের তথ্য প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে বোর্ডিং পাস ও সিট নম্বর। এরপর নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী তার লাগেজ রাখবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজগুলো উড়োজাহাজের নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। তবে, নির্ধারিত ৩০ কেজির বেশি ওজনের ব্যাগেজ নিয়ে এখানে চেক-ইন করা যাবে না। যাত্রীদের জন্য আরও ১০০টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে এ টার্মিনালে।
টার্মিনালের প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে দৃষ্টিনন্দন বেবি কেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভেতর মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, ডায়াপার পরিবর্তনের জায়গা এবং একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম করা হয়েছে। এ ছাড়া, বাচ্চাদের স্লিপার-দোলনাসহ একটি চিলড্রেন প্লে এরিয়াও রাখা হয়েছে এখানে। ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে হেলথ ইন্সপেকশন রুম, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, করোনাসহ নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হবে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন এ টার্মিনালের ফিচারগুলো অত্যাধুনিক। টার্মিনালটি যখন যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে, এর ডিজাইন ও সেবা দেখে তাদের মন আনন্দে ভরে উঠবে।’
টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। এ ছাড়া, টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল- ৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে ব্যয় সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।