পৃথিবীতে ভ্রমণ বিষয়ক অগণিত সিনেমা নির্মিত হয়েছে। যে সিনেমাগুলো দেখলে রোমাঞ্চের বাড়ন্ত জুতো পায়ে লেগে থাকবে আঠালো চুইংগামের মতো। যে সিনেমাগুলো দেখলে প্রতিকূলতা পাড়ি দেবার অবিচল দর্শন অজান্তে বাসা বাঁধবে মনের ভেতরে, মাথার ভেতর কিলবিল করবে ‘ভ্রমণ পোকা’; সেসব ‘ট্রাভেল সিনেমা’ নিয়ে প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয়েছিল এর আগে; আজ চলে এল এর দ্বিতীয় কিস্তি–
১. লাতালান্তে (১৯৩৪)
এ পর্বের শুরুতেই ফ্রেঞ্চ ‘লাতালান্তে’ ছবিটির নাম উঠে আসে। ঐতিহাসিক সিনেমা। সেলুলয়েডে শব্দ যোগ হবার পর যখন সর্বত্র থিয়েটার বা অপেরার চলচ্চিত্রায়নের ধারা চালু হয়, জাঁ ভিগোর ‘লাতালান্তে’ তখন সবাক সিনেমার মুক্তোর সন্ধান দেয়। সিনেমার ভাষা পুনরুদ্ধারে এ সিনেমা প্রধাণত সহায়ক ভুমিকা পালন করে। লাতালান্তে একটা জাহাজের নাম। সদ্য বিবাহিত ক্যাপ্টেন তার জীবনসঙ্গিনীকে নিয়ে নদীপথে প্যারিস ভ্রমণের প্ল্যান করে। সঙ্গে থাকে দু’জন কেবিন বয়। গল্প নানা কসরত করে এগিয়ে যায়।
২. বেকাস (২০১২)
তারপর তোলা যায় ‘বেকাস’ সিনেমার কথা। ইরাকের দুই এতিম ভাইয়ের গল্প। তারা সুপারম্যানের সিনেমা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা পাড়ি দেবার। সুপারম্যানের কাছে নালিশ তুলে সব সমস্যা দূর করার গহীন আশা। এমতাবস্থায় তাদের দরকার পড়ে অর্থ, পাসপোর্ট ও ট্রান্সপোর্টেশনের। কিন্তু এগুলো না থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে রাস্তায় নামে। তারা কি ‘মাইন’ সীমান্ত পার হতে পারে? দুই ভাইয়ের অসাধারণ অভিনয় আর কারজান কাদেরের নির্মাণ ছবিটিকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। পরিচালকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুর্দিস্তানে। তাই গল্প অনেক বেশি বাস্তবতার কাছাকাছি থাকে।
৩. ব্লু স্কাইস, গ্রীন ওয়াটার্স, রেড আর্থ (২০১৩)
সফর সিনেমা ধারায় এরপরে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ‘ব্লু স্কাইস, গ্রীন ওয়াটার্স, রেড আর্থ’। নামের মাঝেই যার মাহাত্ম্য খুঁজে পাওয়া যায়। দুটো শব্দযুগল ব্যবহার করলে অনেকেই এইটা দেখতে উৎসুক হয়ে উঠবে। তা হল– দুলকার সালমান ও মালায়লাম সিনেমা। হুম, এটা দুলকার সালমান অভিনীত মালায়লাম ভাষার সিনেমা। দুই বন্ধুর মোটরবাইকে করে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ‘রোড মুভি’। এটি মোটরসাইকেল ডায়রিজের কথা মনে করিয়ে দেয়। কাহিনীতে কিঞ্চিৎ তাড়াহুড়োর ছাপ থাকলেও ভ্রমণপিয়াসী দর্শকের তাতে এক রত্তি বাঁধবে না রোমাঞ্চের পসরা খুঁজে নিতে!
৪. ওয়াইল্ড (২০১৪)
এবার আসা যাক রিজ উইদারস্পুনের ‘ওয়াইল্ড’ চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে। নামে, গঠনে এবং নির্মাণে যেটা মাস্টারপিস ট্রাভেল ছবি ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ থেকে অনুপ্রাণিত। ‘ওয়াইল্ড’ও সত্য ঘটনার চিত্রিত রুপ। ট্রাভেল মুভির পাশাপাশি এটা বায়োগ্রাফিকাল ড্রামাটিক মুভিও। ‘ক্যারল স্ট্রেইড’ নামের লেখকের ভুমিকায় চমৎকার অভিনয় করেছেন রিজ উইদারস্পুন। যিনি কিনা অনিয়ন্ত্রিত জীবনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে প্যাসিফিক ক্রেস্ট ট্রেইলের এগারো শ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেবার পরিকল্পনা করে। হাইকিং উইদাউট এনি এক্সপেরিয়েন্স। বলাই বাহুল্য, হাইকিং ও ক্যাম্পিং সারা পৃথিবীতে এখন অনেক জনপ্রিয়। এটার পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের নাম জোরেশোরে শোনা যায়।
৫. জাঙ্গাল (২০১৭)
এই পর্বের একদম শেষে থাকছে ‘জাঙ্গাল’ সিনেমা কথন। উপরের চারটা থেকে কিছুটা আলাদা এটা। চার বন্ধু ট্রেকিংয়ে যায় বলিভিয়ার এক গহীন জঙ্গলে (আমাজনে)। উদ্দেশ্য হলো, বহু প্রাচীন রেড ইন্ডিয়ান ট্রাইব খুঁজে বের করা। কিন্তু আরাধ্য সে গ্রাম আদৌ খুঁজে পায় কি তারা? নাকি তাদের জীবন নিয়ে টানাটানি চলে অস্থিরতার রেশ ধরে? এটা অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা, যা পরিণতিতে রূপ নেয় সারভাইভালে। প্রধান চরিত্রে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন ‘হ্যারি পটার’ র্যাডক্লিফ। যারা রোমাঞ্চপ্রিয়, ‘জাঙ্গাল’ নির্ঘাত তাদের মনে জংলা দোলা দেবে!
তবে আর দেরি কীসের? দেখতে বসে যান সেরা কিছু ট্রাভেল সিনেমা।