বসবাসের জন্য নেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কোনো নজরকাড়া ব্যবস্থা। তবুও এক অদ্ভুত আকর্ষণে এই দ্বীপে ভিড় জমান পর্যটকরা। তার কারণ এখানে মানুষের চেয়ে বেশি বাস করে বিড়াল। আর তাই এই জায়গাটিকে অনেকে ‘ক্যাট আইল্যান্ড’ অথবা বিড়ালের দ্বীপ নামেই চিনে থাকেন। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ওশিকা উপদ্বীপের কাছে রয়েছে তাশিরোজিমা দ্বীপ। জাপানের এই দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়ালকে বেশি ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। শুধু পোষ্য নয়, তাশিরোজিমা দ্বীপের পথেঘাটে যে বিড়াল ঘুরে বেড়ায়, তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করেন সেই দ্বীপের বাসিন্দারা।
বিড়াল রাজত্বের শুরু যেভাবে
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬০৩ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত তাশিরোজিমা দ্বীপে বস্ত্রশিল্পের প্রচলন ছিল। ফলে এই দ্বীপে রেশমকীটের উৎপাদনও হতো বেশি। রেশমকীটের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে ইঁদুরের উপদ্রবও ছিল বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে রেশমকীট রক্ষা করতে দ্বীপের অধিবাসীরা তাদের বাড়িতে বিড়াল পুষতে শুরু করেন।
তবে একাংশের দাবি, বিড়ালের খাবার জোগান দেওয়ার জন্য মাছ ধরা শুরু করেন তাশিরোজিমা দ্বীপের অধিবাসীরা। বিড়ালের যত্ন করলে মানুষের জীবন সুখকর হয় বলেও মানতেন তারা। দ্বীপে বিড়ালের আদলে তৈরি মোট ৫১টি পাথরের মূর্তি রয়েছে।
২০১৫ সালে জনগণনা করে দেখা গেছে, তাশিরোজিমা দ্বীপে ৮০ জন মানুষ বাস করেন। অন্য দিকে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা ১৫০-এর কাছাকাছি। ১৯৫০ সালে তাশিরোজিমা দ্বীপে প্রায় এক হাজার জন বাস করতেন। তাদের অধিকাংশই পেশায় ছিলেন মৎস্যজীবী এবং ব্যবসায়ী। কিন্তু ২০১১ সালে এই দ্বীপে সুনামি আঘাত হানে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ আরও নানা কারণে অনেকে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।
অধিবাসীদের বেশির ভাগই বয়স্ক
পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাশিরোজিমা দ্বীপে যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এমনকি ৫০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এই দ্বীপে যারা বাস করেন তারা সাধারণত মাছ ধরেন অথবা পর্যটকদের আতিথেয়তার সঙ্গে যুক্ত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
২০১১ সালে তাশিরোজিমা দ্বীপে সুনামি আছড়ে পড়ায় এলাকার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। অধিকাংশের দাবি, সুনামির পর অধিবাসী থেকে শুরু করে প্রচুর বিড়াল দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়। জানা যায়, বহু বছর আগে তাশিরোজিমা দ্বীপে একটি বিড়ালের ওপর পাথর পড়ে যায়। সেখানেই মারা যায় বিড়ালটি। ঘটনাস্থলেই বিড়ালের মরদেহ চাপা দেন অধিবাসীরা। পরবর্তী সময়ে সেখানে মন্দির গড়ে তোলা হয়।
সুনামির পর ২০১৫ সালে তাশিরোজিমা দ্বীপের পুনর্নির্মাণ করা হয়। পরে দ্বীপের মধ্যে বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গাও তৈরি করা হয়। পর্যটকরা দ্বীপে ঘুরতে গেলে সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলোয় গিয়ে বিড়ালকে খাওয়ান। এই দ্বীপের বিড়ালের সুরক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে কুকুর পোষা এবং বাইরে থেকে কুকুর নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ২০১৩ সালে টুইটারে বিড়াল দ্বীপের প্রসঙ্গে ছবি ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটকের নজর কাড়ে এই দ্বীপ।
পর্যটকদের জন্য রয়েছে ব্যবস্থা
দ্বীপের মধ্যে দুটি গ্রাম আছে। একটি নিতোদা, অন্যটি ওদোদারি। একটির থেকে আরেকটির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত নিতোদা আকারে বড়। এখানে বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁ আছে। এদিকটায় প্রচুর বিড়ালও ঘুরে বেড়ায়। দ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থান ওদোমারির। এটি আকারে কিছুটা ছোট, রেস্তোরাঁও বেশি নেই। তবে যেহেতু গোটা দ্বীপেই বিড়ালের রাজত্ব, তাই এখানেও তাদের দেখা পেতে সমস্যা নেই। দ্বীপে ঘুরতে গেলে পর্যটকদের এখানকার রেস্তোরাঁ আর মোটেলগুলোর টাইম শিডিউল সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কারণ, পুরো বছর এগুলোর বেশির ভাগই খোলা থাকে না।
তবে জাপান ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, যেমন- যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতেও যথাক্রমে ১৫ থেকে ১৮টি এমন দ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেসব দ্বীপ অনেকটাই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে করা হলেও জাপানের এই বিড়াল দ্বীপ গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিকভাবে।