রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

যে জায়গা মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনের জন্য স্মৃতির আঙ্গীনায় জলজল করবে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

অনেকেই আছেন নতুন বিয়ে করেছেন অথচ সময় সুযোগের অভাবে এখনো দূরে কোথাও যাওয়া হয়নি। আবার কেউবা আছেন পুরো পরিবার নিয়ে ভ্রমণে যাবার জন্য লম্বা একটা ছুটির অপেক্ষায় থাকেন। তাঁদের সহ অন্যান্য ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য আসছে ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ইচ্ছে মতো ঘুরার জন্য, দেশের মাঝেই বেশ কিছু নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের সন্ধান দিয়েছেন লেখক।

আমাদের এই সুজলা-সুফলা, শ্যামল-সুন্দর বাংলাদেশেই রয়েছে অনেক অনেক সুন্দর জায়গা। এরকম অনেক অনেক সুন্দরতম আকর্ষনীয় জায়গার মধ্যে মাত্র আটটি জায়গার নাম দেওয়া হলঃ-

মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনের জন্য দেশের মধ্যে সর্ব প্রথম যে জায়গাটির কথা আসবে তার নাম হল কক্সবাজার।

দারুন এক পরিবেশ,মনোরম তার চার পাশ। তবে নতুন যুগল বন্দিরা এই সময়টা একটু বেশিই একান্তে কাটাতে চান, তাই তাদের জন্য পরিচিত জেলাগুলোর মধ্যে থেকে বেশ নিরিবিলি ও কোলাহল মুক্ত এবং নিরাপদ স্থানগুলো হল যথাক্রমেঃ- কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার মনোরম সমুদ্র সৈকত পাটুয়ারটেক, প্রেয়সির হাতে হাত রেখে গল্প আর খুনসুটি করার ছলে দৌড়ে বেড়ানোর মত চমৎকার এক সাদা বালির সৈকৎ। জোয়ারে মন মাতিয়ে তুলবে আর ভাটার সময় যত দূর চোখের দৃষ্টি যায়, শুধুই দেখা যাবে হাজারো লাখো ছড়িয়ে থাকা প্রবাল, জীবন্ত সেই প্রবাল পাথরে বসে শুভ্র ফেনা তোলা ঢেউয়ে পা’দুলিয়ে ভেজাতে ভেজাতে করে নিন, আগামি দিনের সাংসারিক পরিকল্পনা।

দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় চলে আসে সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। স্থানিয়রা নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডেকে থাকেন। কারণ সেখানে রয়েছে প্রচুর নারিকেল গাছ। জোছনা রাতে সেই গাছের নিচে বসে ঝির ঝির বাতাস আর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে – নব বধুর কোলে মাথা রেখে, নানান গল্পে মেতে থাকার মুহুর্তগুলো আজীবন স্মরনীয় হয়ে রবে।

তৃতীয় যে জায়গাটি মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনের জন্য স্মৃতির আঙ্গীনায় জলজল করবে, সেই দুর্নিবার আকর্ষনের বর্তমান সুপার হিট পর্যটন স্পট – ঢেউ খেলানো পাহাড়ের গায়ে গড়ে তোলা সাজেক ভ্যালি, ওয়াও! সাজেক। যাদের কিছুদিন হল বাহু বন্ধনে আবদ্ব হয়েছেন, কিন্তু ঠিক করেন নাই কোথায় যাবেন মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনে, তারা আর অন্য কোথাও চিন্তা না করে ছুটে যান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ী উপজেলার সাজেক ভ্যালি, সাজেকের বর্ণনা আমি না হয় নাই দিলাম।আপনি নিজে গিয়েই দেখুন না সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মিজোরাম পাহাড় থেকে জেগে উঠা সূর্যদোয়!

চতুর্থতমঃ-মৌলভী বাজার জেলার চা পাতার দেশ শ্রীমঙ্গল। চা বাগানের মাঝে কোন রিজোর্টের ব্যলকানিতে কিংবা খোলা প্রান্তরে দুজন দুজনার হয়ে যাবার জন্য রয়েছে বেশ সুযোগ, আরো রয়েছে নীল পদ্ম ফোটা প্রকৃতির অপার নিয়ামত মাধাবপুর লেক। যেখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেয়সির সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিন সময় নিশ্চিন্তে।

পঞ্চম স্থান হল ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনঃ- কোলাহল থেকে অনেক দূরে হিরণ পয়েন্টে। মধুচন্দ্রীমা উৎযাপনের সময়গুলোতে মন চাইবে না আর ফিরে আসি শব্দ দূষনের ঘিঞ্চি শহরে। দিনের আলোতে ঘুরে বেড়াবেন কেওড়া শুঠি আর পূর্ণিমার আলোতে রেষ্ট হাউসের – বারান্দাতে মজার মজার সব গল্প বলে।

ছষ্ঠস্থান হল:- ঝুম ঝুম নিঝুম দ্বীপ, কেওড়া ও গোল পাতার ছায়ায় নব বধুকে আলিঙ্গন করে রাখুন সারাক্ষণ। বনের হরিণও আপনাদের দুজনের আনন্দ ঘন মূহুতের্, ছন্দপতনে ভূমিকা রাখবেনা। শুধুই হবেন দুজন দুজনার। আর এমন পারিবেশেই গড়ে তোলা যায় ভবিষ্যৎ সংসারের ভিক্তি।

সপ্তম স্থান হল রাঙ্গামাটি জেলার গহীনের সৌন্দর্য বড় হরিনা ঃ- আজকাল অনেক দম্পতি আছেন যারা ব্যক্তি জীবনে এ্যাডভ্যাঞ্চার ট্রাভেল করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বড় হরিনা একের মাঝে দুই, মেঘ যেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে অলস সময় কাটায়! ভাবুন’ত একবার, ওমন জায়গায় মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চের মাত্রাটা কেমন হতে পারে?

অষ্টম স্থান হল বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার প্রকৃতির স্বর্গ তিন্দু ঃ– তিন্দুর উপমা শুধু তিন্দুই। পাহাড়ি খর ¯্রােতা নদী শঙ্খর সচ্ছ জলে, রাত শেষে যখন কাকডাকা ভোরে ডুব দিবেন – তখন মনে হবে মধুচন্দ্রিমায় তিন্দু আসায়, দুজনের বন্ধন যেন হয়ে গেল চির অটুট।
উপরোক্ত স্থান গুলো স্বম্পর্কে বিস্তারিত জানতে,নেটে সার্চ দিলে, মিলে যাবে সব আকর্ষনিয় তথ্য।তাহলে নব্য দম্পতিরা ছুটে যান,অবারিত প্রকৃতির মায়া ঘেরা সেই সব জায়গায় – ভালবাসার বন্ধন অটুট আর সময়ের দাবি – মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনে।

যোগাযোগ ও থাকা-খাওয়াঃ-

নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে সড়ক ও নৌ পথে হবে,তবে নৌ পথে বেশ নিরাপদ। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজ ছেড়ে যায় নোয়াখালির হাতিয়া, সেখানে থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ। থাকা খাওয়ার জন্য থাকুন নিশ্চিন্ত। যাবার আগে যোগাযোগ করে যাবেন নিউ ইস্কাটনে অবস্থিত অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে।

বান্দরবান:- ঢাকা থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন পরিবহনের এসি/ নন এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। বান্দরবানের শহর থেকে লোকাল বাস/জিপে থানচি। থানচি বাজার হতে ট্রলারে তিন্দু। থাকা খাওয়ার জন্য কটেজ রয়েছে। ভাড়া সহনিয়।

বড় হরিনা :- ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিজার্ভ বাজার হতে জাহাজে বড় হরিনা। থাকা খাওয়া আদিবাসিদের ভাড়া দেয়া ঘরে। পাহাড় ঘেরা ছোট্ট ঘরে মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চ হয়ে উঠবে ষোল কলায় পূর্ণ।

সুন্দরবন: ঢাকা থেকে মঙ্গলা, বন বিভাগের অনুমতি গিয়ে জালি বোটে হিরণ পয়েন্টে, যাবার আগে অবশ্যই বন বিভাগ হতে অনুমতি নিয়ে যাবেন।

সাজেক ভ্যালি ঃ-ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা।সেখান থেকে জীপে / মটর বাইকে অপরুপ সাজে সাজানো সাজেক ভ্যালি।থাকা-খাওয়ার জন্য নেটে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন পূর্ণাঙ্গ তথ্য।

সেন্ট মার্টীনঃ– ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ, বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভীস রয়েছে।টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ে সপ্নের আঙ্গীনা, কোড়াল দ্বীপ সেন্টমার্টীন চলে যান। থাকবেন রিসোর্ট সহ বেশ কিছু উচুঁমানের হোটেল-মোটেল রয়েছে সেখানে।চাইলেই কটেজের রাধুণি শিল্পীদের দিয়ে, নানান পদের সামুদ্রিক মাছ রান্না করিয়ে, স্বাদ নিতে পারবেন।
শৃীমঙ্গলঃ-বাস ও ট্রেন দুটোই চলাচল করে।তবে ট্রেনে চড়ে চায়ের দেশ শৃীমঙ্গলে যাবার অনুভূতিই হবে অন্যরকম। থাকবেন-খাবেন, লাউয়াছড়া বনের পাশে গড়ে উঠা আনন্দবাড়ি সহ বেশ কিছু কটেজে।তবে যেখানেই থাকুন কেন হাসের গোস্তের ঝাল ঝোল দিয়ে-চিতই পিঠা আর নীল কন্ঠের সাত রঙ্গের চা পান করতে ভুল যেন না হয়। উল্লেখ্য শুধু মাত্র ছোট হরিনা ছাড়া আর সবকটা জায়গাতেই পরিবারের সব বয়সের সবাইকে নিয়েই ঘুরতে যাওয়া যাবে।

খরচাতিঃ-

দশটি জায়গার মধ্যে- চারটি বাদ দিলে বাকি ছয়টি জায়গায়, এক সপ্তাহ মধুচন্দ্রিমায় খরচ হবে পনের হতে বিশ হাজার টাকা মাত্র।কক্সবাজার,সেন্টমার্টীন,সাজেক ও শৃী-মঙ্গল এই চারটি জায়গায় খরচের লাগাম নিজেকেই টানতে হবে।এক সপ্তাহ মোটা মুটি ভাবে কাটাতে চাইলেও নুন্যতম পঞ্চাশ থেকে এক লাখ টাকা খরচ হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com