ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যার মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে অটোয়া। তবে তা নাকচ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়,ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধরের ভারসিংপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হরদীপ সিং। ১৯৯৭ সালে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। পরে দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করেন ৪৫ বছর বয়সী শিখ নেতা।গত ১৮ জুন দেশটিতে এক শিখ মন্দিরের বাইরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
কানাডায় মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করেন হরদীপ সিং। পরে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে শিখ নেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পান তিনি। ২০২০ সালে তাকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে ভারত সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল হরদীপ সিংয়ের।খালিস্তানের হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালায় গোষ্ঠীটি।
শিখদের ‘খালিস্তান আন্দোলনের’ সঙ্গে জড়িত হরদীপ সিং। এর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন তিনি। কয়েক দশক ধরে এই আন্দোলন চলছে। যার উদ্দেশ্য, শিখদের জন্য ভারতের পাঞ্জাবে ‘খালিস্তান’ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কেন?
ভারতে ব্যাপক সংখ্যক শিখ ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন। এছাড়া কানাডায় ৭ লাখ ৮০ হাজার, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৫ লাখ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ২ লাখ শিখ বাস করেন।
আন্দোলন দমাতে মাঠে নামে ভারতের সামরিক বাহিনী। বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তারা। এতে বিক্ষোভ থমকে যায়।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের অধ্যাপক শ্রুতি কাপিলা বলেন, খালিস্তান আন্দোলন থেকে সরে গেছে আধুনিক পাঞ্জাবের রাজনীতি।এখন স্বাধীন রাষ্ট্র বেশিরভাগ শিখের দাবি নয়।
এরই মধ্যে খালিস্তান নিয়ে চলা উত্তেজনা ভারতের ইতিহাসে বিতর্কিত দুই ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে পাঞ্জাবে শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দিরে অভিযান এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা।
১৯৮৪ সালের জুনে ইন্দিরার নির্দেশে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালায় সামরিক বাহিনী। তাতে সেখানে অবস্থানকারী সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উৎখাত করা হয়। সেসময় অসংখ্য শিখ নিহত হন।
ওই অভিযানের কয়েক মাস পর দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে খুন হন ইন্দিরা। এর জেরে টানা ৪ দিন দাঙ্গা চলে। এতে অজস্র শিখ মারা যান।