নেপালের বিমানবন্দরগুলো ভৌগলিক কারণেই যেন ঝুঁকিপূর্ণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নেপালে হেলিকপ্টার বা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩২৭ জন মারা যান। কারণ দেশটির বিমানবন্দরগুলো সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গায় অবস্থিত। এগুলো পাহাড়ের কোলে হওয়ায় অবতরণ খুব বিপজ্জনক।
নেপাল স্থলবেষ্টিত দেশ, চারপাশে পাহাড়-পর্বত। নেপালে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানকার অভ্যন্তরীণ কিছু বিমানবন্দর আছে; যেগুলো খুবই বিপজ্জনক। যেখানে প্লেন উড্ডয়ন কিংবা অবতরণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ত্রিভুবন
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৪ জুলাই উড্ডয়নের সময় একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে উড়োজাহাজের ১৯ আরোহীর মধ্যে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। বিমানবন্দরটি তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার পর উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। রক্ষণাবেক্ষণ-সংক্রান্ত কাজের জন্য তাদের নেপালের পোখারা শহরে যাওয়ার কথা ছিল।
পোখারা
নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরের তালিকায় আছে পোখারা। ১৯৫৮ সালে তৈরি হয় বিমানবন্দরটি। এখান থেকে কাঠমান্ডু ও জমসমে নিয়মিত বিমান চলাচল করে। পাহাড়ের কোলে এই বিমানবন্দর। রানওয়ে ছোট। ফলে পোখারায় দুর্ঘটনা ঘটে। ২০০২ সালের ২২ আগস্ট সাংগ্রী এয়ারের বিমান জমসম থেকে পোখারা যাওয়ার পথে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়েছিল। তিনজন ক্রু ও ১৫ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি খারাপ আবহাওয়ার কারণে নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান পোখারা থেকে জুমলা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে ভেঙে পড়েছিল। ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল সে ঘটনায়।
লুকলা
বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর বলা হয় লুকলাকে। এ বিমানবন্দর তেনজিং হিলারি এয়ারপোর্ট নামেও পরিচিত। এটি এভারেস্টের খুব কাছে। এটি জনপ্রিয় কারণ এখান থেকেই এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছানো যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ৩৩৪ ফুট উঁচুতে আছে বিমানবন্দরটি। রানওয়েটির দৈর্ঘ ১ হাজার ৭২৯ ফুট, প্রস্থ ৯৮ ফুট। রানওয়ের চারপাশে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীর খাদ।
সিমিকোট
নেপালের আরও একটি বিপজ্জনক বিমানবন্দর সিমিকোট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ২৪৬ ফুট উঁচুতে এ বিমানবন্দর। কার্নালি প্রদেশের হুমলা জেলায় এটি। এর রানওয়ের দৈর্ঘ ১ হাজার ৮০১ ফুট। বিমানবন্দরটি ন্যাশনাল রোড নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। পশ্চিম নেপালের ডোলপায় যাওয়ার জন্য এ বিমানবন্দর প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। নেপাল থেকে কৈলাস ও মানস সরোবরে যাওয়ার মূল প্রবেশদ্বার এটি।
মুগু বা তালচা
নেপালের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর তালচা। এটি মুগু বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৯৭৩ ফুট উঁচুতে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। এখানে বছরের বেশিরভাগ সময়ই বরফ পড়ে। এ কারণে রানওয়ে অনেকটা পিচ্ছিল থাকে। তাছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০১০ সালের ২৬ মে তারা এয়ারের ডিএইচসি ৬ টুইন অটার বীরেন্দ্রনগর বিমানবন্দর থেকে ক্রুসহ ২১ জন যাত্রীকে নিয়ে তালচাতে আসার সময় ওড়ার ৫ মিনিটের মধ্যে কেবিনের দরজা খুলে যায়। বিমানটি বীরেন্দ্রনগরে জরুরি অবতরণ করা হয়। ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর সুরখেত বিমানবন্দর থেকে তালচাতে নামার সময় রানওয়েতে বিমানের চাকা পিছলে গিয়েছিল। এতে ১১ জন আহত হন।
জমসম বা মুস্তাং
নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরের মধ্যে আরেকটি হলো জমসম। এটি মুস্তাং নামেও পরিচিত। মুস্তাং জেলার প্রবেশদ্বার এ বিমানবন্দর। যে পথে জমসম, কাগবেনি, তাংওয়ে, লো মাংথাং এবং মুক্তিনাথ মন্দিরের মতো দর্শনীয় স্থান আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৯৭৬ ফুট উঁচুতে এ বিমানবন্দর। খুব জোরে বাতাস বইলে, খারাপ আবহাওয়া থাকলে এ বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়। সকালের দিকে প্রচণ্ড জোরে বাতাস হয়। তখন কুয়াশার কারণে রানওয়ে ঠিকমতো দেখাও যায় না।