প্রবাসীদের অনলাইনভিত্তিক বৈশ্বিক সমাজ ইন্টারনেশনস-এর এক্সপ্যাট ইনসাইডার জরিপ বলছে, কাজ, কাজের সুযোগ এবং কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য নিয়ে সবচেয়ে তুষ্ট ডেনমার্ক প্রবাসীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাড়ে ১২ হাজারের বেশি প্রবাসী এই জরিপে অংশ নেন। কর্মস্থলের সংস্কৃতি, কর্মস্থলসংক্রান্ত নিরাপত্তা, কাজ করে সন্তুষ্টি, ক্যারিয়ারের প্রত্যাশা, রোজগার, কর্মঘণ্টা এবং অবসর—এসব বিষয় উঠে এসেছে এই জরিপে। কর্মস্থলের সংস্কৃতি ও কাজের সন্তুষ্টি এবং কাজ ও অবসরের ভারসাম্যের প্রশ্নে ডেনমার্কই সেরা।
ডেনমার্কের প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রবাসী কর্মঘণ্টা এবং অবসরের ভারসাম্য নিয়ে তুষ্ট, পুরো বিশ্বে যে হার ৬০ শতাংশ। ডেনমার্কের প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রবাসী তাঁদের কর্মঘণ্টা নিয়েও সুখী। গড়ে সপ্তাহে ৩৯ ঘণ্টা ১২ মিনিট কাজ করতে হয় সেখানে, বৈশ্বিক গড় সাড়ে ৪২ ঘণ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা ইলানা বুল বেছে নিয়েছেন প্রবাসজীবন। এখন আছেন ডেনমার্কের রাজধানী শহর কোপেনহেগেনে। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত তাঁর কর্মজীবনে অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেখানে কর্মঘণ্টা কম। কাজ এবং ব্যক্তিজীবনের সীমাটা খুব পরিষ্কার। অবসর সময়ে নিজের মতো করে সময় কাটাতে কোনো বাধা নেই। বেতনও বেশি, আবার জীবনযাত্রার ব্যয়ও টেক্সাসের চেয়ে কম। বেতনসহ পাঁচ সপ্তাহ ছুটি কাটানোর সুযোগও আছে ডেনমার্কে। মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়টাও পর্যাপ্ত। কাজের বাইরেও নানাবিধ সুবিধা আছে। সেখানে তিনি চমৎকার গণপরিবহনব্যবস্থা পেয়েছেন। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সুবিধাও দারুণ। সন্তানের জন্য কম খরচে ভালো ডে কেয়ার সেবাও পেয়েছেন। এত সব সুযোগ-সুবিধার বিবরণ থেকেই বোঝা যায়, কেন ডেনমার্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় স্থান পায় সব সময়।
১. ডেনমার্ক
২. সৌদি আরব
৩. বেলজিয়াম
৪. নেদারল্যান্ডস
৫. লুক্সেমবার্গ
৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত
৭. অস্ট্রেলিয়া
৮. মেক্সিকো
৯. ইন্দোনেশিয়া
১০. অস্ট্রিয়া
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরবের প্রবাসীদের ৭৫ শতাংশ বলছেন, সৌদি আরবে এসে তাঁদের ক্যারিয়ারের উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে ক্যারিয়ার নিয়ে প্রত্যাশা। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে মাত্র ৫৬ শতাংশ প্রবাসী নিজেদের প্রবাসজীবন নিয়ে এমনটা মনে করেন। সদ্য যাঁরা সৌদিপ্রবাসী হয়েছেন, তাঁদের ৬৩ শতাংশই স্থানীয় অর্থনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে সৌদি আরবের নেতিবাচক দিক হলো, সেখানে একটি পূর্ণকালীন কাজের জন্য গড়ে সপ্তাহের ৪৭ ঘণ্টা ৪৮ মিনিটই বরাদ্দ রাখতে হয়।
তালিকায় বেলজিয়ামের অবস্থান তৃতীয়। সেখানে কর্মনিরাপত্তা, স্থানীয় কাজের বাজার এবং নিজেদের ক্যারিয়ারের সুযোগ নিয়ে প্রবাসীরা দারুণ সন্তুষ্ট। কর্মস্থলে নেই বাড়াবাড়ি রকমের কঠোর নিয়মকানুন। এখানকার প্রবাসীদের ৬৮ শতাংশ বলছেন, তাঁরা কর্মস্থলে না গিয়েই কাজ করতে পারেন। বৈশ্বিক গড় কর্মঘণ্টার চেয়ে কর্মঘণ্টা কম এখানে, সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট।
তবে সব দিক বিবেচনায় প্রবাসীদের কাছে সেরা দেশ কোনটি, জানেন? ইন্টারনেশনস-এর আরেক জরিপে সেই ‘সেরা’র তকমাটা পেয়েছে পানামা! জীবন এবং অর্থনীতির বৃহত্তর বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেই জরিপে। প্রবাসীদের জীবনের গুণগত মান, নতুন দেশে সহজে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ, কর্মস্থলের বাইরে থেকে কাজ করার সুবিধা এবং ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও একটি বিশেষ সূচক বিবেচনায় রাখা হয়েছে এই জরিপে। বিশেষ সূচকটি আবাসন, প্রশাসন, ভাষা এবং ডিজিটাল জীবনকে প্রতীয়মান করে তোলে।