বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

যেভাবে পর্যটনে এগিয়েছে মালদ্বীপ

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২
বিমানবন্দরের কাছেই ঘাটে অপেক্ষায় বেশ কিছু নৌযান; পর্যটকদের নিয়ে তারা ছুটবে ছোট ছোট দ্বীপগুলোর উদ্দেশে। পর্যটকদের নামিয়ে দিতে এসেছে কয়েকটা; ওয়াটার বাস আর ফেরিও চলছে।
গত তিন দশকে মৎস্যজীবী পরিচয় ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন গন্তব্য এখন মালদ্বীপ। পর্যটকদের মূল আকর্ষণ এখানে ‘এক দ্বীপ, এক রিসোর্ট’ নীতিতে পরিচালিত রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলো।

দ্বীপরাষ্ট্রটির ভ্যালেনা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামার পর দেখা গেল নৌকার পাশাপাশি সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ট্যাক্সিগুলো। ভাড়া নির্ধারিত, তাই কোনো হাঁক-ডাক নেই।

হোটেল, রাস্তা, সাগর সৈকত- চারদিক ঝকঝকে, চককচকে। সাগরতীরে বেঞ্চ, দোলনা, ঝুলন্ত বিছানা আছে। সৈকতে বেড়ানার সময় চাইলেই একটু জিড়িয়ে নিতে পারেন পর্যটকরা।

মালদ্বীপের বাংলাদেশ মিশনের অবস্থান রাজধানী মালে সংলগ্ন হুলহুমাল এলাকায়। সেখানে বিলাসবহুল কোনো রিসোর্ট নেই। তবে সাগরতীর আর রাস্তার পাশে ছোট ছোট হোটেল আর ক্যাফের ছড়াছড়ি।

এসবের মাঝেই সাগরতীরে পৌনে দুই কাঠা প্লটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি চারতলা হোটেল। কক্ষগুলো বেশ ছোট হলেও প্রতিরাতে সেখানে থাকতে হলে গুণতে হয় ৭০ থেকে ১০০ মার্কিন ডলার।

হোটেলটির ব্যবস্থাপনায় থাকা বাংলাদেশি তরুণ মো. নাহিদ জানালেন, মালে এবং এর আশপাশে জায়গার দাম বেশি।ছোট্ট হোটেলটুকুর দাম ১৮ মিলিয়ন রুফিয়া, অর্থাৎ টাকার অঙ্কে নয় কোটি।

তিনি বললেন, “আইল্যান্ড রিসোর্টে যাওয়ার আগে অনেক টুরিস্ট এসব হোটেলে দুয়েকরাত কাটিয়ে যান। বেশি বিনিয়োগ, ট্যাক্স, পরিচালন ব্যয় সবকিছু মিলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়াই নিতে হয়।”

মালদ্বীপে বেড়াতে খরচের বহরটা বড় হলেও ছোট্ট এই ভূখণ্ডেই প্রতি বছর ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু কয়েক লাখ মানুষ। ২০১৯ সালে মালদ্বীপকে সেরা পর্যটন গন্তব্য হিসেবেও স্বীকৃতি দেয় বিশ্ব পর্যটন সংস্থা।

মালদ্বীপ ট্যুরিজম বোর্ড প্রকাশিত ‘ট্যুরিজম ইয়ারবুক ২০২১’ এর হিসাবে, ১৯৭২ সালে মালদ্বীপে পর্যটকদের জন্য হোটেলগুলোতে মাত্র ২৮০টি শয্যা ছিল। ২০২০ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৮২৭টিতে।

২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল, গেস্টহাউজ এবং সাফারি নৌযানে এসব থাকার জায়গার ৬২ শতাংশই ভাড়া হয়েছে। তবে মহামারীর কারণে ২০২০ সালে তা ২৫ শতাংশে নেমে আসে।

এখানে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই ইউরোপীয়। ২০২০ সালে ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যটক এসেছেন ইউরোপ থেকে। এশিয়া-প্যাসিফিক থেকে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

মালে এবং হুলহুমালে এলাকায় দেখা গেল বেশিরভাগ বাড়ি তিনতলা। আশপাশে কোনো আবর্জনা নেই। বাসিন্দারা রাস্তার ওপর নির্ধারিত স্থানে গাড়ি এবং মোটরসাইকেল রেখেছেন।

প্রতিটি আবাসিক এলাকার সঙ্গে রয়েছে একটি করে পার্ক কিংবা শিশুদের খেলার জায়গা। নগরে চলাচলের জন্য আছে বাস ও ফেরি।

মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান মনে করেন, পর্যটনে মালদ্বীপের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।

গত ৫ ডিসেম্বর মালের বাংলাদেশ মিশনে তিনি সাংবাকিদের বলেন, মালদ্বীপের মোট বিদেশি মুদ্রার ৭০ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। এখানে পর্যটনের মূল আকর্ষণ হল রিসোর্ট আইল্যান্ড।

“একটি দ্বীপ একটি রিসোর্ট- তারা এই নীতিতেই চলে। এখানকার আইল্যান্ড রিসোর্টগুলোতে সেই কোম্পানির নিজস্ব নিয়ম চলে।মালদ্বীপের সরকারের কাছ থেকে ওই শর্তেই তারা দ্বীপ লিজ নিয়ে রিসোর্ট করেছে। তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় মালদ্বীপ সরকার বা সরকারের কোনো উপাদান কখনোই হস্তক্ষেপ করে না।”

ছোট ছোট প্রায় ১২শ দ্বীপ নিয়ে স্থলভাগে ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত মালদ্বীপ। সাগরের জলভাগসহ এই দ্বীপ রাষ্ট্রিটির মোট আয়তন ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।

ট্যুরিজম ইয়ারবুকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ১ হাজার ১৯২ দ্বীপের মধ্যে মাত্র ১৮৭টিতে বসতি রয়েছে, বসতিহীন ৮৬০টি। এর মধ্যে রিসোর্ট রয়েছে ১৫৯টিতে।

রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলোতে মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো কাজ করে জানিয়ে হাই কমিশনার নাজমুল হাসান বলেন, “বিশ্বসেরা প্রায় সব হোটেল-রিসোর্ট ব্র্যান্ডই এখানে আছে। মাঝে মাঝে কর্মকর্তারা সেখানে সারপ্রাইজ ভিজিটে যান। অনিয়ম পেলে প্রথমে সতর্ক করা হয়, পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটাই মালদ্বীপের পর্যটন শিল্প বিকাশের মূল কারণ।”

তিনি বলেন, “এখানকার পর্যটন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে আমাদের পর্যটনও উন্নত হবে।”

ট্যুরিজম ইয়ারবুকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মালদ্বীপ সরকারের আয় ছিল ১৮ হাজার ৫৭৮ রুফিয়া (এক রুফিয়ায় ৫ টাকা ৫৫ পয়সা)। যেখানে পর্যটনের অবদান ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

মহামারীর আগে ২০১৯ সালে আয় দাঁড়ায় ২১ হাজার ১৬১ মিলিয়ন রুফিয়া। এর মধ্যে সরাসরি পর্যটন থেকে আয় ছিল ৭ হাজার ৭০৮ মিলিয়ন রুফিয়া বা ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর সাইফুল ইসলাম ১৯৮৪ সালে মালদ্বীপে আসেন শিক্ষক হিসেবে।

ঢাকার ছেলে সাইফুল বলেন, “এদের শৃঙ্খলা খুবই চমৎকার। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে হোটেল, ক্যাফে এসবের মান নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি চাইলেই তাদের প্রভাবিত করতে পারবেন না। তাছাড়া রাস্তায় চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য সবক্ষেত্রেই এখানে নিয়ম ও শৃঙ্খলা মানা হয়।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল শুরু করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। শিগগিরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও মালদ্বীপে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com