বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ড্রাগ লর্ড অর্থাৎ মাদক কারবারিরা তাদের টাকা দিয়ে কী করেন বা করতেন? তাদের যেহেতু অর্থের লেখাজোখা নেই তাই অনেকের মনেই এ নিয়ে কৌতূহল থাকতে পারে। ‘সানডে রোস্ট’ অনলাইন তুলে ধরেছে এর কৌতূহলকর বিবরণ। কালের কণ্ঠ’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ড্রাগ লর্ডদের বিচিত্র খেয়ালের কথা।
আমাদো কারিলো ফুয়েন্তেস
তিনি ছিলেন মেক্সিকোর এক দুর্ধর্ষ ড্রাগ লর্ড। সরদার রাফায়েল আগুলিয়ার গুয়াজার্দোকে খুন করে তিনি হুয়ারেজ কার্টেলের ক্ষমতা দখল করেন। ফুয়েন্তেসের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ২৭টি জেট বিমান ছিল। এর মধ্যে ছিল একঝাঁক বোয়িং ৭২৭ বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে কোকেন পরিবহন করতে এগুলো কাজে লাগানো হতো।
মৃত্যুর সময় ফুয়েন্তেসের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। মাদক পরিবহনে বিমানের বহর থাকায় তাকে ডাকা হতো ‘দ্য লর্ড অব দ্য স্কাইজ’ (আকাশের প্রভু) নামে।
ইসমায়েল এল মায়ো জাম্বাদা
ইনিও মেক্সিকোর। সিনালোয়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র সিনালোয়া কার্টেলের পালের গোদা ছিলেন। ঘুষ হিসেবে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতেন তিনি। ডেয়ারি ব্যবসাসহ বিভিন্ন পন্থায় কালো টাকা সাদা করতেন তিনি।
মানুয়েল নরিয়েগা
ড্রাগ লর্ডে পরিণত হওয়ার আগে মানুয়েল আন্তোনিও নরিয়েগা মোরেনো ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা। পরে দেশের শীর্ষ ক্ষমতায় পর্যন্ত অধিষ্ঠিত হন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পানামার সর্বময় কর্তা ছিলেন। পঞ্চাশের দশক থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও সম্পর্কের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র পানামা আক্রমণ করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
তিনি ১৯৫০-এর শুরুতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কাজ শুরু করেন এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক অমূল্য সদস্য হয়ে ওঠেন। লাতিন আমেরিকাজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিভিন্ন বাহিনীর কাছে বেআইনি অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও নগদ অর্থ পাচারের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
গ্রিসেল্ডা ব্ল্যাংকো
ব্ল্যাক উইডো নামে পরিচিত গ্রিসেল্ডা ব্ল্যাংকো ক্ষমতাবান নারীদের পছন্দ করতেন। ‘কোকেন গডমাদার’ নামে কুখ্যাতি ছিল তার। মাদকচক্র মেডেলিন কার্টেলের সঙ্গে তার সংযোগ ছিল। বিশিষ্ট নারীদের ব্যবহৃত সামগ্রী সংগ্রহে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতেন। ব্ল্যাংকোর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের মধ্যে ছিল ইভা পেরনের মুক্তা ও একদা ইংল্যান্ডের রানির ব্যবহৃত চায়ের পাত্র।
পাবলো এমিলিও এসকোবার গাভিরিয়া
কলাম্বিয়ার মাদক কারবারি এসকোবার ছিলেন মেডেলিন কার্টেলের প্রতিষ্ঠাতা তথা নেতা। ছয় কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয়ে সাত হাজার একর জমিতে একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন এসকোবার। এতে ছিল চিড়িয়াখানা, ফুটবল মাঠ, ষাঁড়ের লড়াইয়ের জায়গা, এমনকি ছোট বিমানঘাঁটি। তার মালিকানায় ছিল ১৪২টি বিমান, ২০টি হেলিকপ্টার, ৩২টি প্রমোদতরি ও দুটি ডুবোজাহাজের বহর।
এল চ্যাপো
মেক্সিকোর ড্রাগ লর্ড ও সিনালোয়া কার্টেলের প্রাক্তন হোতা। কোনো রেস্তোরায়ঁ খেতে গেলে তিনি পুরো রেস্তোরাঁ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতেন। দলবল নিয়ে রেস্তোরাঁয় গিয়ে ভদ্রভাবে তিনি সেখানে খেতে আসা লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার ফোন নিয়ে নিতেন। তার খাওয়া শেষ হওয়ার আগে কেউ রেস্তোরাঁ থেকে বের হতে পারত না। এল চ্যাপো তার খাওয়া শেষে বের হওয়ার আগে সবার বিল মিটিয়ে দিতেন। ফিরিয়ে দিতেন ফোনও।
লিরয় নিকোলাস বার্নস
সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের অপরাধ জগতের অন্যতম নাম। একই সঙ্গে ছিলেন একজন ড্রাগ লর্ড। সত্তরের দশকে হারলেমে হেরোইন ব্যবসার ওপর ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। ফিটফাট বেশভূষার দিকে প্রবল ঝোঁক ছিল তার। ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য পোজ দেন তিনি। কারণ পুলিশের তোলা ‘মাগশট’ পত্রিকায় ছাপা হবে, তা তার কাছে আপত্তিকর ছিল। অবশ্য এতে প্রেসিডেন্ট কার্টার ক্ষুব্ধ হন এবং বার্নসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পোশাকের দাম ছিল কয়েক মিলিয়ন ডলার। তার সংগ্রহে ছিল ২০০ স্যুট, ফরমায়েশ দিয়ে তৈরি ১০০ জোড়া জুতা এবং ৫০টি লেদার কোট।