শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন

যেখানে সবাই মেলায় জীবনসঙ্গী খোঁজে, বিয়ের আগেই মা হয় মেয়েরা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার অনেক উপায় আছে। কেউ দীর্ঘদিনের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে বিয়ে করেন। কেউ আবার পরিবারের পছন্দে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেন। তবে অনেক দেশে বা জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার নানান রীতি প্রচলিত আছে।

বিশেষ করে মেলায় জীবন সঙ্গী খোঁজা। অর্থাৎ বছরে বা মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় এমন মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে বিয়ের উপযুক্ত ছেলেমেয়েরা জীবনসঙ্গী খুঁজে নেন। ভারতের রাজস্থান এবং গুজরাটের গরাসিয়া জাতিগোষ্ঠীর কথা জানেন কি।

এই জাতিগোষ্ঠীতে পুরুষ এবং নারীরা বিয়ে ছাড়াই একসঙ্গে বাস করেন এবং নারীরা বিয়ের আগে মা হয়ে যান। নারীদের নিজের পছন্দের ছেলেকে নির্বাচন করার অধিকার থাকে, যা এই জাতিগোষ্ঠীকে দারুণ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। যদিও এদের কর্মকাণ্ড একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বাঙালি হিসেবে আমাদের হজম হবে না। তবে এটিও তাদের রীতি বা প্রচলিত সংস্কৃতি।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এই জাতির অদ্ভুত এসব সংস্কৃতি সম্পর্কে-

রাজস্থানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যের আদিবাসী গারাসিয়া উপজাতির সদস্যরা অনাদিকাল থেকে বিবাহের বাইরে লিভ-ইন সম্পর্কের মধ্যে সহবাস করে আসছে। এই সংস্কৃতির নাম হচ্ছে দাপা। তাদের ধারণা, এই সংস্কৃতির ফলে তাদের এখানে ধর্ষণ ও যৌতুকের মতো অপরাধ হয় না।

এখানে বিয়ের জন্য দুই দিনের মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় ছেলে-মেয়েরা একত্রিত হয় এবং যদি তারা কেউ কাউকে পছন্দ করে, তবে মেলা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর তারা বিয়ে না করেই একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। এই সময় তারা সন্তানের জন্মও দিতে পারে। পরে, তারা নিজেদের গ্রামের কাছে ফিরে আসে এবং তাদের বাবা-মায়েরা তাদের বিয়ে ধুমধাম করে পালন করেন।

যেখানে সবাই মেলায় জীবনসঙ্গী খোঁজে, বিয়ের আগেই মা হয় মেয়েরা

এই জাতিগোষ্ঠীতে লিভ-ইনে থাকার প্রথা শতাব্দী প্রাচীন। বলা হয়, আগে এই জাতির চার ভাই গ্রাম ছেড়ে কোথাও অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনজন ভারতীয় রীতিতে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু একজন ভাই বিয়ে ছাড়াই একটি মেয়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সেই তিন ভাইয়ের সন্তানের জন্ম হয়নি, কিন্তু চতুর্থ ভাইয়ের একটি সন্তান হয়েছিল। সেখান থেকেই এখানে লিভ-ইনে থাকার প্রথার শুরু।

গরাসিয়া নারীরা যদি চান, তবে প্রথম পার্টনারের পরেও দ্বিতীয় মেলায় দ্বিতীয় পার্টনার নির্বাচন করতে পারেন। এইভাবে তারা স্বাধীনতা পায়, যা আধুনিক সমাজেও অনেক সময় পাওয়া যায় না। এই কারণেই এই জাতিগোষ্ঠী বিশ্বজুড়ে পরিচিত এবং এই ধরনের স্বাধীনতা শহুরে নারীদেরও পাওয়া যায় না।

যেখানে সবাই মেলায় জীবনসঙ্গী খোঁজে, বিয়ের আগেই মা হয় মেয়েরা

এই আদিবাসীদের জীবিকা কৃষিকাজ এবং দিনমজুরি করা। তাদের আয়ের একমাত্র উপায় এটি। এখানে যে কোনো পুরুষ চাইলেই কোনো নারীর সঙ্গে লিভইন সম্পর্কে যেতে পারবেন না। এজন্য তাকে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে হবে। কারণ বেকার কোনো পুরুষের সঙ্গে কোনো নারী থাকতে চাইবেন না।

ভুট্টা হল গারাসিয়া পরিবারের প্রধান খাদ্য। এছাড়াও তারা তাদের খাদ্যতালিকায় চাল, জোয়ার এবং গম যোগ করে। এই গারাসিয়া উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অনেকেই সবজি, ফল ইত্যাদির মতো বনজ পণ্যও খেয়ে থাকে। রব বা রবডিকে গরাসিয়া জনগণের প্রশংসিত খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা তাদের অনুষ্ঠানে লাপসি, মালপুয়া, চুরমা ইত্যাদি তৈরি করে। গারাসিয়া উপজাতিরা বেশিরভাগই নিরামিষভোজী এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহলের প্রতি তাদের তেমন আসক্তি নেই।

সূত্র: আল জাজিরা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com