প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন দমন অভিযানের পর থেকে বহিষ্কার ও স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসী।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিএইচএস সেক্রেটারী ক্রিস্টি নোয়েম গত সপ্তাহে দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন দমন অভিযানের পর থেকে দেশে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ১৬ লাখ কমেছে। তিনি একে “অভূতপূর্ব সাফল্য” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সরকারের প্রচারাভিযানও অনেককে স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। কারণ সরকারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ১৩ হাজার মানুষ স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়েছে।
বিভিন্ন সংস্থার দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমান নির্ভর হয়ে ১৬ লাখের বিশাল সংখ্যাটি দেখাচ্ছে। এর পেছনে হয়তো কোন লক্ষ্য আছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইউএসসিআইএস’র তথ্য থেকে এ সংখ্যা জানিয়েছে। তবে সেই তথ্য কীভাবে সংগ্রহ বা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা মেলেনি। তাদের প্রতিবেদনে একটি চার্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণপন্থী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ এর একটি বিশ্লেষণ থেকে।
অন্যদিকে, পিউ রিসার্চ সেন্টার নতুন এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৫ লাখ, মূলত বাইডেন প্রশাসনের সময় নতুন অভিবাসন প্রবাহের কারণে। পিউ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়, ২০০৯ সালে ওবামা প্রশাসনের শুরু থেকে প্রথম ট্রাম্প মেয়াদের শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা কমেছিল প্রায় ১১ লাখ।
গবেষকরা বলছেন, ২০২৫ সালের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলার মতো পর্যাপ্ত তথ্য এখনও নেই। পিউ-এর প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক জেফ্রি প্যাসেল জানান, “২০২৫ সালের শুরু থেকে কিছুটা পতনের ইঙ্গিত মিলছে, তবে জরিপে সাড়া না দেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায় অনুমানগুলো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
এখন পর্যন্ত যে তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তার বড় অংশ এসেছে কারেন্ট পপুলেশন সার্ভে (ঈচঝ) থেকে। কিন্তু এ জরিপে মাত্র ৬০ হাজার পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা পিউ-এর ব্যবহৃত আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভে (অঈঝ)-এর তুলনায় অনেক ছোট নমুনা। ফলে অভিবাসনসংক্রান্ত অনুমানগুলোতে বড় ধরনের ত্রুটি থেকে যায়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপকভাবে অভিবাসনবিরোধী অভিযান চালাচ্ছেন। এতে বৈধ অবস্থানকারীদের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীরাও নজরদারিতে রয়েছেন।
সরকার শুরুতে বলেছিল, কেবল বিপজ্জনক অপরাধীদের লক্ষ্য করা হবে। তবে বর্তমানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালেই সরকার প্রায় চার লাখ মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পথে রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ কর্মরত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অভিযান চালিয়েছে। রেস্তোরাঁ, নির্মাণ প্রকল্প ও খামারে যেমন হানা দেওয়া হয়েছে, তেমনি আদালত প্রাঙ্গণ থেকেও আটক করা হয়েছে অভিবাসীদের, যেখানে তাঁরা বৈধকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সিভিল অ্যাপয়েন্টমেন্টে হাজির হয়েছিলেন।
সরকার মানবিক প্যারোল ও টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) কার্যক্রমও সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব ব্যবস্থার আওতায় প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হওয়া বিভিন্ন দেশের কয়েক লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অধিকার পেয়েছিলেন।
গবেষকরা সাধারণত বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বাদ দিয়ে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা অনুমান করেন। কিন্তু ছোট নমুনা ও সাড়া না দেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায় এই পদ্ধতি অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে না।
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা সত্যিই ১৬ লাখ কমেছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে গভীর সংশয় রয়েছে। তাদের মতে, নির্ভরযোগ্যভাবে বলা যাবে কেবল তখনই, যখন ২০২৫ সালের পূর্ণাঙ্গ জরিপের ফল প্রকাশিত হবে।