মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে যে অতি আগ্রহ দেখাচ্ছে তার পেছনে রয়েছে আসলে ব্যবসা। একাধিক মার্কিন কোম্পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম ব্যবসা করতে চায়। আর এই ব্যবসা গুলো যথাযথ নিয়ম কানুনের প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা পাচ্ছে না জন্যই মার্কিন রাজনীতিকে ব্যবহার করছে এবং মার্কিন রাজনীতিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন বাংলাদেশকে ঘিরে আগ্রহের প্রধান কারণ হলো সেন্টমার্টিন। তারা নানা কারণে এই উপমহাদেশে তাদের সামরিক উপস্থিতি তৈরি করতে চায়। আর এজন্য তাদের দরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই সেন্টমার্টিন চাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড কোনভাবেই বিদেশি সামরিক স্থাপনের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এই উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত অনুগত হিসেবে কাজ করবে না। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেখা গেছে ভারত একাধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেমন সম্পর্ক রেখেছে ঠিক তেমনিভাবে রাশিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। আর এই বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই উপমহাদেশে ভারত নির্ভরতা অনেকখানি কমিয়ে ফেলেছে।
পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া প্রায় একটি রাষ্ট্র এবং এই রাষ্ট্রে এখন চীনের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে। সেই জন্য এখানে মার্কিন আগের প্রভাব ক্ষুন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশগুলো সামরিক কৌশলগত দিক থেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বাংলাদেশ যতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই বাংলাদেশকে ঘিরে এত আগ্রহ। বাংলাদেশে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তারা একটি অনুগত সরকার আনতে চায় যে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কৌশলগত আকাঙ্খাগুলো পূরণ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সেন্টমার্টিন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক আগ্রহ এখানে তীব্র। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ এবং আতঙ্ক তৈরি করেছে। আর এ কারণেই তারা মনে করছে বাংলাদেশে যদি একটি অনুগত সরকার না থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে ব্যবসা আস্তে আস্তে কমে যাবে বা গুটিয়ে নিতে হবে।
সম্প্রতি মার্কিন কোম্পানি লিন্ডেন এনার্জিকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের বড় ব্যবসা পাইয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে এবং কোম্পানিকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধায় শুল্কমুক্ত কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম শুল্কে এলএনজি সরবরাহের সুযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন হয়েছে। এই আবেদনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটি চিঠি দিয়ে বলেছে যে তারা যদি এই ব্যবসাটি পায় তার বিনিময়ে তারা মার্কিন রাজনীতিবিদদের সে দেশের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে অবস্থান নেবেন। এমনকি চিঠিতে এটিও বলা হয়েছে যে প্রস্তাবিত বাণিজ্য সুবিধা পেলে বাংলাদেশের র্যাব এবং এর কয়েকজন কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য তারা কাজ করবে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য যেন অগ্রাধিকারমূলক ভাবে প্রবেশ পায় সে বিষয়ে তারা ভূমিকা রাখবে।
শুধু তাই নয়, লিন্ডেন এনার্জির আগ্রহপত্রে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে স্বাক্ষর করবে বলে জানানো হয়েছে। তবে সরকার এই সমস্ত অন্যায দাবিকে আমলে নিতে রাজি নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যারা যোগ্য এবং দেশের জন্য যেটি লাভজনক বাংলাদেশ সেটি করবে।
Like this:
Like Loading...