“সবকিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল, কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের হঠাৎ সিদ্ধান্তে সব চেষ্টা থমকে গেল”, এভাবেই বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক এক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েও এখন ভিসা আবেদন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। তিনি জানান, এই সেশনে আর আবেদন না করতে এরই মধ্যে মেইলও পাঠিয়েছে মার্কিন ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বাংলাদেশের আরেক শিক্ষার্থী ওবায়দুর রহমান সোহান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অফার লেটার পেয়েছেন, মিলেছে স্কলারশিপও কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তার। এখন কী করবেন তা নিয়ে পড়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়।
বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে হতাশ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক এমন অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছে, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ নতুন করে কোনো শিক্ষার্থী বা এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা যাবে না”।
একই সঙ্গে, ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপরতা যাচাই বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপও নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। যাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার পথ আরও কঠিন হলো।
ছবির উৎস,Getty Images
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন উচ্চশিক্ষার উদ্ধেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওবায়দুর রহমান সোহান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে স্বপ্নের গন্তব্যে যেতে গত দুই বছর কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি।
এই সময়ে ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন, পেয়েছেন স্কলারশিপও। কিন্তু ভিসা আবেদনের আগেই এমন সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন মি. সোহান।
বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে হতাশ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক এমন অনেকে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, লেখাপড়ার সুযোগ ও অপেক্ষাকৃত কম খরচ সহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
“ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে তার প্রায় তিন বছরের চেষ্টার ফল শূন্য হয়ে গেল। এখন ইউরোপ অথবা অন্য কোনো দেশের কথা ভাবতে হবে অথবা এই চেষ্টাই বাদ দিতে হবে” বলছিলেন মি. রাব্বি।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে দুঃশ্চিন্তার তেমন কোনো কারণ দেখছেন না এই সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিংয়ের পরামর্শক অ্যানি রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কোন দেশ ভিসা দিবে কি দিবে না, এটা একান্তই তাদের সিদ্ধান্ত”। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশ এর আগেও একাধিকবার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে তা কিছুদিন পরই আবার স্বাভাবিক হয়েছে।
যদিও শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছে বলেও মনে করেন মিজ. অ্যানি।
উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরও কাঙ্খিত গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অতীতে সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও করোনা পরবর্তী সময়ে প্রতি বছরই এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
‘দ্য ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ ২০২৪’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছিল।
এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ গত বছরই যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো দেশের তালিকায় অষ্টম স্থান দখল করেছিল। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৪ হাজার ৮০০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ হাজারে।
ছবির উৎস,Getty Images
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দূতাবাসগুলিকে শিক্ষার্থী ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের সময়সূচী নির্ধারণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাই-বাছাই কার্যক্রম আরও জোরদারের পরিকল্পনার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর।
দূতাবাসগুলোতে পাঠানো একটি চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “পরবর্তী নির্দেশনা জারি না হওয়া পর্যন্ত” এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
বার্তায় বলা হয়েছে যে, শিক্ষার্থী ভিসা এবং বৈদেশিক বিনিময় কর্মসূচির আওতাধীন ভিসার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাইকরণ বাড়ানো হবে, যা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর উপর “গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব” ফেলবে।
এমন এক সময় এই পদক্ষেপের ঘোষণা এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে ট্রাম্প অতিমাত্রায় বামপন্থী বলে মনে করেন।
তিনি বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষকে সক্রিয় করছে এবং বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণ করছে।
বিবিসির মার্কিন সহযোগী সংস্থা সিবিএস নিউজ পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের সেই স্মারকটি দেখেছে।এতে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে বলা হয়, এখনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া ভিসাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যালেন্ডার থেকে সরিয়ে ফেলতে। তবে যাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইতিমধ্যেই নির্ধারিত, তারা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন।
ওই কূটনৈতিক বার্তায় আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদনকারী সবার ‘প্রয়োজনীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই ও তল্লাশি কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণের’ প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
বিবিসি বাংলা