1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
যুক্তরাজ্যে আধুনিক দাসত্ব আইনে সুরক্ষাপ্রাপ্তি নিয়ে বিপাকে অভিবাসীরা
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সস্তা ফ্লাইট বুকিংয়ের গোপন কৌশল: টাকা বাঁচিয়ে উড়ুন বিশ্বজুড়ে পরিবার নিয়ে নিরাপদ ট্রিপ: ১০টি প্রমাণিত কৌশল ও গন্তব্য নির্দেশিকা সৌদি আরবে ভিসা ব্যবস্থায় নতুন নিয়ম বিমান ভ্রমণের আগে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন পর্যটনের দেশ মালদ্বীপের চেয়ে কোথায় পিছিয়ে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে দেশের বাইরে ঘুরতে গেছেন বিশ্বের ১৪০ কোটি মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাপানে ভিড় জমাচ্ছেন রুশ পর্যটকরা ৮০ হাজার আপত্তিকর ছবি, ১০২ কোটি টাকা ব্ল্যাকমেইল: থাই নারীর কেলেঙ্কারি অনিয়মিত ৫০ হাজার অভিবাসী শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ

যুক্তরাজ্যে আধুনিক দাসত্ব আইনে সুরক্ষাপ্রাপ্তি নিয়ে বিপাকে অভিবাসীরা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

যুক্তরাজ্যে আধুনিক দাসত্ব আইনের অধীনে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে৷ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এই হার ব্রিটেনের নাগরিকদের চেয়ে অনেক বেশি৷ অভিবাসী আইনের কড়াকড়ির কারণে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ হাজিরের বাধ্যবাধকতায় বিপাকে পড়েছেন তারা৷

২০১৯ সালে আধুনিক দাসত্ব আইন কার্যকর করে ব্রিটেন৷ সেসময় এই উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল৷ বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ চেইনের দাসত্ব প্রতিরোধ এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তির জন্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷

কিন্তু অনিয়মিত অভিবাসন রোধে ২০২৩ সালে কার্যকর হওয়া আইন এই প্রচেষ্টাকে ম্লান করে দিয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার ব্যবস্থার সদস্য এবং দাতব্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ সাক্ষাৎকারদাতাদের মতে ব্রিটেনের কঠোর অভিবাস আইনের কারণে হাজার অভিবাসী আধুনিক দাসত্বের ফাঁদে পড়ছেন৷ বিপদে পড়ে একদিকে সহায়তা যেমন পাচ্ছেন না তারা, অন্যদিকে ডিপোর্ট বা প্রত্যাবাসনের ভয়ে অনেকে এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতেও ভয় পাচ্ছেন৷

আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার বাড়ছে

দাসত্ব আইনের অধীনে রাষ্ট্রের সুরক্ষা পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে এখন আগের চেয়ে বেশি শোষণের তথ্য-প্রমাণ দিতে হয়৷ ২০২৩ সালে ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ দিতে না পারার কারণে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যেখানে ২০২২ সালে এই হার ছিল মাত্র ১১ শতাংশ৷ আর ২০২৪ সালে বছরের প্রথম নয় মাসের হিসাবে আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ছিল ৪৬ শতাংশ৷

২০২৩ সালে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৭ হাজার জনকে আধুনিক দাসত্বের সম্ভাব্য শিকার হিসেবে চিহ্নিত করে৷ গত বছরের নয় মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৫৮৭ জন৷ আধুনিক দাসত্বের সম্ভাব্য শিকার হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবেচিত এই সংখ্যার বেশিরভাগই অভিবাসী৷ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী মূলত সেলুন, গাড়ি পরিষ্কার, যৌনকর্মী বা অবৈধ মাদক চোরাচালানের কাজে এই অভিবাসীদের ব্রিটেনে আনা হয়৷

তবে এই পরিসংখ্যানগুলো প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না৷ অক্টোবরে হাউস অব লর্ডস কমিটির একটি প্রতিবেদনে ব্রিটেনে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার বলে উল্লেখ করা হয়৷

প্রতিবেদনে দাসত্ব আইন কার্যকরে সরকারকে অভিবাসন আইন সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, ‘‘২০১৫ সালে আধুনিক দাসত্ব আইন পাসের পরে তা বিশ্বে প্রথম হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল৷ কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই৷’’

বিরোধী দলে থাকতে বিগত সরকারের অভিবাসন আইন নিয়ে কড়া সমালোচনা করলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি আইন পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন সরকার আধুনিক দাসত্বের জন্য যারা সুরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন তাদের আবেদনের জট ছাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে শোষণের জন্য অপরাধী চক্রকে শাস্তির আওতায় আনার কাজ চলছে৷ রয়টার্সকে ঐ মুখপাত্র বলেন, ‘‘কয়েক হাজার মানুষকে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কাজে নিয়োজিত করা হবে, নিয়মিত তারা শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হবে

আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ

ব্রিটেনে আধুনিক দাসত্ব আইন পাসের সময়কার প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে একে সময়ের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার ইস্যু হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন৷

কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পরে কনজারভেটিভ সরকার এই আইনের সমালোচনা করে৷ অনিয়মিত অভিবাসীরা ডিপোর্টেশন এড়াতে আইনটিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করা হয়৷ এর প্রেক্ষিতে এই আইনের অধীনে সুরক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে দাসত্বের আরো তথ্য প্রমাণ হাজিরের বিধান যোগ করা হয়৷

অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী এলিজাবেথ বাটলার-স্লস আইনটি পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা হাউস অব লর্ডস কমিটিতে ছিলেন৷ তিনি বলেন অভিবাসীরা আইনটির অপব্যবহার করছে এমন তথ্য-প্রমাণ সরকার হাজির করতে পারেনি৷

তথ্য-প্রমাণের ঘাটতি

এই আইনের সুরক্ষা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া একজন ফিলিপিনো জানিয়েছেন, তাকে একটি বাড়ি দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করার পাশাপাশি শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হতেন বলে তিনি দাবি করেন৷ কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ নেই এমন কারণ দেখিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তার সুরক্ষার আবেদন গ্রহণ করেননি৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২২ সালে অপর্যাপ্ত তথ্যের কারণে আবেদন প্রথম পর্যায়ে বাতিল হওয়ার হার ছিল তিন থেকে চার শতাংশ৷ ২০২৩ সালে তা ৫৪ শতাংশে পৌঁছায়৷ আর ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে তা ৫৩ শতাংশে দাঁড়ায়৷

দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, এসব ক্ষেত্রে বিপদের শিকার ব্যক্তির পক্ষে অকাট্য প্রমাণ হাজির করা অনেকটাই অসম্ভব৷ বিশেষ করে যারা অপরাধীর হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ান তার পক্ষে এটি কঠিন৷

বিদেশিদের সঙ্গে বৈষম্য

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম অভিবাসী ও ব্রিটেনে নাগরিকদের মধ্যে আধুনিক দাসত্ব আইনের সুরক্ষা পাওয়ার বৈষম্যমূলক চিত্র তুলে ধরেছে৷ আইওএম এর বিশ্লেষণে দেখা যায় ২০২৩ সালে নয় মাসের হিসাবে ব্রিটেনের নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রথম স্তরে আবেদন গৃহীত হওয়ার হার ছিল ৮৫ শতাংশ৷ যেখানে বিদেশিদের ক্ষেত্রে এই হার ৪৪ শতাংশ৷ আগের বছরগুলোতে এই ব্যবধান অনেক কম ছিল বলে জানিয়েছে আইওএম৷

২০২৩ সালে নয় মাসে প্রথম স্তরে বাতিল হওয়া ৬৮ শতাংশ আবেদন পুনর্বিবেচনায় গৃহীত হয়েছিল, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ কর বলে মনে করেন আইওএম এর বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক বুরল্যান্ড৷

ফিলিপিনো সেই নারী জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনিও পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গৃহীত হলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দাসত্বের শিকার হিসেবে চিহ্নিত হবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ব্রিটেনে অবস্থানের অনুমতি পাবেন৷

অফিসিয়াল পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এমন ২০ হাজার আবেদনকারী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন৷

সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলে ভুক্তভোগীরা সরকারের কাছ থেকে সপ্তাহে ৭৫ পাউন্ডের ভাতা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী থাকার ব্যবস্থা পেয়ে থাকেন৷ তবে অনেক অভিবাসীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান না৷

এই আইনের অধীনে ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা ও সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৩-২৪ সালে ১৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ করেছে৷ এর বাইরে শিশুদের জন্য একটি প্রকল্পেও ব্যয় করা হয়েছে৷

রয়টার্স

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com