বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

যারা ভ্রমণকে ভালোবেসে ব্যবসায় পরিণত করেছেন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩

কেউ ভ্রমণকে ভালোবেসে চাকরী ছেড়ে দেন আর কেউ ভ্রমণকেই চাকরী হিসেবে বেছে নেন। আজকে আমরা জানবো এমন সাতজন উদ্যোক্তা সম্পর্কে, যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন আর সেই ভালোবাসা থেকেই তৈরী করেছেন ট্র্যাভেল কোম্পানি।

স্কট কিজ, ‘স্কটস চিপ ফ্লাইটস’ এর প্রতিষ্ঠাতা

স্কটস চিপ ফ্লাইটস  হচ্ছে এমন একটি ইমেইল নিউজলেটার যেখানে পেইড এবং ফ্রি সাবস্ক্রিপশন করা যায়। এটা সাবস্ক্রাইবারদের সবচেয়ে কম দামে, কখন এবং কীভাবে ফ্লাইট নেয়া লাগবে সে সম্পর্কে জানায়।

স্কট ভ্রমণ করতে খুব বেশি পছন্দ করেন। গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করার পর, যথেষ্ট পরিমাণ টাকার অভাবে ভ্রমণ করতে পারেননি। আর সেই জেদ থেকেই তিনি নিজেই পড়াশোনা করতে শুরু করেন ট্র্যাভেল সম্পর্কে। কয়েক বছর রিসার্চ করে বের করলেন, সবচেয়ে কম খরচে ভ্রমনের উপায়। তিনি তাঁর প্রথম কাজ পেয়েছিলেন, ২০১৩ সালের দিকে। যখন ধীরে ধীরে কাজ বাড়তে শুরু করলো, তখন তাঁর ইমেইল সংগ্রহ করার কথা মাথায় আসলো। আর এভাবেই ‘স্কটস চিপ ফ্লাইটস’ এর যাত্রা শুরু হলো।

ব্রায়ান কেলি, ‘দ্যা পয়েন্টস গাই’ এর প্রতিষ্ঠাতা

দ্যা পয়েন্টস গাই একটি ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট, যেটা মূলত ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য, রিওয়ার্ড, টিপস ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে।

কেলির বাবা ছিলেন একজন কনসাল্টেন্ট, আর তাই কাজের তাগিদেই তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হতো। এভাবে  কেলিরও গড়ে উঠছিলো ভ্রমনের নেশা। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর, কেলি একটি ট্র্যাভেল এজেন্সীতে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন হোটেল এবং এয়ারলাইন্সের র‍্যাংকিং করে একটি ডেটাবেজ তৈরি করেন। এই ডেটাবেজ সম্পর্কিত আইডিয়া অনেকেরই পছন্দ হয়েছিলো। তারপর তিনি ২০১০ সালের দিকে তাঁর সহ-প্রতিষ্ঠাতার সাথে মিলে তৈরি করেন ‘দ্যা পয়েন্টস গাই’ এর প্রথম ওয়েবসাইট। কেলি বলেন,

আমি জানতামই না ওয়ার্ডপ্রেস কিংবা এসইও কি! আমি কখনোই ভাবিনি এই কাজ দিয়ে এতদূর অবধি আসা সম্ভব হবে!

গ্রেস লি, “উইশ পয়েন্টস” এর প্রতিষ্ঠাতা

Source:entrepreneur.com

উইশ পয়েন্টস  হচ্ছে এমন একটি সোশ্যাল এগ্রিগেটর সফটওয়্যার, যেটার মাধ্যমে একজন ইউজার তার ট্র্যাভেল উইশ রেকর্ড করে রাখতে পারবেন, সেই উইশ তার বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এবং হোটেল কোম্পানি গুলোও এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ট্রাভেলারদের বুক করতে পারবেন।

লি’র ছিলেন হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে প্রেডিক্টিভ এনালিটিক্স। তাই তাঁর কাজের সুবাদেই তাঁকে ঘুরতে হয়েছে ৮৫ টি দেশে। তিনি খেয়াল করে দেখলেন, যখন বন্ধুবান্ধবের সাথে ঘুরতে যেতে হতো, তখন প্রত্যেকের সময়, মতামত ও আগ্রহ প্রায়ই মিলতো না। তারপরে লি, ২০১২ সালে একটি স্টার্টআপ প্রতিযোগীতায় তাঁর এই আইডিয়া পিচ করেন। তিনি ২০১৬ সাল থেকে তাঁর ডে-টাইম জব ছেড়ে দিয়ে এই উইশপয়েন্টেই পুরো সময় দিতে থাকলেন। বর্তমানে প্রায় ৩ মিলিয়ন এর বেশি ইউজার আছে উইশপয়েন্টের।

টম মার্চেন্ট, ‘ব্ল্যাক টমেটো’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা

ব্ল্যাক টমেটো হচ্ছে একটি ভ্রমণ বিষয়ক কোম্পানি, যেটা তাঁদের ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার আদলে, ফ্লাইট আইডিয়া জেনারেট করে থাকে।

মার্চেন্ট তাঁর দুজন সহকর্মীর সামনে এই আইডিয়া পিচ করেন। তাঁরা এই কাজ একসাথে শুরু করার প্ল্যান করতে থাকেন। একদিন ‘ব্ল্যাক টমেটো’ এর প্রতিষ্ঠাতা মাছ ধরছিলেন আর মার্চেন্টের সাথে কথাও বলছিলেন। তখন তাঁরা ঠিক করেন যে, তাঁরা এই আইডিয়া নিয়েই কাজ করবেন। মার্চেন্ট বলেন,

আমরা ভিজিটরদের ট্রাভেলার হিসেবে দেখতে চাই, টুরিস্ট হিসেবে নয়!

ড্যারেল ওয়েইড, ‘ইন্টারপিড ট্র্যাভেল’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা

ইন্টারপিড ট্র্যাভেল  হচ্ছে একটি এডভেঞ্চার গ্রুপ, যারা ১২০ টি দেশে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন। এই কোম্পানি ট্রাভেলারদের গাইড করে, কীভাবে একটি দেশের স্থানীয় ব্যক্তিরা খায়, ঘুমায় এবং চলাফেরা করে।

ওয়েইড এর যখন ছয় বছর বয়স, তখন তিনি হুয়াই ভ্রমণে যান। তাঁর বাবা-মা দুজনেই উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি যখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরী করতে গেলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর দ্বারা চাকরী করা সম্ভব নয়। ১৯৯৮ সালের দিকে যখন তিনি আইডিয়া খুজছিলেন, তখন তাঁর কাছে মনে হলো তাঁর ট্র্যাভেল নিয়েই কাজ করা উচিত। আর তারপর থেকেই শুরু হলো ‘ইন্টারপিড ট্রাভেল’ এর যাত্রা!

পল মেটসেলার, ‘ওভেশন ট্র্যাভেল গ্রুপ’ এর চেয়ারম্যান এবং সিইও

ওভেশন ট্র্যাভেল গ্রুপ হচ্ছে একটি হাই-এন্ড ভ্রমণ বিষয়ক কোম্পানি, যেটা মূলত কর্পোরেট এবং জেনারেল ট্র্যাভেল ফ্লাইট এর উপর স্পেশালাইজড।

সাত প্রজন্ম ধরে পল এর পরিবার ট্র্যাভেল ব্যবসার সাথে জড়িত। পল এর এই উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে, এটা একটি বিশেষ কারণ। ২৭ বছর বয়সে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন এবং তিনি সেখানে ‘আইনজীবী ট্র্যাভেল গাইড’ নামে একটি ক্লাস করেন, যেখানে ট্রাভেলারদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে, বিভিন্ন কৌশল বর্ননা করা হতো। আর সেখান থেকেই তিনি পেয়ে যান তাঁর যুগান্তকারী আইডিয়া।

স্যাম শ্যাংক, “হোটেল টুনাইট” এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও

Source:tech.co

হোটেল টুনাইট এর লক্ষ্য হচ্ছে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্যে, হোটেল বুকিং করাটাকে আরো সহজ এবং আকর্ষণীয় করে তোলা।

শ্যাংক, প্রথমবার যখন কোস্টারিকা ভ্রমণে যান, তখন সেখানকার হোটেলগুলো তাঁর কাছে এতটাই ভালো লেগেছিলো যে, তিনি ঠিক করেছিলেন, হয় হোটেল কোম্পানি করবেন, নাহয় ভ্রমণ করতে করতে এক হোটেল থেকে আরেক হোটেলে ঘুরে বেড়াবেন। ‘হোটেল টুনাইট’ এর সফটওয়্যার থেকে হোটেল বুকিং ছাড়াও, একেবারে শেষ মুহূর্তে ছাড়সহ বিভিন্ন হোটেল বুক করা যায়।

তারা স্বপ্ন দেখেছেন, তারা প্যাশনকে ভালোবেসে টিকিয়ে রেখেছেন, যারা তাদের কাজকে সম্মান করে এসেছেন, তারাই উদ্যোক্তা। ভ্রমণকে ভালোবেসে তারা ভ্রমণকেই তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ভালোবাসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে কয়জনই বা পারেন?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com