ঈদ যাত্রায় রেল, সড়ক ও নৌপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রীচাপ বেড়েছে আকাশপথেও। বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন যে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন তাদের মধ্যে বিমানযাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। ভিড়-ভোগান্তি এড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘরে ফিরতে আগেভাগেই বিমানের টিকিট কেটেছেন অনেকে। আকাশপথের সুবিধা থাকা অঞ্চলগুলোতে এবারও ঈদ ঘিরে টিকিটের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকে যেমন টিকিট পাচ্ছেন না, তেমনি চাহিদা বাড়ার কারণে ভাড়াও বেড়ে গেছে। যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, স্বাভাবিকের চেয়ে ভাড়া দ্বিগুণ বেড়েছে কিছু কিছু রুটে।
বিমানযাত্রী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর ও যশোর রুটে যাত্রীচাপ বেড়েছে। ঈদের পরে কক্সবাজার রুটে যাত্রীচাপ অনেক বেশি। এসব রুটে আগেভাগেই প্রায় শতভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী রুটেও যাত্রীচাপ গেল বছরের চেয়ে বেড়েছে। যাত্রীচাপ সামলাতে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাসহ অন্যান্য কোম্পানি বিশেষ ফ্লাইট বাড়িয়েছে। ভিড় এড়াতে ঈদ যাত্রায় অনেকে আকাশপথ বেছে নিলেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ। যেমন, ঢাকা-সৈয়দপুর আকাশ রুটে বিমান ভাড়া হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে সেই টিকিট এখন দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি করছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে টিকিটের দাম বেড়েছে। অন্যথায় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বাইরের বিশ্বেও এমনটি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকিটের দাম একটু বেশি হলেও বিভিন্ন এয়ারলাইনসের প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের পর ফেরার টিকিটও শেষের পথে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে চারটি এয়ারলাইনস। এগুলো হলো বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা, নভোএয়ার এবং এয়ার অ্যাস্ট্রা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা জানান, এবারও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে নির্ধারিত ফ্লাইটের বাইরে বিমানের ১৩টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। গেল ২৫ মার্চ থেকে ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে ছয়টি বিশেষ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। চলবে আজ ৩০ মার্চ পর্যন্ত। গত ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে চলছে ছয়টি ফ্লাইট। চলবে আগামীকাল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া ২৭ মার্চ ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী বহন করেছে আরেকটি বিশেষ ফ্লাইট।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে বিশেষ ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে, সব টিকিট শেষ। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে এসব ফ্লাইট চলবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, নিয়মিত ফ্লাইট সংখ্যা বেশি থাকায় এবার ঈদে নতুন কোনো ফ্লাইট বাড়ানো হয়নি। ঢাকা-বরিশাল ছাড়া সব রুটে চলছে ইউএস বাংলার ফ্লাইট।
এয়ার অ্যাস্ট্রার উপ-ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) সাকিব হাসান শুভ বলেন, যাত্রী চাপ আছে, তাই ঈদ উপলক্ষ্যে সৈয়দপুর ও কক্সবাজার রুটে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ফ্লাইট। তবে ঈদের পরে যাত্রীচাপ আরও বাড়বে। মূলত যাত্রীর ওপরই নির্ভর করছে ফ্লাইট বাড়ানোর বিষয়টি।
নভোএয়ার এয়ারলাইনস লিমিটেডের মার্কেটিং প্রধান মেসবাহ-উল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে যাত্রীচাপ আছে। ঈদ উপলক্ষে নভোএয়ার সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোরে ১৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এ ছাড়া ঈদের দিন থেকে কক্সবাজারে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তিনি জানান, মনগড়াভাবে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে ফ্লাইটের লোড বাড়লে ভাড়া বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এমনটা কেবল বাংলাদেশে নয়, বাইরের বিশ্বেও হয়।
এক যাত্রী ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ বলেন, সড়কপথে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের দূরত্ব প্রায় ৩২৭ কিলোমিটার। এ পথে বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টা। একইভাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৯৭ কিলোমিটার। সড়কে যানজট না থাকলে এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। সড়কে যানজট থাকলে গন্তব্যে পৌঁছানোর নির্দিষ্ট সময় থাকে না। ফলে এ ধরনের সীমাহীন ভোগান্তি এড়াতে দ্বিগুণ ভাড়ায় আকাশপথই বেছে নিলাম।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের কোনো সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি এবং বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।