যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে চারটি ই–গেট উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ সেবার উদ্বোধন করেন। এ সেবা চালু করায় এক মিনিটের কম সময়ে পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজ শেষ হওয়ায় যাত্রীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়িক কাজে ২২ বছর ধরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেন ঝিকরগাছা উপজেলার মনিরুজ্জামান। এই প্রথমবার এক মিনিটের মধ্যেই তাঁর পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ই–গেটের মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো পাসপোর্ট যাচাইয়ের শেষ করলেন। অন্য যেকোনো সময় দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টাব্যাপী দাঁড়িয়ে এ কাজ করতে হতো। মনিরুজ্জামানের মতো অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে এক মিনিটের কম সময়ে পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষ করতে পেরে ভীষণ খুশি। আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে দেশে প্রথমবারের মতো বেনাপোল স্থলবন্দরে চারটি ই–গেট উদ্বোধন করা হয়েছে।
ই–গেট সেবা চালু হওয়ার পর ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টের তথ্য যাচাই–বাছাই এক মিনিটের কম সময়ে শেষ হলেও ভিসা যাচাই করে সিল মারতে আগের মতো জটিলতা রয়েই গেছে। যাত্রীর চাপ কম থাকলে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু ভিড় থাকলে লাইনে দাঁড়ালে ভিসা যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
এ বিষয়ে ই–গেট দিয়ে পার হওয়া মনিরুজ্জামান বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে আমি বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করছি। এই প্রথমবার ই–গেটের মাধ্যমে পাসপোর্টের তথ্য যাচাই কার্যক্রম শেষ করতে এক মিনিটেরও কম সময় লেগেছে। কিন্তু ভিসায় সিল মারতে আগের মতোই পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লেগেছে। ভিড় থাকলে তো লাইনে দাঁড়ালে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লেগে যায়।’
ই–গেটের কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিসা যাচাইয়ের জটিলতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘শুধু ই–পাসপোর্ট, ই–গেট নয়, ই–ভিসাতেও আমরা চলে যাচ্ছি। বাংলাদেশ হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে এমআরপি, এরপর ই–পাসপোর্টে চলে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে যাচ্ছি।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ইলেকট্রনিক এসব গেটে প্রথমে ই-পাসপোর্টধারীর যাত্রীর ছবি, তথ্য ও বারকোড থাকা পৃষ্ঠাটি স্ক্যান হয়ে তথ্যগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। সব ঠিক থাকলে গেটের প্রথম ধাপ খুলে যাবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সরাসরি শনাক্তকরণ ক্যামেরার মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর তাৎক্ষণিক মুখমণ্ডল মিলে গেলেই খুলে যাবে দ্বিতীয় গেটটিও। আর সার্ভার ও সিস্টেম সব ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ১৮ সেকেন্ডের মধ্যেই একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি দিন পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ঈদ ও পূজার সময়ে এই সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করতে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ে। লাইনে না দাঁড়িয়ে আগে ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে দালাল চক্র যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নেয়। এতে যাত্রীরা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হন। যাত্রীসেবা সহজ ও নিরাপদ করতে বেনাপোল স্থলবন্দরে চারটি ই–গেট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি ভারত থেকে ফেরা ও দুইটি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।