উচ্চশিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের অনেক তরুণ এখন দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করছেন। যেহেতু উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাজের ব্যাপ্তি অনেক বড় কিংবা ধরনগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ, তাই বিভিন্ন বিষয়ে পড়ে এই খাতে কাজ করার সুযোগ আছে। বিবিএ থেকে শুরু করে প্রকৌশল, সমাজবিজ্ঞানের স্নাতকেরাও এই ক্ষেত্রে কাজ করেন। অনুবাদক থেকে শুরু করে হিসাবকর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, জনস্বাস্থ্যবিদসহ নানাভাবে এই কাজে যুক্ত হওয়া যায়। উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে পড়েও অনেকে এই ক্ষেত্রে পেশা গড়তে চান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা উন্নয়ন সংস্থায় কাজের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন। এখন যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ, দক্ষতা বিকাশের চেষ্টা করার এখন খুব ভালো সময়। উন্নয়ন সংস্থায় কাজের প্রস্তুতি হিসেবে যেসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
কাজ সম্পর্কে জানুন
যেকোনো উন্নয়ন সংস্থায় কাজের পরিকল্পনা থাকলে কাজের ধরন সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। যাঁরা বর্তমানে কাজ করছেন, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে কোন ক্ষেত্রে কেমন কাজের সুযোগ তা জেনে নিন।
শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ নিন
অন্যান্য পেশার মতো উন্নয়ন সংস্থায় কাজের ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতা আছে। তাই কাজ সম্পর্কে যাঁদের ধারণা আছে ও দক্ষতা প্রকাশের কৌশল জানা আছে, তাদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে ইন্টার্নি হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। এখন অনেক উন্নয়ন সংস্থায় ভার্চ্যুয়াল কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। ইন্টার্নি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সরাসরি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। তাই এখন থেকেই খোঁজ নিতে শুরু করুন, কোন উন্নয়ন সংস্থায় কীভাবে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেওয়া যায়।
উন্নয়ন সংস্থায় কাজের শুরুতে অনেক কিছুই আপনাকে জানতে হবে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটিমাত্র কাজ করার সুযোগ নেই। নিজেকে পেশাজীবী হিসেবে এগিয়ে নিতে যোগাযোগ দক্ষতা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনাসহ নানা দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হোন। তাতে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়বে।
উন্মুক্ত কাজের সুযোগ
আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়েছেন, উন্নয়ন সংস্থায় যে তার ওপরেই কাজ করতে হবে এমনটি নয়। ব্যবসায়ে প্রশাসনে পড়ে হয়তো আপনাকে যোগাযোগ বিভাগে কাজ করতে হবে, নৃবিজ্ঞানে পড়ে ব্যবস্থাপনায় কাজের সুযোগ আসতে পারে। তাই নিজ উদ্যোগে কাজ শেখার চেষ্টা করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হলে জানার ও শেখার পরিধিটা বড় হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কাজ শিখে নিন
বর্তমানে শুধু উন্নয়ন সংস্থাতে নয়, বিভিন্ন করপোরেট পেশাতেও বহুমুখী কাজ করতে হয়। তহবিল গঠন, সেমিনার আয়োজন, প্রতিবেদন লেখার মতো বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই এসব শেখার চেষ্টা করুন। গবেষণা করার কৌশল সম্পর্কে ধারণা রাখুন। কীভাবে তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করতে হয়, সংগ্রহ করতে হয় তা জানুন। প্রাতিষ্ঠানিক আইন ও নীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা রাখুন।
উন্নয়ন সংস্থায় যাঁরা কাজ করছেন তাদের খোঁজখবর রাখুন। ফেসবুক-লিংকডইনে প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম ও পরিচিতির দিকে খেয়াল রাখুন। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। কোনো সেমিনার বা কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে গ্রহণ করুন। নিজের পরিচিতি বাড়াতে শিখুন। কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিন। নিজের ব্যক্তিত্ব সংশ্লিষ্ট দক্ষতা যেমন উপস্থাপনা, সমস্যা সমাধান, নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করুন। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ যে সব সময় পত্রিকায় বা অনলাইনে সহজেই পাবেন, তা নয়। সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, লিংকডইনে নজর রাখুন। পরিচিতজনদের বলুন, আপনি এ ধরনের কাজ খুঁজছেন। প্রয়োজনে উন্নয়ন সংস্থার ওয়েবসাইট জীবনবৃত্তান্ত দিয়ে রাখুন। কাজের গুরুত্ব বুঝে বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহার, গ্রাফিকসের কাজ, প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজ শিখুন।
আরও যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন
অনেক উন্নয়ন সংস্থায় নিয়োগের সময় লিখিত পরীক্ষা বা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ইংরেজি বলার বা লেখার দক্ষতা, সাধারণ জ্ঞান, ভাষা ও গাণিতিক দক্ষতা নিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয় কখনো কখনো। পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট ও সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন করা হয়। তাই প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।