মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন

যত ভিউ, তত বাণিজ্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কী? সবার মুখেই এক কথা, ‘ফেসবুক’।

মেটার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ফেসবুকের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যানালিটিকস প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাটের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশেরও বেশি।

একসময় ফেসবুকের কাজ শুধুই মানুষের যোগাযোগ রক্ষা করা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ফেসবুকের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষ এটাকে খবরের মাধ্যম, বিনোদনের মাধ্যম, এমনকি ভার্চুয়াল জগতে ব্যবসা ও আয়ের রাস্তা হিসেবেও ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ফেসবুক আজ মানুষের মন এবং মস্তিষ্কের ওপর একচ্ছত্র রাজত্ব করছে।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বাণিজ্যের কাছে এমনভাবে আত্মসমর্পণ করছে যে এখান থেকে সুস্থ রুচি এবং ইতিবাচক চিন্তাধারা গায়েব হতে শুরু করেছে।

সস্তা জনপ্রিয়তার লোভ এবং সহজে অর্থ উপার্জনের রুচিহীনতা সুস্থ চিন্তা, নির্ভরযোগ্য খবর এবং রুচিশীল বিনোদনকে হারিয়ে দিচ্ছে।

যাঁরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানেন, বোঝেন, সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন। তাঁদের কাছে অনুরোধ, নিজেদের আর দূরে সরিয়ে রাখবেন না। দেশের এই পরিবর্তনের সময়ে শুভ শক্তির উত্থানের খুব প্রয়োজন।

ফলে হতাশায় ভুগে অনেকেই এই মাধ্যম থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন বা নীরব দর্শকের ভূমিকায় চলে যাচ্ছেন। দিন দিন এই বিশাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি নোংরা রুচির প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে। সাড়ে ছয় কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর মধ্যে এখন ফেসবুক বর্জনকারী বা নীরব ব্যবহারকারীর সংখ্যার কম নয়।

তাদের অনুপস্থিতি হয়তো তৎক্ষণাৎ চোখে না পড়লেও কোনো এক সময় তাদের হারানোর অনুভূতি উপলব্ধি করা যাবে প্রতিবাদবিহীন নোংরা মন্তব্যের ভিড়ে।

সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার অসীম নিয়ন্ত্রণ এবং হয়রানির কথা আমাদের অজানা নয়।

স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে না পারার হতাশা থেকেও সেই সময় অনেকে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গতিপ্রকৃতিও যাচ্ছে এমন দিকে, তা কেউ কামনা করেনি।

বাকস্বাধীনতার অর্থ স্বেচ্ছাচারিতা নয়। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এখানে যার যা ইচ্ছে তাই বলছে, যার যা ইচ্ছে তাই করছে। যা ইচ্ছে তাই প্রচার আর প্রসারের এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ তোলাই অসুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।

সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান এবং আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে ফেসবুক নামক প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে নতুন একটি সহমর্মিতাযুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই আশাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে যখন আন্দোলন-পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যেই স্বার্থান্বেষীরা নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে এই মাধ্যমটিকে ব্যবহার করতে শুরু করে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এত বড় একটি মাধ্যমকে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে তেমনভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না, গণমানুষকে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। এখন ফেসবুক নৈতিকতা রক্ষা, জনতা বিচার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচারের একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে, বিজ্ঞাপনগুলোতে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নৈতিকতা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে ওঠা সস্তা সংবাদ শিরোনাম, মনগড়া খবর, বানানো ভিডিওগুলো সত্য-মিথ্যা যাচাই করার আগেই ছড়িয়ে পড়ছে। ভিউ এবং সংখ্যার ব্যবসায় হারিয়ে যাচ্ছে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ এবং মূল্যবোধ।

‘যত ভিউ, তত বাণিজ্য’—এটিই এখন টিকে থাকার মূলমন্ত্র। ফেসবুক এখন মিথ্যা এবং নোংরা কথা, কর্মকাণ্ড এবং বিজ্ঞাপনের মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।

ফেসবুক যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, তাই এর গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এখন এই মাধ্যমটিতে শুভশক্তির দৃশ্যমান উপস্থিতি খুব দরকার

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com