বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

ম্যানহাটনে ভ্রমন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ম্যানহাটন, নিউইয়র্ক সিটির কেন্দ্রীয় দ্বীপ এবং বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ব্যস্ত ও বিখ্যাত অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম। ম্যানহাটনের ইতিহাস, জীবনযাত্রা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং পর্যটকদের জন্য অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থান এই দ্বীপটিকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

ম্যানহাটনের ইতিহাস

ম্যানহাটনের ইতিহাস ১৭শ শতাব্দীতে ডাচদের দ্বারা “Nieuw Amsterdam” নামে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয়। ১৬২৬ সালে পিটার মিনুইট নামের এক ডাচ গভর্নর স্থানীয় আদিবাসীদের কাছ থেকে ম্যানহাটন দ্বীপটি কিনেছিলেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে এলে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি হয়। ম্যানহাটন আজ বিশ্ব অর্থনীতি, বাণিজ্য, এবং সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।

ম্যানহাটনের জীবনযাত্রা

ম্যানহাটন হলো সেই জায়গা যেখানে দিনরাতের কোনো বিরতি নেই। এই নগরী তার কর্মচাঞ্চল্যপূর্ণ পরিবেশ এবং উত্তেজনাপূর্ণ জীবনযাত্রার জন্য বিখ্যাত। এখানকার মানুষ অত্যন্ত ব্যস্ত, তবে জীবনযাত্রা অত্যন্ত আধুনিক ও আরামদায়ক। ম্যানহাটনের অফিস ভবন থেকে শুরু করে হাই-রাইজ অ্যাপার্টমেন্টগুলো আধুনিক নাগরিক জীবনকে প্রতিফলিত করে।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানসমূহ

টাইমস স্কোয়ার: ম্যানহাটনের অন্যতম বিখ্যাত স্থান। এখানে দৈনিক হাজার হাজার পর্যটক আসেন জীবন্ত আলো এবং বিজ্ঞাপনের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ উপভোগ করতে।

সেন্ট্রাল পার্ক: বিশাল সবুজায়িত পার্কটি শহরের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এক অপূর্ব স্থান।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি: যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রতীক এই মূর্তি নিউ ইয়র্ক হাবের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং: আকাশচুম্বী এই ভবন থেকে পুরো ম্যানহাটনের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।

ওয়াল স্ট্রিট: বিশ্বের অর্থনীতির হৃদয়স্থল। এখানে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ফেডারেল হল অবস্থিত।

ম্যানহাটনের মানুষ ও জীবন

ম্যানহাটনে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ বসবাস করে। এটি একটি বৈচিত্র্যময় স্থান যেখানে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি, এবং ভাষার মানুষের সমন্বয় দেখা যায়। এখানকার মানুষ খুবই কর্মব্যস্ত এবং দ্রুত গতির জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত। তবে তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক মিলনমেলার জন্য সময় বের করে।

ম্যানহাটনের সংস্কৃতি

ম্যানহাটন নিউ ইয়র্ক সিটির সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে রয়েছে বিখ্যাত ব্রডওয়ে থিয়েটার, মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট, এবং মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (MoMA)। এখানে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব, প্রদর্শনী, এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক এবং সঙ্গীত উৎসবের জন্যও ম্যানহাটন বিখ্যাত।

খাবার এবং পানীয়

ম্যানহাটনে বিভিন্ন দেশের এবং সংস্কৃতির খাবারের দোকান রয়েছে। এখানে সব ধরনের রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন স্বাদের খাবার পরিবেশন করে। জনপ্রিয় কিছু খাবার:

নিউ ইয়র্ক পিৎজা: পাতলা ক্রাস্টের এই পিৎজা বিশ্বখ্যাত।

ব্যাগেল: ক্রীম চিজ বা লক্সের সঙ্গে এটি একটি জনপ্রিয় নাস্তা।

স্ট্রিট ফুড: ম্যানহাটনে বিভিন্ন রাস্তার কোণে হট ডগ, শাওয়ারমা, এবং জিপসির মতো স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায়, যা খুব জনপ্রিয়।

আবাসন এবং থাকার ব্যবস্থা

ম্যানহাটনে থাকার জন্য বিলাসবহুল হোটেল থেকে শুরু করে ছোট রেস্টুরেন্ট এবং এয়ারবিএনবি রয়েছে। ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কের আশেপাশে কিছু অত্যন্ত বিলাসবহুল হোটেল পাওয়া যায়। তবে, এখানে থাকার খরচ তুলনামূলক বেশি। যারা স্থায়ীভাবে থাকতে চান, তাদের জন্য এখানে হাই-রাইজ অ্যাপার্টমেন্ট এবং কন্ডোমিনিয়াম রয়েছে, তবে এখানকার আবাসন খরচ অনেক বেশি।

কেন মানুষ ম্যানহাটনে আসে?

ম্যানহাটন মূলত ব্যবসা, শিক্ষা এবং বিনোদনের কেন্দ্র। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি, ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় রয়েছে। অনেকেই ক্যারিয়ারের সুযোগের জন্য ম্যানহাটনে আসেন। এছাড়া, পর্যটকরা এখানে আসেন এর বিখ্যাত স্থানসমূহ, থিয়েটার, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য।

ম্যানহাটনের আবহাওয়া

ম্যানহাটনের আবহাওয়া চারটি ঋতুর মধ্যে পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে উষ্ণ হয়, তবে শীতকালে ঠাণ্ডা এবং মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়। বসন্ত এবং শরৎকাল ম্যানহাটনে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুন্দর সময়, কারণ তাপমাত্রা সহনীয় থাকে এবং চারপাশের প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর হয়।

ম্যানহাটন ভ্রমণ মানে শুধু একটি শহর দেখা নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা। এর ইতিহাস, আধুনিক জীবনযাত্রা, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com