কেউ বলেন এই খাবার আসল বাবুর্চি ছাড়া সম্ভব না। কারও মতে, চট্টগ্রামের বাইরে এই খাবার পাওয়া যাবেনা। আর মেজবানের স্বাদ যে রেস্টুরেন্টের কাঁচঘেরা আবহাওয়াতে পাওয়া যাবেনা সেটা নিয়ে সবাইই ছিলেন একমত। কিন্তু চট্টলাবাসীর সেই শঙ্কা তো উড়িয়েছে সেই সাথে সারাদেশের মানুষকে চট্টগ্রামের আদিম খাবারের স্বাদে মাতোয়ারা করেছে একটা রেস্টুরেন্টই! আঞ্চলিক খাবারের এই রেস্টুরেন্টের নামও রাখা হয়েছে আঞ্চলিক ঢঙে। ‘মেজ্জান হাইলে আইয়ুন’ নামে এই রেস্টুরেন্ট এখন চট্টলাবাসীর একেবারে নিজস্ব ঘরবাড়ির মতই।
পরিবেশন ও উপস্থাপন
মেজবান শব্দটি বাংলাদেশের আরও অনেক শব্দের মতই বিদেশ থেকে আগত। ফার্সি শব্দ ‘মেজবান’ অর্থ ‘অতিথি আপ্যায়নকারী’ আর ‘মেজবানি’ হচ্ছে ‘আতিথেয়তা’। চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকেরা আঞ্চলিক ভাষায় মেজবানকে ‘মেজ্জান’ বলে থাকেন। চট্টগ্রামে মেজবান খাওয়ার রীতি প্রায় শত বছরের পুরাতন। আর সেই মেজবানকেই উপলক্ষের বাইরে সবসময়ের জন্য করে ফেলার পরিকল্পনা থেকেই ২০১৬ সালে শুরু হয় ‘মেজ্জান হাইলে আইয়ুন’।
মেজ্জান হাইলে আইয়ুন-এর সফল হবার সবচেয়ে বড় কারণ স্বাদের পাশাপাশি সম্ভবত তাদের পরিবেশনা এবং উপস্থাপনা। পরিবেশনার ক্ষেত্রে তারা চেষ্টা করে ঐতিহ্যের সবটুকু বজায় রাখতে। এখানে বাহারি প্লেট নয়, খাবার পরিবেশন করা হবে মাটির সানকিতে। খেতে গিয়ে মনে হবে চট্টগ্রামের একবারেই ঘরোয়া পরিবেশে খাচ্ছেন আপনি। খাবারের পরিমাণও দেয়া হয় যথেষ্ট। আর বহিরাগত মানুষের জন্য যা অবাক করা বিষয় তা হল উপস্থাপন। ‘প্যাকেজ’, ‘ছনার ডাইল’, ‘ফরটা’ কিংবা ‘হালা ভুনা’ এসব শব্দে ভিরমি খাবার কিছু নেই। বরং চট্টগ্রামের নিজস্ব ভাষাতেই এদের মেন্যুতে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।
কী কী পাচ্ছেন
ছনার ডাইল বলতে বুঝানো হয় বুটের ডালের সাথে গরুর চর্বিযুক্ত অংশ এবং হাড়ের রান্না। এতে মশলার উপস্থিতি থাকে লক্ষণীয়। এবং স্বাদে মানে চট্টলার আদি স্বাদ রক্ষিত হয় পুরোপুরিভাবে। ‘হালাভুনা’ মেজবানি আয়োজনের বিশেষ এক দিক। এক্ষেত্রে মাংসকে তেলে ফ্রাই করা হয়। অবশ্যই নিজস্ব কায়দায় মশলার ব্যবহার করা হয় এখানেও। শুদ্ধ বাংলায় যা ভুনা, চট্টগ্রামে বা মেজ্জান হাইলে আইয়ুন এর চার দেয়ালে তাইই হয়ে গিয়েছে ‘হালা ভুনা।’
এছাড়া কম ঝাল মসলা ও টক দিয়ে রান্না করা নলা বা গরুর পায়া পাবেন। আর মেজবানি মাংস তো আছেই। প্রচুর মসলা, ঝাল এবং ঝোল। সাথে চট্টগ্রামের নিজস্ব স্বাদ। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত! ডেসার্ট হিসেবে এখানে আছে বোরহানি আর ফিরনী। তাছাড়া ঠাণ্ডা নামে আছে কোল্ড ড্রিংক্স এর ব্যবস্থা। এমনকি মেজবানি মেন্যুতে বৈকালিক নাশতাও করতে পারবেন এই রেস্তোরাঁয় বসে।
অবস্থান
চট্টগ্রামে মেজ্জান হাইলে আইয়ুন এর শাখা মোট তিনটি। নগরীর জামালখান, চকবাজার এবং আগ্রাবাদে আছে এর শাখা। এছাড়া চলতি মাসের ২২ তারিখ বনানীর বিটিএ টাওয়ারে ঢাকার মানুষের জন্য খোলা হয়েছে মেজ্জান হাইলে আইয়ুন এর ঢাকা শাখা।