তুলার মতো মেঘমালা, চারদিকে সারি সারি সবুজ পাহাড়। সবুজের রাজ্যে এ যেন সাদা মেঘের হ্রদ! নিশ্চয়ই ভাবছেন স্বপ্নের মত সুন্দর এরকম দৃশ্য বাস্তবে দেখা যাবে কি? আর দেখা গেলেও হয়ত যেতে হবে বহুদূরে কোনো অজানা দেশে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হল আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেই রয়েছে এরকম এক মেঘপুরী; যার নাম সাজেক ভ্যালি।
সাজেকের রূপের আসলে তুলনা হয় না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। বছরের যে কোনো সময় আপনি সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। তবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।
এই সময়ে খানিকটা শীতের আমেজ পাওয়া যায়। দিনের কিছু সময় পাহাড়ের চূড়া থাকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। শেষ বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকাশ বিদায়ী সোনার সিংহ-সূর্যদেবতা তখন পাহাড়ের কোলে হেলে পড়ছে মাত্র। সূর্যের সোনালি রংয়ে মোড়ানো সবুজ পাহাড়। দিন শেষ আর শুরুতে এই রং যেন পুরো পাহাড়কে সোনায় মুড়িয়ে রাখে।
উপত্যকা পেরিয়ে ক্রমশ পাহাড়ের ভাঁজ যেন আকাশচুম্বী হয়েছে ওখানে। আর এই দীর্ঘ উপত্যকা জুড়ে আরণ্যের সীমানা। সাজেকে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতেই নৈর্সগিক নিরবতা পাহাড়ের চারপাশে। কেবল মৌসুমী হাওয়ার মতো তীব্র বাতাস ছুটে আসছে নীচের পাহাড়গুলো ছুঁয়ে। সাজেকের কংলাক পাড়া আশপাশের পাড়াগুলো থেকে সবচেয়ে উপরে বিধায় বাতাসের ঝাপটা যেন ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
নক্ষত্র আর মিল্কিওয়েতে ভরা কংলাক, সাজেকের আকাশ। থোকায় থোকায় আকাশে জ্বলছে তারার দল। অত্যন্ত নির্জনতা পাহাড় চূড়োর পাড়া কংলাক। মৌসুমী হাওয়ায় থেমে থেমে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়োয়। আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চেনা রাতকেও অচেনা মনে হয়।
এতসব বর্ণনা শুনে হয়তো ভাবছেন সাজেক ভ্যালি যাবে শিগগিরই। কিন্তু তার আগে তো কিছু তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন-
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে মাহিন্দ্রা বা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। এক গাড়িতে করে ১২-১৪ জন যেতে পারবেন। খাগড়াছড়ি জীপ মালিক সমিতি এরইমধ্যে নির্ধারণ করেছে মাহিন্দ্রা ও চান্দের গাড়ি ভাড়া।
* খাগড়াছড়ি হতে সাজেক একদিনে আসা-যাওয়া: চান্দের গাড়ি ৫ হাজার ১০০ ও মাহিন্দ্রা ৫ হাজার ৪০০ টাকা।
* খাগড়াছড়ি হতে সাজেক ১ রাত্রিযাপন: চান্দের গাড়ি ৬ হাজার ৬০০ ও মাহিন্দ্রা ৭ হাজার ৭০০ টাকা।
* খাগড়াছড়ি হতে সাজেক ১ রাত্রিযাপন (আলুটিলা রিচাং ঝরনাসহ): চান্দের গাড়ি ৮,১০০ ও মাহিন্দ্রা ৯,৭০০ টাকা।
* খাগড়াছড়ি হতে সাজেক ২ রাত্রিযাপন: চান্দের গাড়ি ৮ হাজার ৬০০ ও মাহিন্দ্রা ১০ হাজার ৫০০ টাকা।
* খাগড়াছড়ি হতে সাজেক ২ রাত্রিযাপন (আলুটিলা রিচাং, ঝরনাসহ): চান্দের গাড়ি ১০ হাজার ৫০০ ও মাহিন্দ্রা ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ প্রশাসন এ পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় দিন দিন বাড়ছে পর্যটক সংখ্যা। আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, শীতকালে দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হবে সকাল ৯ টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। তাই ওই সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। সকালের এসকোর্ট মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এসকোর্ট ছাড়া যাবার অনুমতি পাবেন না।
সাজেক ভ্যালির বিভিন্ন রিসোর্টের ভাড়া, যোগাযোগ, বুকিং তথ্য এবং খরচ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য-
সাজেক রিসোর্ট: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট সাজেক রিসোর্ট। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। খাবারের ব্যবস্থা আছে। এসি আর নন এসি রুম গুলোর ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেনাবাহিনিতে কর্মরত বা প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে বিশেষ ছাড় রয়েছে। যোগাযোগ: ০১৮৫৯০২৫৬৯৪ অথবা ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
রুন্ময় রিসোর্ট: এই রিসোর্টে মোট পাঁচটি রুম রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। নিচ তলার রুম ভাড়া ৪ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি কক্ষে ২ জনের বেশি থাকতে চাইলে ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুজন করে থাকার দুইটি কক্ষ রয়েছে, ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৪৭৬৮৮।
মেঘ মাচাং: মেঘ মাচাং রিসোর্ট অনেকের পছন্দের শীর্ষে। কারণ, সুন্দর ভিউ ও তুলনামূলক কম খরচে থাকা যায় এখানে। আছে খাবারের ব্যবস্থা। মেঘ মাচাং-এ পাঁচটি কটেজ আছে। ভাড়া ৩ হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার টাকা। যোগাযোগ: ০১৮২২১৬৮৮৭৭।
লুসাই কটেজ: কাপল রুম, ডাবল বেডসহ আছে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। সুন্দর ডেকোরেশন ও ভালো ল্যান্ডস্কেপিক ভিউয়ের এই কটেজের রুমের ভাড়া ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যোগাযোগ: ০১৬৩৪১৯৮০০৫।
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট: সুন্দর ইকো সাজসজ্জা ও আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ সহ মেঘপুঞ্জিতে আছে ৪টি কটেজ, প্রতিটিতে ৩-৪ জন থাকা যাবে। ভাড়া চার হাজার টাকা। যোগাযোগ: ০১৮১৫৭৬১০৬৫।
ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট: রিসোর্টটির ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ অসাধারণ। কাপল রুম সিঙ্গেল বেড ২ হাজার টাকা, ডাবল বেড- ২ হাজার ৫০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৮৫৪২৪২৪২।
আদিবাসী ঘর: কম খরচে থাকতে চাইলে আদিবাসিদের ঘরেও থাকতে পারবেন। জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় থাকা যাবে। ফ্যামিলি বা কাপল থাকার জন্যে আদর্শ না হলেও বন্ধু বান্ধব মিলে একসঙ্গে থাকা যাবে।
উপরে রিসোর্ট এবং কটেজগুলো নিয়মিত ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্র-শনিবার এবং বিভিন্ন বিশেষ ছুটির দিনে ভাড়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। আবার অনেক সময় পর্যটকের আনাগোনা কম থাকলে রিসোর্টগুলোতে কিছুটা ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়।