বিশ্ববিখ্যাত ফোর্ড গাড়ির কথা কে না শুনেছে? আমেরিকার ফোর্ড মোটর কোম্পানির গাড়ি হচ্ছে ‘ফোর্ড’। আমেরিকার শিল্পপতি হেনরি ফোর্ড ‘ফোর্ড মোটর কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা মালিক। মোটর গাড়ির আবিষ্কারক না হলেও তিনিই প্রথম মোটর গাড়ির বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেন। তিনি আমেরিকার মধ্য আয়ের মানুষদের কথা চিন্তা করে ফোর্ড গাড়ি নির্মান করেন।
১৮৬৩ সালে ৩০শে জুলাই হেনরি ফোর্ড মিশিগানের গ্রিনফিল্ড টাউনশীপের একটি খামারবাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। বাল্যকালেই ফোর্ড তার বাবা-মাকে হারান। এরপর একজন প্রতিবেশীর কাছে প্রতিপালিত হন। ফোর্ডের বাবা বাল্যকালে তাকে একটা পকেট ঘড়ি দেন। মাত্র পনের বছর বয়সে তিনি ঘড়িটি বারবার নষ্ট করতেন আবার সেটা ঠিক করতেন। এটা ছিল ফোর্ডের কাছে একটা খেলার মত। এলাকার কারো ঘড়ি সারানোর দরকার হলে ডাক পড়তো ফোর্ডের।
১৮৭৬ সালে মা মারা গেলে ভীষণভাবে ভেঙে পরেন তিনি। খামারে কাজ করতে তার ভালো লাগতো না। ১৯৭৯ সালে জীবিকার সন্ধানে ডেট্রয়েটে যেয়ে মেকানিকের কাজ নেন। ঐখানেই পরিচয় হয় জেমস ফ্লেয়ার এর সঙ্গে। তাকে নিয়ে আবার ফিরে আসেন পিতৃভূমিতে এবং আবার খামারের কাজ শুরু করেন। জেমসকে সাথে নিয়ে বাষ্প-ইঞ্জিনের কলাকৌশল ভালোভাবে রপ্ত করেন।
অয়েস্টিং হাউজ নামের এক বাষ্প ইঞ্জিন কোম্পানি তাকে কাজের সুযোগ দেয়। কাজ করার পাশাপাশি তিনি গোল্ডস্মিথে ব্রায়ান্ট এন্ড স্ট্যাটন বিজনেস কলেজে হিসাবরক্ষণ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে ফোর্ড যখন নিজের খামার ও স’মিল চালিয়ে সক্ষম তখন ক্লারা আলা ব্রায়ান্ট নামে এক তরুনীকে বিয়ে করেন। এরপর ১৯৯১ সালে ফোর্ড এডিসন ইলুমিনেটিং কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসাবে চাকরী নেন।
১৯৯৩ সালের মধ্যেই ঐ কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে তার পদোন্নতি হয়। এসময় তার হাতে প্রচুর সময় থাকায় গ্যাসোলিন ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু এই কোম্পানি কম কর্মদক্ষ কিন্তু বেশী টাকার গাড়ি বানালে তার সাথে মতবিরোধ হয়। তিনি চাকরীটি ছেড়ে দেন।
প্রাক্তন সাইকেল আরোহী টম কুপারের সাথে মিলিত হয়ে আশির অধিক হর্সপাওয়ারযুক্ত দৌড়বাজ গাড়ি ‘৯৯৯’ তৈরী করেন যা ১৯০২ সালে বার্নে ওল্ডফিল্ডকে সেরা দৌড়বিদের খেতাব জেতায়। এরপর আর কোন পিছনে ফিরে তাকানো নেই। নিজেই মাত্র ২৮,০০০ ডলার পুজি নিয়ে গড়ে তোলেন ফোর্ড মোটর কোম্পানি। দিনে দিনে গড়ে ওঠে ফোর্ড এয়ারপ্লেন কোম্পানি।
তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনে খুব সৎ ছিলেন। মিথ্যার সাথে কখনো আপোশ করেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তাছাড়া বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানান। তিনিই প্রথম শ্রমিকদের দৈনিক ৫ ডলার মজুরী দেয়া শুরু করেন যা আজকের দিনে ১১০ ডলারের সমতুল্য। তার দেয়া টি-মডেল আজও সর্বজন প্রশংসিত। ১৯৪৩ সালের এপ্রিল মাসে এই মহান মানুষটি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।