দেশের বাইরে ঘোরার কথা এলে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের পরিকল্পনায় থাকে ভারতের বিভিন্ন জায়গা। হতে পারে সেটা রাজস্থানের মরুভূমি, হতে পারে কাশ্মীর কিংবা পাহাড়ঘেরা সিকিম। এছাড়া ঘুরতে পারেন আগ্রার মত ঐতিহাসিক শহরে বা কৈলাশের মত অপার্থিব জায়গায়। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার জন্য বড় একটি চিন্তা হতে পারে ব্যবস্থাপনার। আর সেখানেই সমাধান হিসেবে আছে ভারতের অন্যতম ট্রাভেল গ্রুপ মেইক মাই ট্রিপ।
নিজস্ব হোটেল ব্যবস্থাপন থেকে শুরু করে এয়ারপোর্টে নিজস্ব কাউন্টারসহ দেশে ও দেশের বাইরে হলিডে প্যাকেজ, টিকেট সার্ভিস, হোটেল বুকিংসহ নানাবিধ কাজ করে চলেছে গ্রুপটি। এছাড়াও ১৪টি শহরে আছে কোম্পানির নিজস্ব দোকান। ৩০টি সুপারশপে ফ্র্যাঞ্চাইজ ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে মেইক মাই ট্রিপ।
এছাড়া, ভারতের প্রায় সব এয়ারপোর্টেই নিজস্ব গ্রাহকদের জন্য কাউন্টার রেখেছে তারা। কিন্তু মেইক মাই ট্রিপ কেবল ভারতেই নিজেদের থামিয়ে রাখেনি। কাজ করছে ভারতের বাইরেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বেশ কিছু জায়গায় নিজস্ব অফিস আছে কোম্পানিটির।
মেইক মাই ট্রিপের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে। মূলত মার্কিন প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদের দেশে যাতায়াত সুবিধার কথা মাথায় রেখে দ্বিপ কালরা এই কোম্পানির শুর করেন। সে তুলনায় নিজের দেশে তাদের কাজ বেশ দেরিতেই শুরু হয়।
২০১১ সালে নিজেদের মোবাইল অ্যাপ করার পর একেবারেই জনসাধারণের কাছাকাছি পৌঁছতে শুরু করে মেইক মাই ট্রিপ। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাফল্যের চরম পর্যায়ে তারা আরও তিন কোম্পানির শেয়ার কিনে নেয়। যার ফলে খুব দ্রুতই নিজেদের নেটওয়ার্ক তারা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত করে ফেলে। ২০১৫ সালে ট্রাভেল প্ল্যানিং ওয়েবসাইট মাইগোলা (Mygola) কিনে নিয়ে নিজেদের সবদিক থেকেই প্রস্তুত্ করে ফেলে ভারতীয় এই কোম্পানিটি।
তবে, মেইক মাই ট্রিপের সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত ২০১৬ সালেই ধরা দিয়েছিল। ভারতের সবচেয়ে বড় ট্রাভেল বুকিং পোর্টাল আইবিবো গ্রুপ সেবছর তাদের সাথে একীভূত হয়ে পড়ে। সত্যি বলতে মেইক মাই ট্রিপের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী ছিল এই আইবিবো গ্রুপ। আর নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে আইবিবোকে বেশ ভালভাবেই হারাতে সক্ষম হয়। নতুন চুক্তির আলোকে একীভূত কোম্পানির ৬০ শতাংশের মালিকানা নিজেদের কাছে রাখতে সক্ষম হয় মেইক মাই ট্রিপ।
তাদের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মাঝেই নিজেদের শপগুলোকে ওয়ান-স্টপ-শপ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একজন ভ্রমণকারীর যা যা প্রয়োজন তার সবই এইসব দোকানে পাবার ব্যবস্থা থাকবে।
মেইক মাই ট্রিপের সিইও রাজেশ ম্যাগাও জানান, ‘আপনি যদি আমাদের ব্যবসার পুরো চিত্রটার দিকে তাকান তবে বুঝতে পারবেন আমাদের মোট আয়ের ৫৪ শতাংশ আসে নন-এয়ার (বিমান বহির্ভূত) খাত, আমাদের হোটেল, বিভিন্ন শপ এবং হলিডে প্যাকেজ থেকে। আর ৪ শতাংশ আনুষাঙ্গিক খাত থেকে।’
মেইক মাই ট্রিপের আরেকটি প্রকল্প ‘রেড বাস’ থেকে প্রতি বছর আয়ের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এতকিছুর মাঝেও পিছিয়ে নেই কোম্পানির প্রথম প্রকল্পটি। রাজেশ ম্যাগাও এর মতে, এখনও মোট আয়ের ৩৫ শতাংশের যোগান দেয় বিমানখাত।
সম্প্রতি আন্তঃনগর ভ্রমণের জন্য ক্যাব ভাড়া করার সুবিধা নিয়ে হাজির হয়েছে মেইক মাই ট্রিপ। এছাড়া ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে তারা গ্রাহকদের দিচ্ছে অনলাইনে ট্রেন টিকেট করার সুবিধাও।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রত্যেক ভারতীয়কে ২০২২ সালের মাঝে দেশের অন্তত ১৫টি ট্যুরিস্ট স্পটে যাবার জন্য অনুরোধ করেছেন। এটিকে বেশ সাদরেই গ্রহণ করেছে কোম্পানিটি। রাজেশ জানান, বিমান খাত থেকে আসা আয়ের ৬০ শতাংশ এবং হোটেল খাত থেকে আসা আয়ের ৮৫ ভাগ দেশের ভেতর থেকেই পেয়ে থাকে তাদের কোম্পানি।
তবে, বিশ্বব্যাপী করোনা হামলার পর বেশ খানিকটা পিছিয়ে যাচ্ছে মেইক মাই ট্রিপ। স্বাভাবিক নিয়মেই এসময় নিজেদেরও গুছিয়ে নিচ্ছে কোম্পানিটি। তবে পৃথিবীতে ‘আগুনের দিন শেষ হবে একদিন’-সেদিন হয়তো আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করবে ভ্রমণপিপাসুরা। দিপ কালরা আর রাজেশ ম্যাগাওর কোম্পানি ঘিরে আবারো মানুষ বলবে ‘মেইক মাই ট্রিপ’।