বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন

মিশরে রমজান মাস পালনে রীতিনীতি

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩

আল্লাহর দেওয়া বারো মাসের মধ্যে রমজান মাস অতি গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই মাহে রমজান পালন করে থাকে বিভিন্ন রীতিতে, বিভিন্ন ঐতিহ্যে।

যেমন ফেরাউনের দেশ মিশর। সেই সঙ্গে অসংখ্য নবী-রাসুল সাহাবা ওলি-আউলিয়ার দেশও মিশর। পবিত্র কোরআনে ‘মিশর’ শব্দটি পাঁচবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতাআলা অনেক নেয়ামত-অনুকম্পায় মিশরীয়দের সিক্ত করেছেন। নীল নদের পানির বরকতে মিশরের জমিন থাকে সব সময় উর্বর। তাই দেশটিকে বলা হয় নীল নদের দান।

বিশ্বের প্রাচীন কৃষ্টি সভ্যতা সমৃদ্ধ এই দেশটিতে রমজান শুরু হয় বেশ ধূমধাম আয়োজনে। এদেশের প্রতিটি বাড়ি, রাস্তা ও দোকানে ফানুস জ্বালানো দেশটির রমজানের সংস্কৃতি। দেশটির রাজধানী কায়রোর অলি-গলির দোকানগুলো এখন বাহারি রঙের ফানুসে সয়লাব। রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই দোকানিরা হরেক রকম ফানুস এনে সাজিয়েছেন দোকান। বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙ বেরঙ এর ফানুসের রয়েছে অদ্ভুত ধরনের যতসব বাহারি নাম। যেমন, আল- খামাসি, আবু শামা, আবু লাদ, আল-দালিয়াইয়া, আল-খুম্মাস, আল-বুর্জ, শামামা ইত্যাদি।

মিশরীয়দের কাছে সব থেকে জনপ্রিয় ফানুসটির নাম খামাসি। লোহা ও তামার কাঠামোতে তৈরি রঙিন কাচ দিয়ে ঝরানো ফানুসটি খুবই শক্ত ও টেকসই। ত্রিশ দশকের দিকে মিশরের সংসদ ভবনে এই ফানুসটি ঝোলানো হয়েছিল বলে হয়ত এর এত জনপ্রিয়তা।

রমজান উপলক্ষে ফানুস দিয়ে ঘর সাজানো, রাস্তা আলোকিত করা মিশরীয়দের বহু পুরনো একটি ঐতিহ্য। ফানুস মিশে আছে মিশরীয় রমজান সংস্কৃতিতে। ৩৫৮ হিজরিতে মিশরবাসী ফানুস সংস্কৃতির সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন। সে রাতে ফাতেমি খলিফা ‘তামিম মা’দ আল-মুইজ’ কায়রো প্রবেশ করেন। তার সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কায়রোকে ফানুস দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সেই থেকে রমজানে ফানুসের ব্যবহার করে আসছে মিশরীয়রা।

কায়রোর কূটনৈতিক এলাকার ৯ নম্বর রোডের এক দোকানি জানান, এখানে বিভিন্ন আকার এবং মাপের ফানুস রয়েছে, প্রকারভেদে একেকটি ফানুসের দাম ১০ গিনি (৪০ টাকা) থেকে ৩ হাজার গিনি (১২ হাজার টাকা)। তবে এর মধ্যে ছোট সাইজের ফানুস বিক্রি হচ্ছে বেশি, যার মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ গিনি বা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রমজানে ফানুসের চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। কারণ, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফানুসের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

কায়রো চেম্বার অফ কমার্সের স্টেশনারি ও শিশুদের খেলনা বিভাগের উপ-প্রধান বারাকাত সাফা জানান, গত বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন ফানুস বাজারজাত করলেও এ বছর ২ মিলিয়ন কমিয়ে ৩ মিলিয়ন ফানুস বাজারজাত করা হয়েছে। এ বছর মিশরীয় পাউন্ডের বিপরীতে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে ফানুসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। মিশর প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে প্রায় ২ লাখ রমজান ফানুস রপ্তানি করে। ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে বেসরকারি খাতে স্থানীয়ভাবে ফানুস তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে মিশর।

এছাড়া পবিত্র মাহে রমজানে দেশটিতে বিভিন্ন ধরনের আলোক শয্যার ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে। সভ্যতার আদিকাল থেকেই এ জাতির রমজানের রোজা পালনের রীতি খুবই চমৎকার। যেমন জমকালো তাদের সব কৃষ্টি ও নিদর্শন, তেমনি জমকালো সব বাতি জ্বালিয়ে রমজান উদযাপন করেন তারা। অনেকটা ফানুস আকৃতির এসব বাতি তৈরি হয় ধাতু ও রঙিন কাঁচ দিয়ে। নিখুঁত এসব কারুকাজ মূলত শতবর্ষব্যাপী প্রচলিত মিশরীয় সংস্কৃতির অসাধারণ সব সৃষ্টিকর্মকেই মনে করিয়ে দেয়। পুরো রমজান মাসে রাস্তা, দোকান, বাড়ির ছাদ—সর্বত্র ছেয়ে যায় এই বাতির আলো। রমজান মাসের মহিমা যেনো পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে আলো হয়ে।

রমজান মাসে মিশরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। ফলে রোজা পালনের সুবিধার্থে সরকারি অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টা অন্য সময়ের তুলনায় কমানো হয়। এর ফলে মিশরের মানুষ ইবাদত এবং মসজিদে বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com