মিজোরাম এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার আগেই হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলে অবাক হবেন না। আপনার বিমান গাছে ক্র্যাশ করছে, না নিরাপদে ল্যান্ড করছে ঠাহর করা যায় না। আপনার দোষ নয়, ২৫০০ মিটারের লেংপুই এয়ারপোর্ট এমনভাবে পাহাড়ের খাঁজে তৈরি যে ভয় লাগাটা স্বাভাবিক। আবার নীচ দিয়ে ¯্রােতস্বিনী আপন ছন্দে বয়ে চলেছে। মাটিতে পা রেখে তবে শান্তি। মিজোরামে আপনাকে স্বাগত। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল পাহাড়ি উপত্যকা মিজোরামের ল্যান্ডস্কেপ যতটা সুন্দর, ততটাই বিপজ্জনক।
এয়ারপোর্ট থেকে ইনার লাইন পারমিট নিয়ে গাড়িতে উঠে আইজল পৌছে দেখতে পাবেন বাড়িঘর, দোকানপাট, এমনকী রাস্তাও সব পাহাড় কেটে বানানো। দেখ মনে হয় সবই পাহাড়ের উপর ঝুলছে। সর্পিল রাস্তা পেরিয়ে হোটেলে চেক ইন করে জিরিয়ে নিন।
পরের দিন চলে যান তামডিল। আইজল থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে এই পিকনিক স্পট। সাইচুয়াল গ্রামে পড়ে এই জলাশয়। তামডিল কথার আক্ষরিক অর্থ লেক অফ মাস্টার্ড বা সর্ষের লেক। ঠিক কেন এই নাম এই নিয়ে মিজোদের মধ্যে নানা উপকথা চালু রয়েছে। শোনা যায়, এক দম্পতির খেত ছিল এই উপত্যকায়। স্বামীর অকালমুত্যুতে মহিলা একদম দিশেহারা হয়ে পড়েন। শস্যের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে নিতে হয় নিজের কাঁধে।
খেতের ঠিক মাঝে একটা বিশাল, শক্তপোক্ত সর্ষের গাছ ছিল। আশপাশের সমস্ত গাছের চেয়ে বড়। একদিন ভদ্রমহিলার স্বামী ওঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে সর্ষে গাছের বিশেষ যতœ নিতে বলেন। ভদ্রমহিলাও স্বামীর আদেশানুসারে গাছটির অতিরিক্ত দেখভাল করতে লাগলেন। গাছটি ক্রমে আরও বড় হতে লাগল। তারপর ভদ্রমহিলা আবার বিয়ে করেন। নতুন স্বামী পুরাতন স্বামীর কোন স্মৃতি রাখতে দেবেন না বলে, গাছটি উপড়ে ফেলে দেন। খেতে এর ফলে একটা বিরাট গর্ত হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে সেটি অজ্ঞাতকারণে জলে ভরে যায় এবং সৃষ্টি হয় এই লেকের। সেই থেকেই নাম তামডিল।
সময় কাটানোর সুন্দর ব্যবস্থা আছে এখানে। সকাল সকাল বেরিয়ে আবার আইজলে ফিরে আসুন। আইজল আগে দেখা না থাকলে দিনের দিন ঘুরে নিতে পারেন। আইজলের সব বাড়িঘর বাঁশ, কাঠ আর কাচের তৈরি।
স্থানীয়দের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা আছে। আর মিজোরা অত্যন্ত আন্তরিক। আপ্যায়নে কোনও ক্রটি রাখবে না। আর যেখানেই যান না কেন ভিউ পয়েন্টে একবার আবশ্যই যাবেন। পাখির চোখে গোটা শহরকে দেখার অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে যখন রাতের শহর আলোয় ঝলমল করে ওঠে, তখন মনে হয় সবটাই অলীক, অবাস্তব।
ফাংপুই
মিজোরামের অন্যতম আকর্ষণ ফাংপুই বা দ্য বøু মাউন্টেন। ব্রেকফাস্ট সেরে আইজল থেকে গাড়ি ভাড়া করে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন। আইজল থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে সাংগাউ গ্রাম। এখান থেকে আবার বøু-মাউন্টেন ১৪ কিলোমিটার দূরে। আইজল থেকে সাংগাউয়ের রাস্তা বেশ ভাল। বাড়তি পাওনা অসাধারন ল্যান্ডস্কেপ। কোথাও উঁচু, কোথাও নীচু, কোথাও আবার অতল খাদ।
রাস্তায় সঙ্গ দেবে মেঘ রোদ্দুরে লুকোচরি। কখনও আবার ঘন কুয়াশা ঢেকে দেয় চারিদিক। সাংগাউয়ের কাছাকাছি এসে দেখতে পাবেন ভারী সুন্দর এক উপত্যকা আর তার ঠিক নীচে ছিমতুইপুই নদী কলকল করে বয়ে চলেছে। ফেরিতে করে পেরেতে হয় এই নদী। যাওয়ার পথে চোখে পড়বে বেশ মজাদার দেখতে কাঠের যানে কাজে যাচ্ছেন। সাংগাউ পোঁছে সেদিনের মতো বিশ্রাম নিন। আগে বুকিং করলে ফরেস্ট রেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন।
পরের দিন বেড়িয়ে পড়–ন বাকি ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে। বেশ কিছু গ্রাম পেরিয়ে অবশেষে পোঁছবেন দ্য বøু মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্ক। এখানে থাকার জন্যে ফরেস্ট রেস্ট হাউজ আছে। দুপুর দুপুর পৌঁছে যাবেন ফলে মালপত্র প্যাকেজ করে বেড়িয়ে পড়–ন। ৭০০০ ফিট উঁচুতে এই পার্ক। ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে আলস পায়ে চলে আসুন উপত্যকার ধারে। নীচে তখনও ছিমতুইপুই নদী দৃশ্যমান। মিজোরাম ও মায়ানমারের মধ্যে বর্ডারের কাজ করে এই নদী।