বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক কানাডার স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছেন, এমন অভিযোগ তুলে সে দেশের লাখো মানুষ তাঁর কানাডার নাগরিকত্ব বাতিল করার দাবি তুলেছেন। পাঁচ দিন আগে এ দাবিতে একটি পিটিশন খোলা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি মানুষ ওই পিটিশনে সই করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপের কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনে প্রভাবশালীর ভূমিকায় রয়েছেন মাস্ক। তাঁর বিরুদ্ধে পিটিশনে বলা হয়, তিনি কানাডার জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছেন এবং দেশটির সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করছেন।
কানাডায় যদি কেউ প্রতারণা করেন, নিজের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেন অথবা অভিবাসন বা নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদনে ইচ্ছা করে তথ্য গোপন করেন, তবেই কেবল তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে। মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা উভয় দেশের নাগরিক। মাস্কের কানাডার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবিতে পিটিশন খোলা হয়েছে, এমন খবর পাওয়ার পর ধনকুবের মাস্ক নিজের মালিকানায় থাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘কানাডা সত্যিকারের দেশ নয়।’ যদিও পোস্টটি পরে মুছে ফেলা হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি খোলা ওই পিটিশনে বলা হয়, ‘আমাদের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে মাস্ক তাঁর সম্পদ ও ক্ষমতার ব্যবহার করছেন। তিনি এখন এমন একটি বিদেশি সরকারের অংশ হয়েছেন, যে সরকার কানাডার সার্বভৌমত্বকে মুছে দিতে উদ্যত হয়েছে।’
এখন পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি কানাডীয় নাগরিক ওই পিটিশনে সই করেছেন। ২০ জুন পর্যন্ত পিটিশন খোলা থাকবে এবং সই করা যাবে। পিটিশনটি মূলত প্রতীকী এবং এর কোনো আইনি জোর নেই। কিন্তু কানাডায় যদি কোনো পিটিশনে অন্তত ৫০০ মানুষ সই করেন এবং কানাডার পার্লামেন্টের অন্তত একজন সদস্যের সমর্থন পায়, তবে সাধারণত সরকার সেটি বিবেচনায় নেয়।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এক লেখক ওই পিটিশন উত্থাপন করেছেন। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য চার্লি আনগুস পিটিশনে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এই পিটিশন হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হবে না। কারণ, শিগগিরই কানাডায় নির্বাচন। ভোটের আগে বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হবে।
ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই প্রতিবেশী মিত্রদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ট্রাম্প বেশ কয়েকবার বলেছেন, কানাডার উচিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া। ট্রাম্প ক্রমাগত কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। কানাডার কয়েকটি পণ্যের ওপর এরই মধ্যে ট্রাম্প শুল্ক আরোপও করেছেন। কানাডাও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বলেছে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে এই বিভেদ রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়েছে।
কানাডার নাগরিকেরা তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ বাতিল করছেন, আমেরিকার তৈরি পণ্য বর্জন করছেন, এমনকি খেলার মাঠেও এই অবস্থার উত্তাপ দেখা গেছে। মাস্ক ১৮ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কানাডায় চলে যান। সেখানে কিংসটনের কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া শুরু করার আগে বিভিন্ন কায়িক শ্রমনির্ভর কাজ করেছেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে বড় অঙ্কের অর্থ দান করার পাশাপাশি তাঁর প্রতি সরব সমর্থন দিয়েছেন মাস্ক। এর পুরস্কার হিসেবে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাস্ককে পদ দিয়েছেন, দিয়েছেন অগাধ ক্ষমতা।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপেও জোরালো সমর্থন দিয়েছেন মাস্ক। যদিও এখন গুঞ্জন উঠেছে যে মাস্ক নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসায় এসে অবৈধভাবে কাজ করতেন। ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মাস্ককে ‘অবৈধ অভিবাসী কীট’ বলেছেন। ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের এভাবেই বর্ণনা করেন। মাস্ক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে কাজ করেননি। ২০০২ সালে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান বলে জানা গেছে।