মাল্টা, ইউরোপের দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র, তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বন্ধুসুলভ মানুষদের জন্য বিখ্যাত। সিসিলির দক্ষিণে এবং তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার উত্তর উপকূলে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জটি ভূমধ্যসাগরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
অবস্থান ও এলাকা
মাল্টা ভূমধ্যসাগরে তিনটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গঠিত – মাল্টা, গোজো এবং কোমিনো। এর মোট এলাকা প্রায় ৩১৬ বর্গকিলোমিটার। ছোট্ট হলেও, এটি ইউরোপের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটি।
জনসংখ্যা
মাল্টার জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখের কাছাকাছি। জনসংখ্যার বিচারে এটি একটি ক্ষুদ্র দেশ, তবে এখানে বসবাসরত বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষদের মাঝে সহাবস্থান লক্ষ্যণীয়।
ইতিহাস
মাল্টার ইতিহাস প্রায় ৭,০০০ বছরের পুরনো। ফিনিশিয়ানরা প্রথম এই দ্বীপ আবিষ্কার করে এবং এটি একাধিক যুগে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল। রোমান, আরব, এবং ক্রুসেড যুগের প্রভাবও এর সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারে স্পষ্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মাল্টা ছিল ব্রিটিশদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।
দর্শনীয় স্থান
মাল্টায় পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য:
- ভ্যালেটা: ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত, এটি মাল্টার রাজধানী এবং ১৫৬৫ সালে মুঘলদের বিরুদ্ধে অদ্ভুত প্রতিরক্ষা যুদ্ধের কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
- মদিনা: এই প্রাচীন শহরটি গথিক স্থাপত্যের উদাহরণ, যা দর্শনার্থীদেরকে অতীতের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
- গোজো দ্বীপ: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, এটি স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে প্রিয়।
- হ্যাল সাফ্লিয়েনি হাইপোজিয়াম: এটি একটি ৫০০০ বছরের পুরনো ভূগর্ভস্থ মন্দির।
মাল্টা ভ্রমণের কারণ
মাল্টা ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ঐতিহাসিক স্থানগুলির পাশাপাশি এখানকার সাগরতীরে সময় কাটানো, বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
জীবনযাত্রা
মাল্টার জীবনধারা অত্যন্ত সহজ, স্বাস্থ্যকর এবং প্রাণবন্ত। এখানকার মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ এবং বন্ধুসুলভ। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, সাপ্তাহিক বাজারে কেনাকাটা করা এবং স্থানীয় উৎসব উদযাপন মাল্টার জনজীবনের অংশ।
মাথাপিছু আয় ও সম্পদ
মাল্টার মাথাপিছু আয় প্রায় $৩০,০০০ এর কাছাকাছি, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনীয়। আর্থিক দিক দিয়ে এদেশের মানুষ স্বচ্ছল এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত।
অর্থনীতি ও চাকরি
মাল্টার অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন, নির্মাণ, আর্থিক সেবা এবং ইলেকট্রনিক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। চাকরির সুযোগ প্রচুর এবং এখানে বিদেশীদের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, হসপিটালিটি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে।
সংস্কৃতি ও বিনোদন
মাল্টার সংস্কৃতি রোমান ক্যাথলিক ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। উৎসব, ফেস্টিভাল, এবং জাতীয় অনুষ্ঠানগুলি তাদের জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
খাবার ও পানীয়
মাল্টার খাদ্যসংস্কৃতি ভূমধ্যসাগরীয়, যেখানে সি-ফুড, পাস্তা, এবং মাংসের বিভিন্ন ধরনের ডিশ জনপ্রিয়। স্থানীয় পানীয়গুলির মধ্যে মাল্টিজ ওয়াইন বিশেষভাবে বিখ্যাত।
হোটেল ও রেস্তোরাঁ
মাল্টায় পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল রিসোর্ট থেকে শুরু করে বাজেট হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এখানকার অনেক রেস্তোরাঁতে ভূমধ্যসাগরীয় স্বাদের খাবার পাওয়া যায়।
মাল্টার সৌন্দর্য, ইতিহাস, এবং বন্ধুসুলভ পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে বারবার।