জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় ৩৫ জন বাংলাদেশি। তাদের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে এবং তারা সেখানে কোনও কাজ পাচ্ছেন না। নিজেদের এই পরিস্থিতিকে কার্যত ‘নরক যন্ত্রণার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা।
এছাড়া বাংলাদেশে ফিরতে মালযেশিয়া সরকারের সহায়তাও চেয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার জোহর বাহরু শহরের একটি কারখানা শ্রমিক নিয়োগের চেষ্টা করছে শোনার পর দেশটিতে অবস্থান করা প্রায় ৩৫ জন বাংলাদেশি ভেবেছিলেন তাদের খারাপ সময় শেষ হয়ে গেছে।
একটি বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে তারা গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজ করার জন্য মালয়শিয়ার পেনাং দ্বীপে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা পরে ওই গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং তারাই একমাত্র গ্রুপ যারা কোনও চাকরি পাননি।
মূলত এই বাংলাদেশিদের বহনকারী বাসকে মঙ্গলবার জোহর বাহরু শহরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। একজন শ্রমিক বলেন, এর কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি। পরে এসব শ্রমিককে সুবাং জয়ার একটি ডরমেটরিতে রাখা হয়। আর সেখানে টয়লেট রয়েছে মাত্র একটি।
অবশ্য এই কর্মীদের বেশ সহায়তা করেছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। ওই শ্রমিক বলছেন, তিনি এবং তার গ্রুপের অন্য শ্রমিকরা কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
তার দাবি, কুয়ালালামপুরের হাইকমিশন থেকে তাদের জোহর শহরে চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১৫০০ রিঙ্গিত করেও দিয়েছে। তবুও পুরো ঘটনার কারণে তারা হতবাক এবং হতাশ হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশি ওই শ্রমিক বলেন, ‘আমরা আমাদের পাসপোর্ট ফেরত চাই। একইসঙ্গে এখানে আমাদের কোনও চাকরি দেওয়া হোক বা সেটি না হলে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।’
তার ভাষায়, ‘আমরা গত কয়েক মাস ধরে নরক যন্ত্রণা সহ্য করছি। আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছি এবং এটা আর নিতে পারছি না।’
অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ক কর্মী অ্যান্ডি হল বলেছেন, তিনি শ্রমিকদের প্রতিনিধি এবং কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাদের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। এটি মানব পাচার এবং জোরপূর্বক শ্রমের সমতুল্য।’
অ্যান্ডি হল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদনের তৃতীয় স্তরে থাকতে পারে মালয়েশিয়া। মূলত পাচার নির্মূল বা রোধের জন্য যেসব দেশ ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে না এবং পূরণের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টাও চালায় না সেসব দেশকে তৃতীয় স্তরে রাখা হয়ে থাকে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি শিগগিরই তার প্রতিক্রিয়া জানাবেন।