রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

মালয়েশিয়ায় অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মীদের বৈধতার সুযোগ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মালয়েশিয়ায় চলছে অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়া। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশিদের পোস্ট অফিসের পাশাপাশি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সরাসরি পাসপোর্ট বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন।

বুধবার (৩০ আগস্ট) কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইং-এর প্রথম সচিব মিয়া মোহাম্মদ কেয়ামউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, কুয়ালালামপুর সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউস থেকে সরাসরি পাসপোর্ট দেওয়া হবে। সেবাটি গ্রহণ করতে আগে থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় চলমান বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতার লক্ষ্যে পোস্ট অফিসের পাশাপাশি আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কুয়ালালামপুরের সিটি ব্যংক লিঃ (সিবিএল) মানি ট্রান্সফার হাউস থেকে সরাসরি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা।

সরাসরি পাসপোর্ট সেবা পেতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবাইকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এর আগেও বিভিন্ন প্রদেশে সরাসরি পাসপোর্ট বিতরণ করেছে হাইকমিশন।

সম্প্রতি ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ বলেছেন, ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের (জিম) মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত কঠোর শর্ত অনুযায়ী বৈধ এবং যোগ্য নিয়োগকর্তাদের দ্বারা নিযুক্ত বিদেশি কর্মীদের (অবৈধ অভিবাসী) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

এ বছরের শুরুতে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অবৈধ অভিবাসীদের রিক্যালিব্রেশন প্ল্যান ২.০ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সেদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফ উদ্দিন ইসমাইল চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

এ কর্মসূচির কেতাবী নাম ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম’ এ অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বৈধকরণ প্রক্রিয়া চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এই সময়ের মধ্যে যেন সকল প্রবাসী বাংলাদেশি তাদের নাম নিবন্ধন করতে পারে সেই লক্ষ্যে পাসপোর্ট সেবা দিতে এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

যেসব পাসপোর্ট আবেদনকারীর তথ্য অনলাইনে থাকবে শুধুমাত্র তারাই সরাসরি উপস্থিত হয়ে সরাসরি পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়াও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণের সার্ভিসটি ও যথারীতি চালু থাকবে।

নির্ধারিত স্থান থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য appointment.bdhckl.gov.bd/other ঠিকানায় গিয়ে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ডাকযোগে এসব পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে appointment.bdhckl.gov.bd/poslaju ঠিকানায় প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণপূর্বক আবেদন করতে হবে।

এদিকে লেবার রিক্যালিব্রেসির পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য দেশটিতে বিভিন্ন খাতে কাজ করা অবৈধ শ্রমিকদের যেন তাদের মালিকেরা বৈধভাবে নিয়োগ করতে পারেন। ইমিগ্রেশন বিভাগ অবশ্য নির্দিষ্ট করে দেয়, কোন কোন খাতে আর কোন কোন দেশের শ্রমিকেরা এ সুবিধা নিতে পারবেন।

দেশটির অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্কফোর্স রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) ২.০-এ ৫১ হাজার ৭৫৩ জন নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সাত লাখ ২০ হাজার ৯৯ অবৈধ অভিবাসী (পার্টি) নিবন্ধন করেছেন।

এদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন তা জানা না গেলেও তালিকায় শীর্ষেই থাকে বাংলাদেশ। ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত খাতের (সেক্টর) ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি আবেদন আসে নির্মাণ খাত থেকে যা ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৫, সেবা খাতে ২০৪,৬৪৭, উৎপাদন খাতে ৫৪,২২৪, কৃষি খাতে ৫৪,১৬৩, বৃক্ষরোপণ ৪০,২২৮, গৃহকর্মী ৩,৮২৫ এবং খনি ও খনন খাত থেকে।

মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কতজন বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক রয়েছে, তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে দুই থেকে আড়াই লাখের বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশি আছেন বলে ধারণা করা হয়।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফ উদ্দিন বলেন, দেশে-বিদেশি কর্মীর চাহিদা পূরণে এই প্রোগ্রাম খুবই কার্যকর। নিয়োগদাতাদের জন্যও এটা সস্তা। কারণ, তাদের এখন কর্মী নেওয়ার জন্য কোনো এজেন্সিকে বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না।

আটটি খাতে নিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের বৈধতার অনুমতি দেবে মালয়েশিয়া। এগুলো হলো উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তারক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান ও বিদেশি গৃহকর্মী। এসব খাতে বৈধতার জন্য কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।

২৬ জুলাই হারিয়ান মেট্রোতে এক সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ বলেছেন, নিয়োগকর্তারা আরটিকে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করবেন না এবং নথিপত্র নেই এমন কর্মী নিয়োগ করছেন বলে প্রমাণিত হবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩ (অ্যাক্ট ১৫৫) এবং রেগুলেশনস অ্যান্ড পাসপোর্ট অ্যাক্ট ১৯৬৬ (অ্যাক্ট ১৫০) অনুযায়ী নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এমনকি ১০ হাজার রিঙ্গিত থেকে ৫০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানাসহ জেল এবং বেত্রাঘাতও করা হবে।

পরিচালক বলেন, ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩ এর ৫৫ই ধারা অনুসারেও তদন্ত করা হবে যা অবৈধ অভিবাসীকে নিয়োগ দেয়। এক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হলে, প্রত্যেক অভিবাসীকে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার রিঙ্গিত বা অনধিক ১২ মাসের কারাদণ্ডসহ উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com