শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

মালদ্বীপ ভ্রমণের আগে জেনে নিন দেশটির দর্শনীয় স্থান

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২

মন্ত্রমুগ্ধ নীল জলরাশি ও রোমাঞ্চকর সমুদ্র তলদেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাইলে নির্দ্বিধায় ঘুরে আসুন মালদ্বীপ

আমরা অনেকেই ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। ভ্রমণ মানে শুধু সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে নিয়ে প্রিয় পানীয়তে চুমুক দেওয়া নয়। নয় অস্ত যাওয়া সূর্যটাকে হা করে গিলে ফেলার ভঙ্গিমাকে ফ্রেমবন্দি করে ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা। ভ্রমণের রয়েছে এমন কিছু উপকারিতা, যা আমাদের জীবনযাপনকে সহজ ও সুন্দর করে।

মন্ত্রমুগ্ধ নীল জলরাশি ও রোমাঞ্চকর সমুদ্র তলদেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাইলে নির্দ্বিধায় ঘুরে আসুন মালদ্বীপ। ১২০০টি দ্বীপ এবং ২৬টি প্রবালদ্বীপের এই অপরূপ দ্বীপদেশটি অপার্থিব সব বিলাসিতার কেন্দ্রবিন্দু।

বাংলাদেশি পর্যটকদের স্বপ্নের গন্তব্য সাগর মাঝের এই এক টুকরো স্বর্গটি। অন এরাইভাল ভিসার সুবিধায় তারা নিমেষেই মেটাতে পারেন নিজেদের সমুদ্র তৃষ্ণা। মালদ্বীপ ভ্রমণকে উদ্দেশ্য করে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে কোনো এক শীতে অথবা বৃষ্টিস্নাত মৌসুমে বাজেট ট্যুর দেওয়া যেতেই পারে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক ওয়াটার অ্যাক্টিভিটি করতে মালদ্বীপের কোথায় কোথায় যাবেন।

মালদ্বীপের বিখ্যাত ১০টি দর্শনীয় স্থান

মালে দ্বীপ

মালদ্বীপের রাজধানী মালে দেশটির সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর। মালদ্বীপের অধিকাংশ দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকায় মালদ্বীপ ভ্রমণে বিশ্ব পরিব্রাজকদের প্রথম পছন্দ এটি। এখানে আছে প্রবাল পাথরে বানানো ওল্ড ফ্রাইডে বা হুকুরু মস্ক, মালে মাছ বাজার, ভারুনুলা রালহুগান্ধু, মালে জাতীয় যাদুঘর, মুলি আজ প্যালেস এবং সুনামি স্মৃতিস্তম্ভ।

স্নোর্কেলিং ও সার্ফিং-এর জন্য উপযুক্ত জায়গা এই দ্বীপটি। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্যবস্থা আছে মালে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নামার। এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৪ কিলো দূরত্বে ট্যাক্সি করে পৌঁছানো যায় মালেতে। এছাড়া এয়ারপোর্টের সামনে থেকে স্পিডবোট বা ফেরীতে চেপেও যাওয়া যায় এই দ্বীপে। বাংলাদেশ থেকে বিমানে যাতায়াত সহ এই মালে ভ্রমণে একজনের খরচ হতে পারে দিন প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

বারোস দ্বীপ

ভারতের সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে এই বিলাসবহুল রিসোর্ট দ্বীপটি সবার ঊর্ধ্বে। হানিমুনের জন্যে বিখ্যাত এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ ওয়াটার স্কাইং, উইন্ড সার্ফিং, ওয়াটার বোর্ডিং এবং ক্যানোইং।

মালে এয়ারপোর্ট থেকে ২৫ মিনিট দূরত্বের বারোসে যাবার একমাত্র মাধ্যম স্পীড বোট বা ফেরী। বিমান ভাড়া ছাড়াই এই দ্বীপ ভ্রমণ খরচ দিন প্রতি ৩৮ থেকে ৭৭ হাজার টাকা।

হুলহুমালে দ্বীপ

দ্বীপদেশ মালদ্বীপের মধ্যমণি হলো এর বৃহত্তম দ্বীপ হুলহুমালে। স্বল্প ব্যয়ের হোটেল, রেস্তোঁরা এবং রাজধানীর সন্নিকটে থাকার জন্য এই দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মালে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হুলহুমালের সৈকতে স্থলপথেই পৌছানো যায় ১০ মিনিটে। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে হুলহুমলে বিচ, হুলহুমলে সেন্ট্রাল পার্ক, এইচডিসি বিল্ডিং, এবং হুকুরু মিসকি।

বানানা রিফ

উত্তর মালে এটল-এ অবস্থিত এই রিফ বিশ্বের সেরা ডাইভিং সাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম। মালদ্বীপের প্রথম আবিষ্কৃত এই ডাইভিং সাইটটি গথুগিরি নামেও পরিচিত। সমুদ্র গর্ভের তিনশ মিটার এই দীর্ঘ প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রপৃষ্ঠে চোখ ধাঁধানো নানা রং ছড়িয়ে দেয়। তাই রাতের বানানা রিফকে কেউ এলিয়েন জগৎ বললেও তাকে দোষারোপ করা যাবে না। এখানকার মুল আকর্ষণ স্কুবা, স্নোর্কেলিং, প্রবাল প্রাচীরে জেট স্কিইং আর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আলিমাথা দ্বীপ, বিয়াধু দ্বীপ, মান্তা পয়েন্ট অন্যতম।

মিহিরি দ্বীপ

পার্থিব জগৎ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকার এক মোহনীয় অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে মিহিরি দ্বীপে। এর ৩০টি জলের ভিলার প্রত্যেকটি যে কোন নতুন দম্পতিকে পৃথিবীর কোনো আদিম দ্বীপে অ্যাডাম ও ইভের আবহ দিবে। ভেজা মৌসুমে এর রেস্তোরাঁগুলোর মুখরোচক খাবার আর ডুব সাঁতার বারবার টেনে নিয়ে যেতে চাইবে মিহিরি দ্বীপে। যেকোনো আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরে নিমেষেই হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে।

ভবিনফারু দ্বীপের সৈকত

এই দ্বীপের সৈকত মালদ্বীপের সেরা পাবলিক সৈকতগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার জেট স্কিইং, বন্যান ট্রি ভবিনফারুর ঘরগুলো, প্যারাসেইলিং এবং স্নোর্কেলিং বছরের অধিকাংশ সময়ে ভিড়ের প্রধান কারণ। তলদেশে প্রবাল আর রঙিন মাছের মাঝখানে নিজেকে প্রকান্ড অ্যাকোয়ারিয়ামে বন্দি মনে হবে। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্পিডবোট এ করে ২৫ মিনিটে চলে আসা যায় এই সৈকতে।

মাফুসি দ্বীপ

মালদ্বীপের দক্ষিণ এটল-এ মাফুসি দ্বীপটি বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রশস্ত পাঁচ তারকা হোটেলে পূর্ণ না থাকলেও এর আছে হোয়াইট স্যান্ডি সৈকত ও স্পার্কলিং ওয়াটার। মালে থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরত্বের এই নির্জন দ্বীপে রোমাঞ্চের স্বাদ মিলবে উইন্ড সার্ফিং, কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং, ও প্যাডেল নৌকার মাধ্যমে। এই নির্জনতার স্বাদ পেতে তীরের অদূরে মাঝে মধ্যে চলে আসে তিমি ও হাঙ্গর।

হুভাহেন্দু দ্বীপ

হুভাহেন্দুর শান্ত জল এবং সবুজাভ দীপ্তি যেকোনো মানুষকে নতুন জীবন দান করতে সক্ষম। জীবনের যান্ত্রিকতা ও নৈরাশ্য থেকে বিদ্যুতের গতিতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে এর বালুকাবেলা। সব বয়সের মানুষের জন্যই মানানসই করে বানানো এই পর্যটন এলাকাটি পর্যটকদের কাছে সেরা জায়গাগুলোর একটি। শুধু মালদ্বীপেরই নয়; এখানকার রেস্তোরাঁগুলো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রীতিমত গোটা বিশ্বের স্বাদ সরবরাহের।

বায়োলুমিনেসেন্ট সৈকত

প্রিয় সঙ্গীর সঙ্গে জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহুর্তটি কাটানোর জন্য যে কেউই এই অপূর্ব সৈকতটিকে তার প্রথম পছন্দ হিসেবে রাখতে চাইবে। আকাশের রঙিন বলয়গুলো দেখতে দেখতে ভাধু দ্বীপের এই সৈকত ধরে হাটার মত উত্তেজনাপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না।

ঢেউগুলো শুধু পায়ের দাগ মুছে দিতে বালির উপর আছড়ে পড়ে না, বরং রাতের বেলায় তার উজ্জ্বল ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন দেখিয়ে পথচারিকে মুগ্ধ করতে চায়। রাতের এই পরাবাস্তব দৃশ্যের পাশাপাশি এই উপকূলে আছে বিভিন্ন হিপ ক্যাফে। হুলহুমালে দ্বীপ পরিদর্শন করে ফেরীতে চড়ে এখানে সহজেই চলে আসা যায়।

ফুলহাধু সৈকত

মালদ্বীপের সাধারণ বিলাসিতা বা অত্যধিক ভিড় এই সৈকতের নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য নয়। মালদ্বীপের শহরস্থলের কোলাহল থেকে সম্পূর্ণ দূরে এক অপরূপ সমুদ্রস্নানের সুযোগের অপর নাম ফুলহাধু।

মালে বিমানবন্দরের সামনে থেকে স্পিডবোটগুলো চার ঘণ্টার মধ্যে এই সৈকতে পৌঁছে দেবে। একটু আলাদা ভাবে ভ্রমণ উপভোগ করতে চাওয়া মিনিমালিস্ট পর্যটকরা প্রায়ই পছন্দ করেন এই দ্বীপের হোটল-রেস্তোরাঁগুলোকে।

বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ খরচ

বাংলাদেশের ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে মালদ্বীপে যাওয়া-আসায় প্রায় ৪৩ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে যায়। অন্তত দেড় মাস আগে থেকে টিকেট কাটলে বিমান ভাড়া অনেকটা সাশ্রয়ী হয়। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কার বান্দারনায়াকে ট্রানজিট নিয়েও মালদ্বীপের মালেতে পৌঁছানো যায়। শ্রীলঙ্কা থেকে আকাশপথে মালদ্বীপ যেতে সময় নেয় প্রায় ১ ঘণ্টা। এভাবে বিমান ভাড়া বাবদ খরচ অনেকটাই কমে আসে। তাছাড়া একসঙ্গে দুই দেশ ঘোরাও হয়।

মালদ্বীপের পর্যটন এলাকা মুলত দুটি অংশে বিভক্ত। এক: পাবলিক আইল্যান্ড, দুই: প্রাইভেট আইল্যান্ড; স্বভাবতই প্রাইভেটগুলোর খরচ আকাশছোঁয়া। রিসোর্টে না থেকে শহরে থাকতে গেলে দুইজনের জন্য খরচ পড়ে ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা। আইল্যান্ডের কাছাকাছি কোনো রিসোর্টে রাত্রিযাপনে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় জন প্রতি ১৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা। মালদ্বীপের খাবারের পেছনে খরচ যাবে প্রতিবেলা নূন্যতম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। স্পিডবোট ভাড়া প্যাকেজ মূল্য ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

পরিশিষ্ট

মালদ্বীপ ভ্রমণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত। যেহেতু বেশ ব্যয়বহুল জায়গা, তাই ভ্যাকেশন বা পিক সিজন এড়িয়ে চলাটাই উত্তম। ওখানকার সবকিছুতেই প্রায় ২৫% ট্যাক্স, আর এটাই সবকিছুর অত্যধিক দামের কারণ।

তবে লোকাল মেনু থেকে খাবার পছন্দ করলে খরচ কিছুটা কমে। এই দ্বীপদেশে একটা বড় সুবিধা হলো এখানে ডলার এক্সচেঞ্জ করতে হয় না। কিন্তু কার্ড ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা ট্যাক্স রেট অনেক বেশি। কোভিড প্রটোকল অনুযায়ী বর্তমানে কোনোরকম আরটি-পিসিআর প্রয়োজন হয় না। তবে ভ্রমণের পূর্বে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন সাইটে ভ্রমণকারিী হেল্থ ডিক্লারেশন দিয়ে কিউআর কোড জেনারেট করতে হয়। আর আসার সময় ভারতের এয়ার সুবিধা ফর্ম পূরণ করা জরুরি।

ট্রিবিউন 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com