মালদ্বীপ, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যা তার সাদা বালির সৈকত, ফিরোজা নীল সমুদ্র এবং বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর জন্য বিখ্যাত। এই সুন্দর দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশের মূল দ্বার হল ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা মালদ্বীপের প্রধান বিমানবন্দর। মালদ্বীপে আসা অধিকাংশ পর্যটক এই বিমানবন্দর দিয়েই প্রবেশ করে।
ইতিহাস
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগের নাম ছিল মালদ্বীপের ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি ১৯৬০ সালে প্রথমে সামরিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে এটি বেসামরিক বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। মালদ্বীপের প্রথম রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম নাসিরের সম্মানে বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়। ২০১৭ সালে নাম পরিবর্তন করে ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখা হয়, এবং এই বিমানবন্দর মালদ্বীপের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে আসছে।
বিমানবন্দরের আকার এবং অবস্থান
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপের রাজধানী মালের কাছাকাছি হুলহুলে দ্বীপে অবস্থিত। এটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত হলেও, মালদ্বীপের পর্যটন খাতের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং সজ্জিত। বিমানবন্দরের আকার সীমিত হলেও এটি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।
কতগুলো এয়ারলাইন এই বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত হয়
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশ্বব্যাপী ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন পরিচালিত হয়। এর মধ্যে কিছু বড় এয়ারলাইন হলো:
এমিরেটস
কাতার এয়ারওয়েজ
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস
শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস
মালদ্বীপের নিজস্ব মালদিভিয়ান এয়ারলাইনস এবং ফ্লাইমে
বিমান চলাচল ও ট্রাফিক
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতি বছর প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন যাত্রী পরিচালনা করে। এটি মূলত পর্যটকদের গন্তব্য হওয়ায় ট্রাফিকের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে আসে। মালদ্বীপের পর্যটন মৌসুমে, বিশেষ করে শীতকালে, বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভিড় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
বিমানবন্দরের সেবা
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করে। আধুনিক চেক-ইন সিস্টেম থেকে শুরু করে দ্রুত পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ এবং লাগেজ হ্যান্ডলিং সেবা রয়েছে। এছাড়া, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিমানবন্দরে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই, মানি এক্সচেঞ্জ, এবং ভ্রমণ তথ্য কেন্দ্র রয়েছে।
ডিউটি ফ্রি শপ
বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপগুলো আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য করমুক্ত পণ্য সরবরাহ করে। এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পারফিউম, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিকস, এবং বিলাসবহুল পণ্য পাওয়া যায়। ডিউটি ফ্রি শপিং মালদ্বীপে আসা এবং যাওয়া যাত্রীদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ।
খাবার এবং পানীয়
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক খাবার পরিবেশন করা হয়। মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী সীফুড থেকে শুরু করে পশ্চিমা খাবার ও ফাস্ট ফুডও এখানে পাওয়া যায়। এছাড়াও, ক্যাফেগুলোতে কফি, জুস, এবং বিভিন্ন পানীয় পাওয়া যায়, যা দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।
পরিবহন ব্যবস্থা ও স্থানান্তর
বিমানবন্দর থেকে রাজধানী মালেতে পৌঁছানোর জন্য ফেরি এবং স্পিডবোট রয়েছে, যা মাত্র ১০-১৫ মিনিটের পথ। এছাড়া মালদ্বীপের বিভিন্ন রিসোর্টে যাওয়ার জন্য সি-প্লেন এবং প্রাইভেট বোট সার্ভিসও পাওয়া যায়। অধিকাংশ রিসোর্ট বিমানবন্দর থেকে তাদের নিজস্ব বোট বা প্লেন ব্যবস্থার মাধ্যমে অতিথিদের নিয়ে যায়।
কার্গো সেবা
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপের অন্যতম প্রধান কার্গো হাব। এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় কার্গো পরিষেবা পরিচালিত হয়। সামুদ্রিক খাদ্য, মাছ, এবং বিভিন্ন সামগ্রী মালদ্বীপ থেকে রপ্তানি করা হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা পণ্যও এখানে আসে।
যাত্রী হ্যান্ডলিং
বিমানবন্দরটি আধুনিক যাত্রী হ্যান্ডলিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীকে সেবা প্রদান করে। প্রাথমিক চেক-ইন থেকে লাগেজ হ্যান্ডলিং পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যাত্রীদের জন্য সঠিক এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া, যাত্রীরা স্বয়ংক্রিয় কিয়স্ক ব্যবহার করে দ্রুত চেক-ইন করতে পারেন।
উপসংহার
ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপে প্রবেশের মূল দ্বার এবং এটি দেশটির পর্যটন শিল্পের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি। বিমানবন্দরের সেবা, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, এবং আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা মালদ্বীপকে পর্যটকদের জন্য একটি প্রিয় গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলেছে।