করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। করোনার ধাক্কা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত রেখেছে দেশটি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব কথা বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ‘২০২১ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’ প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এ দেশে রয়েছে একটি বৃহৎ, তরুণ ও কঠোর পরিশ্রমী শ্রমশক্তি। এখানকার বেসরকারি খাতও প্রাণবন্ত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন প্রশাসনের তথ্যমতে, তারা ১৭০টি দেশের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ওইসব দেশ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কেমন বাজার হতে পারে তার ভিত্তিতে এধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।
গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়, তবে সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনো বাকি। বাংলাদেশ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো বেশ কিছু বাধা দূরীকরণে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। তবে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত উপকরণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শ্রম আইন কার্যকরে শিথিলতা এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বাধা সৃষ্টি করছে।
এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে আরও বলা হয়েছে, একটি তরুণ শ্রমশক্তি এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা বাজারের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে এক দশকে ধরে ধারাবাহিকভাবে ছয় শতাংশের বেশি বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শুধু ২০২০ সালে করোনাজনিত মন্দার কারণে এতে বিঘ্ন ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার কৃষি-বাণিজ্য, টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ইলেক্ট্রনিকস, তথ্য-প্রযুক্তি, প্লাস্টিক, স্বাস্থ্যসেবা, মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ, ফার্মাসিউটিক্যাল, জাহাজ নির্মাণ এবং অবকাঠামোর মতো খাতগুলোতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের সন্ধান করছে। এর জন্য দেশটি নিজস্ব শিল্পনীতির আওতায় এবং রফতানিমুখী প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিনিয়োগের জন্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা চালু করেছে।
মার্কিন প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের স্থান সংকুচিত হওয়া, বিচারিক স্বাধীনতা কমে যাওয়া, গণমাধ্যম এবং এনজিওগুলোর স্বাধীনতা হুমকিতে থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শরণার্থী জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মতো বিষয়ও।