1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
মারা গেছেন “বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট”
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

মারা গেছেন “বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট”

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মুহিকা ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন, যিনি “পেপে” নামেও পরিচিত ছিলেন।

২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ে শাসন করা এই সাবেক গেরিলা যোদ্ধা “বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট” হিসেবে পরিচিত ছিলেন। খুবই সাধারণ জীবনযাপনের কারণেই তৈরি হয়েছিল তার এই পরিচিতি।

উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখেন- “আপনি আমাদের যা কিছু দিয়েছেন এবং জনগণের প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ”।

প্রয়াত এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তার জীবনযাপন বা চলাফেরা ছিল খুবই সহজ ও সাধারণ। ভোগবাদ বিরোধী মনোভাব এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারের কারণে তার ব্যাপক পরিচিতি তৈরি হয়েছিল।

তার শাসনামলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে উরুগুয়ে গাঁজা সেবনের বৈধতা দেয়। এছাড়া গর্ভপাতের অধিকার, সমলিঙ্গের বিয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিল উরুগুয়ে। মুহিকা লাতিন আমেরিকা ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন।

মাত্র ৩৪ লাখ জনসংখ্যার দেশ উরুগুয়ের একজন রাষ্ট্রপতি, তবুও বিশ্বজুড়ে ছিল তার জনপ্রিয়তা। যদিও তার পরে যারা তার উত্তরাধিকার হিসেবে এসেছিল ওই পদে তারা দেশটিতে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।

তাকে দেখলে কেউ মনেই করতে পারতেন না যে তিনি একজন রাজনীতিবিদ। যদিও বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। তিনি বলতেন, রাজনীতি, বই কিংবা কৃষিকাজের প্রতি তার আগ্রহের বিষয়টি তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। যিনি মন্টেভিডিও শহরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তাকে বড় করেছেন।

যুবক বয়সেই তিনি উরুগুয়ের ঐতিহ্যবাহী দল “ন্যাশনাল পার্টির” সদস্য হন। যা পরে তার সরকারের মধ্য ডানপন্থী বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে।

১৯৬০-এর দশকে তিনি তুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (এমএলটিএন) প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। যেটি ছিল একটি বামপন্থি গেরিলা সংগঠন। যারা ছিনতাই, অপহরণ ও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। যদিও মুহিকা সবসময়ই বলে এসেছেন তিনি কখনো কাউকে হত্যা করেননি।

কিউবার বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমএলএন-টি উরুগুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে গোপন প্রতিরোধের একটি প্রচারণা শুরু করে। যদিও তখন উরুগুয়ের সরকার ছিল সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক। তবে বামপন্থিরা সেটিকে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী বলে অভিযুক্ত করে আসছিল।

খুবই সাধারণ জীবনযাপনের কারণেই “গরিব প্রেসিডেন্ট” পরিচিতি তৈরি হয়েছিল তাঁর। ছবি সংগৃহীত
খুবই সাধারণ জীবনযাপনের কারণেই “গরিব প্রেসিডেন্ট” পরিচিতি তৈরি হয়েছিল তাঁর। ছবি সংগৃহীত

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই সময়ের মধ্যে মুহিকা চারবার ধরা পড়ে কারাবন্দি হন। ১৯৭০ সালে তাকে ছয়বার গুলিও করা হয়েছিল। তিনি বেঁচে ফিরেছিলেন মৃত্যুর মুখ থেকে। তিনি দুইবার কারাগার থেকে পালিয়েছিলেন। একবার ১০৫ জন সহযোগীকে নিয়ে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে ছিলেন। যা ছিল উরুগুয়ের ইতিহাসে অন্যতম বড় জেল পালানোর ঘটনা।

১৯৭৩ সালে সামরিক বাহিনী উরুগুয়ের ক্ষমতা দখল করলে, তারা মুহিকাসহ ৯ জন বন্দিকে “জিম্মি” করে গেরিলা হামলা বন্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে তিনি ১৪ বছরেরও বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন। তাকে নির্যাতন করা হয় এবং নিভৃত সেলে রাখা হয়। ১৯৮৫ সালে দেশে গণতন্ত্র ফিরলে তিনি মুক্তি পান।

তিনি বলতেন, কারাগারে তিনি পাগলামির স্বাদ পেয়েছেন। বিভ্রমে ভুগতেন এবং এমনকি তিনি কথা বলতেন পিঁপড়ার সাথেও।

নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, যেদিন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন সেই দিনটি ছিল তার কাছে সবচেয়ে আনন্দের দিন। সেই দিনটি তার কাছে এতটাই আনন্দের দিন ছিল যে সেটি রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিনের চেয়েও আনন্দের ছিল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com