শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন

মায়া রিভারা

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অলিভিয়ার সাথে এত অল্প সময়ে অনেক আন্তরিকতা হয়ে গেলো । আমি আমতা আমতা করে অলিভিয়াকে জিজ্ঞাস করলাম, তোমার হাসবেন্ড কোথায় ? তোমার কোন ছেলেমেয়ে আছে । আমার প্রশ্নের জবাবে অলিভিয়া তার জীবনের খাতা খুলে বসলো আমার কাছে । বলতে থাকলো সে তার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছিলো কারন সে একটা সন্তান চায়। কিন্তু সে অবিবাহিত অবস্থাতে সন্তান চায় না । বিয়ের পর তাদের বাচ্চা হচ্ছে না দেখে চললো চিকিৎসা।

অলিভিয়া ঠিক হোল কিন্তু তবুও সন্তান ধারন করতে পারছে না। তাই তার স্বামীকে পাঠানো হোল নানা ধরনের পরীক্ষাতে । জানা গেলো তার স্বামীর পিতা হবার ক্ষমতা নেই । আমি আবারো জিজ্ঞাস করলাম, তোমার স্বামী এখন কোথায় ? অলিভিয়া নির্বিকার ভাবে জবাব দিলো সে কারাগারে । আমি চমকে উঠলাম, জিজ্ঞেস করলাম কেন? অলিভিয়া আবারো নির্বিকার ভাবে জবাব দিলো কারন সে একজন চোর । আমিতো চোরের বউ হয়ে থাকতে পারি না তাই তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি । আমি এখন আমার মতো আনন্দে আছি । ভাবলাম ঠিকই করেছে অলিভিয়া চোরের বউ চুন্নি সে পরিচয় নিয়ে কেন থাকবে।

সময় হয়ে গেলো উড়োজাহাজে উঠার ।দুজন বিদায় নিয়ে উড়োজাহাজে উঠে গেলাম। আমাদের আর উড়োজাহাজের ভেতরে দেখা হোল না ।

উঠে বসলাম উড়োজাহাজে । এই বিমানে আমরা সবাই ম্যাক্সিকোর নানা রেজোটে যাবার যাত্রী এককথাতে আমরা সবাই টুরিস্ট । সবাই নামবো ক্যানকুন বিমান বন্দরে, সেখান থেকে যে যেখানে যেতে চায় যাবে। বিমান আকাশে উঠার সাথে সাথে এয়ার হোস্টেজরা ওয়াইন বিতরন করে আমাদের ভ্রমনের অভিনন্দন জানালো।

আমি চিরদিন আকাশ পথে ভ্রমনে খুবই ভীত একজন মানুষ । বিমানটি একটু নড়েচড়ে উঠলেই আমার হৃদ যন্ত্রের গতিবিধি বৃদ্ধি পায় । আর আমি আতঙ্কে আমার তহবিলে যতো দোয়া দুরুদ আছে বিরবির করে সব কটা পড়তে থাকি। আমার ধারনা বিমানযোগে প্রতিটি ভ্রমনে আমার জীবনের রাস্তাটা কম করে হোলেও তিন চার মাস করে কমে যাচ্ছে। যদি সে হিসাব করতে বসি তাহলে দেখবো জীবনের অনেক গুলো বছর বাতাসে উড়ে গেছে। কিন্তু আমার এবারের উড়োজাহাজটি একবারও নড়ে চড়ে উঠে আমার জীবন সীমা কমিয়ে দেয়নি। টরোন্ট থেকে ক্যানকুন চার ঘণ্টার বিমান যাত্রা। এতো ছোট যাত্রাতে ড্রিংক ছাড়া আর কোন খাবার দেওয়া হয় না। খেতে চাইলে অখাদ্য খাবার কিনে খেতে হবে । এয়ার লাইনদের এই কৃপণতা গুলো দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে।

যাইহোক বিমান খুব মসৃণভাবে অবতরন করলো । যাত্রীরা সব হাতে তালি দিয়ে বিমান চালককে অভিনন্দন জানাল। বিমান থেকে বার হয়ে নানা রকম নিয়ম কানুন শেষ করে বিমান বন্দরের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। নাহ অপরিচিত জায়গা হোলেও আমাদের কোন রকম সমস্যাতে পড়তে হোল না। ভাষা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হোলেও সেটা মানিয়ে নেয়া গেছে। নানা রেজোটের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের যাত্রীদের জন্য । একটু পরপরই লোক অপেক্ষা করছিলো যাত্রীদের পথ প্রদর্শনের জন্য। আমরা আমাদের জন্য নির্ধারিত গাড়িতে এসে বসলাম। ক্যানকুন থেকে রিভারা মায়া এক ঘণ্টার পথ। রাতের অন্ধকারে গাড়ি ছুটে চলেছে । এক ঘণ্টার বেশী সময় লাগলো আমাদের রিভারা মায়ার, মায়া ক্যারিবান রেজোটে পৌছাতে । হোটেলের নামেই প্রতিটি রেজোটের নামকরন। রাত বারোটা বেজে গেলো আমাদের হোটেলে পৌছাতে । রিসিপসানে লম্বা লাইন পরে গেছে যাত্রীদের। মনে হচ্ছিলো আর যেনো কোন শক্তি নেই দাঁড়িয়ে থাকার। অবশেষে সব কার্যক্রম শেষ হোল। যাত্রীদের সবার হাতে ঘড়ির মতো প্লাসটিকের ব্যান্ড পড়িয়ে দেয়া হোল হোটেলের নাম লিখা। প্রমান থাকলো আমরা এই হোটেলের বাসিন্দা।

আমার স্বামী খুব চিন্তিত হয়ে পরলেন খাবার নিয়ে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। রুম সারভিসের কথা জিজ্ঞেস করাতে ওরা দেখালো হোটেলের ভেতরে দশহাত দুরেই ২৪ ঘণ্টা খোলা রেষ্টুরেন্ট রয়েছে, আমরা সেখানে খেয়ে নিতে পারি ইচ্ছে করলে । মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো ওদের সুব্যবস্থা দেখে। রুমে জিনিষ পত্র রেখে খেতে নামলাম । নানা রকম খাবারে সুসজ্জিত রেষ্টুরেন্টটি। সারাদিন পরে মাঝরাতে মনে হোল ছেহেরী খেতে বসেছি। ক্লান্ত দেহে যা খেলাম সেটাই ভালো লাগলো। খাবার শেষে পাঁচ তাঁরা হোটেলের রুমে ফিরে এলাম। সাজানো গুছানো রুম পরপাটি শুভ্র বিছানা দেখে ঘুম যেনো জাঁকিয়ে বসলো আমার দুচুখে। খুব তাড়াতাড়ি করে বিছানাতে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। কাল সকালে বেড় হবো প্রকৃতির সৌন্দয্য দেখতে।

সকাল ৭টায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। যে ভাবে ঘুম ভাঙ্গবে কল্পনা করেছিলাম সে রকম কিছু হোল না । পাখির কলোতান কিংবা কোকিলের ডাক কিছুই কানে এলো না। টেলিফোনের কর্কশ শব্দ ঘুম ভেঙ্গে দিল। নীচের রিসিপসান থেকে ফোন করেছে ১০টায় যেনো আমরা নীচে নেমে আসি সেখান থেকে আমাদের মিটিং রুমে নিয়ে যাওয়া হবে, রেজোটের কোথায় কি দর্শনীয় আছে এবং বাইরে কোথায় কোথায় ভ্রমনে যাওয়া যেতে পারে সে নিয়ে আমাদের জ্ঞানদান করা হবে। এই কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে দেবার অভিযোগে যদি একটা শাস্তি দেয়া যেতো ওই অপেরেটার লোকটাকে তাহলে মনে হয় কিছুটা শান্তি পেতাম।

কি আর করা যাবে আর ঘুম এলো না। নীচে নামার জন্য তৈরী হয়ে সকাল ৯টায় রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম সকালের নাস্তা সারার জন্য। এই রেজোটের ভেতর বেশ কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। যার জন্য যেটা সুবিধা মনে হয়, সে সেটাতেই ঢুকে যায়। উলে­খ্য এই পুরো ট্রিপটাই একটা প্যাকেজ। সেটাতে টিকেট, হোটেল, খাবার অন্তভুক্ত। যতো খুশী যা খুশী খেতে থাকো কোন সমস্যা নেই। নানা রকম নাস্তা, ফল,ফলের রস তাজা তাজা বানানো হচ্ছে। ডিম যে কায়দাতে খেতে চাচ্ছে সেটাই সামনে দাড়িয়ে করে দেয়া হচ্ছে। মোট কথা সবার পছন্দের দরজা পুরাপুরি খোলা। কোথাও হোঁচট খাবার কোন পথ নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com